কালীগঞ্জে নেসকোর ভুতুড়ে বিলে দিশেহারা গ্রাহক


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় : মার্চ ১২, ২০২৩, ৩:৩০ অপরাহ্ণ /
কালীগঞ্জে নেসকোর ভুতুড়ে বিলে দিশেহারা গ্রাহক

লালমনিরহাট প্রতিনিধি-
উত্তরবঙ্গে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি নেসকোর ভুতুড়ে বিলে দিশেহারা লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার গ্রাহকরা। তাদের অভিযোগ, মিটার না দেখে প্রতি মাসে খেয়ালখুশিমতো ইউনিট বসিয়ে দেন রিডাররা। বারবার অভিযোগ করার পরও কোনো ফল না পাওয়ায় চরম ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা।

কালীগঞ্জ উপজেলার মদাতী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রুহুল আমিন পেশায় একজন বিড়ি শ্রমিক। আকিজ কোম্পানীতে বিড়ি তৈরীর কাজ করে চলে তার জীবন। একদিন কাজ না করলে স্ত্রী, সন্তানের মুখে দুবেলা, দুমুঠো খাবার জুটে না তার। সন্তানের লেখাপড়ার জন্য বাড়িতে ২০১৫ সালে নিয়েছেন কালীগঞ্জ নেসকো লি: এর বিদ্যুৎ সংযোগ। বিড়ি তৈরীর কাজ করলেও নুরুল আমিন খেয়ে না খেয়ে প্রতিমাসে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে আসছেন। রুহুল তার বাড়িতে মাত্র তিনটি বাল্ব ব্যবহার করে আসছিল এতেই তার প্রতিমাসে নেসকোর বিদ্যুৎ বিল আসতো ১০০/২০০/৩০০ ইউনিট করে। তবুও রুহুল আমিন কোনদিন অভিযোগ না করে নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে আসছিল। হঠাৎ ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে তার ব্যবহৃত বিদ্যুৎ ৪৮০০ ইউনিট ব্যবহার দেখিয়ে এটি ভুতুড়ে বিল দেন নেসকো কালীগঞ্জ। অথচ তার অক্টোবর /২০২২ এ নিয়মিত মিটার রিডিং ছিল ১১৯২০ ইউনিট। যা পরবর্তী নভেম্বর মাসে মিটার রিডিং ১৬৭২০ ও ব্যবহৃত ইউনিট ৪৮০০ দেখিয়ে গরীব বিড়ি শ্রমিক রুহুল আমিনকে বিল দেয়া হয় ৫৭ হাজার ৬শত ৫৫ টাকা। আবার পরবর্তী ডিসেম্বর মাসে মিটার রিডিং সর্বশেষ ১২০২০ ইউনিট দেখিয়ে ব্যবহৃত ৫০ ইউনিটের বিল গ্রাহক রুহুল কে প্রদান করেন নেসকো লি:। হতদরিদ্র গরিব শ্রমিক রুহুল আমিন এ বিষয়ে নেসকোর বিদ্যুৎ অফিস এসে এর প্রতিকার চাইলে সেই ভুতুরে বিল ৩ হাজার ৫শত টাকা উৎকোচ নিয়ে অফিসের নূরুল নামের একজন বিলটি কমিয়ে ৩৪ হাজার টাকায় নামিয়ে দিয়ে পরিশোধ করতে বলেন।

গ্রাহক রুহুম আমিনের ভুতুরে বিল কপি।

এ বিষয়ে নিয়মিত মিটার রিডার সামসুল বলেন, আমি একমাস পরপর মিটার রিডিং খাতায় লিে থাকি। আমার খাতা ঠিকঠাক রয়েছে। নভেম্বরে মিটার হঠাৎ দৈনিক ১০০ ইউনিট ব্যবহার হওয়া শুরু করলে এমন ঘটনা ঘটে।

গ্রাহক রুহুল আমিন আরোও বলেন, ‘ভুতুড়ে বিল নিয়ে বারবার অফিসের বিভিন্ন অফিসারের কাছে গিয়ে আমি কোনো সমাধান পাইনি।’

শুধু তিনি নন, তার মতো অনেকে নেসকোর মনগড়া বিলের খপ্পরে পড়ে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে বারবার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় চরম ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা।

এ বিষয়ে অফিসের কর্মচারী নূরুল বলেন, মিটার টা হঠাৎ ইউনিট বেশি ওঠায় আমি মিটারটি খুলে আনি এবং গ্রাহককে মিটার পরির্বতনের কথা বলি।

প্রতিবেদক বিষয়টি নিয়ে সহ নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে গেলে তিনি শুনে এ বিষয়ে সাব এসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারের সাথে কথা বলতে বলেন। এ সময় তাকে অফিসে পাওয়া না গেলে সাব- এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের আনোয়ারের সাথে মুঠোফোনে কথা বলে জানা যায়, অফিসকে না জানিয়েই কর্মচারী নূরুল গ্রাহকের মিটার টি খুলে নিয়ে আসেন। পরে মিটার চেক করে দেখা যায় রিডিং পাওনা ছিল তাই এ বিল প্রদান করা হয়েছে।
৫৭৬৫৫ টাকার এ বিলটি কমিয়ে ৩৪০০০ টাকা কেন কিভাবে করা হয়েছে, গ্রাহকের লোড ক্ষমতা কত তা পরীক্ষা করা হয়েছে কিনা, গ্রাহককে না জানিয়ে মিটার খুলে আনতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। তিনি বলেন গ্রাহককে বিলটি প্রদান করতে হবে।

অপরদিকে স্থানীয় গ্রাহকদের দাবি নেসকোর সেবা পেতে সবর্ক্ষেত্রে হয়রানী ও অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হয়। কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। ভুতুরে বিলের বিষয়ে ভুক্তভোগীরা বলেন নেসকোর ভোগান্তি, ভুতুরে বিল ও গ্রাহক হয়রানি হতে রক্ষা পেতে এবং অসৎ কর্মকতাদের অপসারন দাবিতে আগামী মঙ্গলবার সকালে একটি মানববন্ধন কর্মসুচি ঘোষনা করেন।

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com