ছয়-নয় শতাংশ ভোটের জনপ্রতিনিধিদের কি হবে?


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় : জুন ৪, ২০২৪, ৬:৩৫ অপরাহ্ণ /
ছয়-নয় শতাংশ ভোটের জনপ্রতিনিধিদের কি হবে?

গত সপ্তাহে দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনের পর সব থেকে বেশি আর সবচেয়ে কম ভোট পড়া উপজেলার বিশ্লেষন দিয়েছিলাম। এবারের তৃতীয়দফা ভোট শেষে আমার দুই সহকর্মী কাওসারা চৌধুরী কুমু ও ফরহাদ ইবনে মালিক উদ্যোগি হয়েছিলেন নতুন এক বিশ্লেষনের । তারা হিসেব করে দেখিয়েছেন মাত্র ৬ ভাগ ভোট পেয়েও চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়। এখন প্রশ্ন করতেই হয় অধিকাংশ ভোটারের ভোটদান ছাড়া যে নির্বাচন হলো,আর তাতে নির্বাচিতরা কি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন ?

যে দুজন সহকর্মীর কথা উল্লেখ করেছি তারা সর্বশেষ উপজেলা ভোটের দিন সরজমিনে ভোট দেখেছেন নরসিংদীর শিবপুর ও মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে। । শুধু তারা নন সারাদেশে তৃতীয় ধাপে যেসব উপজেলায় ভোট হয়েছে,সেখানে ভোটের হার গড়ে ৩৮ শতাংশ,এটা মাঠের সাংবাদিকরা বিশ্বাস করেন না। দেশবাসীরও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে যে তেমন কোনো আগ্রহ নেই সেটা বিস্তারিত বলার অপেক্ষা রাখে না। তৃতীয়ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ৮৬ উপজেলার মধ্যে ১৩টিতে ভোট পড়েছে ৩০ শতাংশের কম।  ১৫ শতাংশেরও কম ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান হয়েছেন ২৯ জন।  আর ১০ শতাংশেরও কম ভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যানের সংখ্যা ৭।  তাদের মধ্যে সর্বনিম্ন ৬ দশমিক আট শূন্য শতাংশ ভোট পেয়েছেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের জাতীয় পার্টির প্রার্থী।  যদিও প্রার্থীরা বলছেন, কাজের ক্ষেত্রে ভোটের হার কোনো প্রভাব ফেলবে না।এসব ক্ষেত্রে জয়ী উপজেলা চেয়ারম্যান,ভাইস চেয়ারম্যানরা অবশ্য যুক্তি দিয়েছে জমিতে ফসলের কাজ ফেরে বা তাপপ্রবাহের কারনে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসতে চাননা। মাঠের বিরোধী দল বিএনপিসহ দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল উপজেলা ভোট বর্জণ করেছে। সেই কারন ভোটে জেতা চেয়ারম্যানরা বলেন না , কারন এদের বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা। প্রার্থির সংখ্যা বাড়াতে দলটি আনুষ্ঠানিক কোনো প্রার্থি দেয়নি। ফলে উপজেলা নির্বাচনের ব্যালট পেপারে দেশের পুরোনো বড় দল আওয়ামী লীগের প্রতীক

 “নৌকা ” ছিল না। তবে ছিল সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টির “ লাঙ্গল ” প্রতীক । কিন্তু দেশের অন্য জেলাগুলো দুরে থাক ঘাটি বলে পরিচিত বৃহত্তর রংপুরেই জাতীয় পার্টি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।

তৃতীয় ধাপে ৮৬টি উপজেলা নির্বাচনে মোট ভোটার ২ কোটি ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫৯ জন। এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৭৪ লাখ ৫৬ হাজার ৯০০। নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ তথ্যমতে, যা মোট ভোটের ছত্রিশ দশমিক এক শতাংশ। নির্বাচিত ৮৬ চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে ২৯ জনই ভোট পেয়েছেন ১৫ শতাংশের নিচে।

অন্যদিকে, দশ শতাংশেরও কম ভোট পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছেন সাতজন। তাদের মধ্যে সর্বনিম্ন ৬ দশমিক আট শতাংশ ভোট পেয়েছেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের মোস্তফা মহসিন।  জাতীয় পার্টি থেকে লাঙল প্রতীক নিয়ে তিন লাখ আটানব্বই হাজার ভোটের মধ্যে পেয়েছেন সাতাশ হাজার একশো উনিশ ভোট।যদিও, বিষয়টি বড় করে দেখছেন না কম ভোটে নির্বাচিত হওয়া এসব জনপ্রতিনিধিরা।এর আগে, প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ২৯৭ উপজেলার নির্বাচনেও ভোটের হার ওঠেনি ৩৮ শতাংশের ওপরে।

স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে খোজ নিয়েছিলাম কম ভোট পড়া উপজেলাগুলোতে ।জানা গেলো মিঠাপুকুর উপজেলায় স্থানীয় সংসদ সদস্য সর্মথিত চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মিলে তিন জনের প্যানেল করায় গণসংযোগ ও প্রচারণা তেমন করতে দেখা যায়নি। অন্য প্রার্থীরাও জয়ের বিষয়ে সিরিয়াস ছিলেন না। ফলে বৃহৎ এই উপজেলায় অধিকাংশ ভোটাররাই ভোটের বিষয়ে জানতেন না। আবার জানলেও আগ্রহী ছিলেন না। পাশাপাশি আবহাওয়ার বৈরী আচরণ ও ধান ঘরে তোলার সময় হওয়ায় কৃষিজীবী মানুষ জন ভোট কেন্দ্রে আসেননি। তাই এই উপজেলায় ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে।

রংপুরের পীরগঞ্জে হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলেন দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য, বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মন্ডল। তার সম্পর্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছের মানুষ হিসেবে এলাকায় প্রচার থাকায় প্রথম থেকেই জয়ের ব্যাপারে এগিয়ে ছিলেন তিনি। অর্থ বিত্ত প্রভাব, জনপ্রিয়তায় তার ধারের কাছেও ছিলেন না অন্য প্রার্থীরা। তাছাড়া ভোটের মাঠে গণসংযোগ, পোষ্টার বা মাইকিং, প্রচারণাও তেমন দেখা যায়নি। প্রচারকালীন তীব্র রোদ থাকায় ভাইস চেয়ারম্যান, নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরাও গণসংযোগ করেননি। ফলে এলাকায় ভোটের আমেজ ছিল না বললেই চলে। এক কথায় প্রার্থীদের  প্রচারণায় ঘাটতি ও ভোটের প্রতি মানুষের অনিহা থেকেই ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে

রাজশাহীর বাগমারায় জাকিরুল ইসলাম সান্টু স্থানীয় এমপি আবুল কালাম আজাদের সর্মথনের প্রার্থী। তিনি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আব্দুর রাজ্জাক ওরফে আর্ট বাবু।  তিনি সর্বহারা ক্যাডার হিসেবে পরিচিতি। আলো খন্দকারসহ একাধিক হত্যা মামলার আসামী ছিলেন।তিনিও একজন সাবেক এমপির সর্মথন পেয়েছিলেন ।  সবাই জানতো সান্টু নিশ্চিত জিতবে। একারনে ভোট কম।

পুঠিয়া উপজেলায় তিনজন প্রার্থী ছিলেন। এরমধ্যে বর্তমানে একজন প্রতিমন্ত্রীর সমর্থিত প্রার্থী আব্দুস সামাদ পেয়েছেন ২৬ হাজার ভোট। তার নিকটতম র্প্রাথী জনাব মাসুদ পেয়েছেন ২৩ হাজার ভোট । যিনি সংসদ নির্বাচন করেছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ।

আরেকজন প্রার্থী বিদায়ী চেয়ারম্যান জিএম হিরা বাচ্চু পেয়েছেন প্রায় ১০ হাজার ভোট।

পুঠিয়ার বানেশ্বর ইসলামি কেন্দ্রে দুপুর ৪টায় ভোটার ছিলেন মাত্র ৪ শতাংশ। বিকেল চারটা বাজার আগেই ভোটর সংকটে ভোট বন্ধ হয়। তখন ভোট পড়ে ১৮ শতাংশ। এটাই ছিলো সকল কেন্দ্রের চিত্র। তবে দিনশেষে ভোট কাস্ট দেখানো হয় ৩৪ শতাংশ। স্থানীয় গনমাধ্যম কর্মীরা এই ভোটের হার বিশ্বাসযোগ্য নয় বলেই মত দিয়েছেন।

সর্বশেষ ধাপের উপজেলা নির্বাচনের পর যে প্রশ্নটি সামনে এলা তা হচ্ছে খুব অল্প ভোট পেয়ে যারা জনপ্রতিনিধি হলেন তারা কতটা সম্মান-মর্যাদার সাথে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন? গত সপ্তাহের লেখায় প্রশ্ন তুলেছিলাম আসলে উপজেলা পরিষদের কাছে সাধারন মানুষের প্রত্যাশা কত? উপজেলা পরিষদ কি নাগরিক সেবা দেয়? আর এবার আমার দুই সহকর্মীর বিশ্লেষন থেকে বলা যায় এতো কম ভোট পেয়ের,যদিও তা কোনো আইন বা বিধির লংঘন নয় কিন্তু জনমানুষের কাছে এসব জনপ্রতিনিধিরা কতটা সম্মান পাবেন ?

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com