বিশ্বরাজনীতির ‘টাগ অব ওয়ারে’ বাংলাদেশের নির্বাচন


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় : জুন ১০, ২০২৩, ৩:০৫ পূর্বাহ্ণ /
বিশ্বরাজনীতির ‘টাগ অব ওয়ারে’ বাংলাদেশের নির্বাচন
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছয় মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচন কেমন হবে, এই নির্বাচনের প্রভাব কিভাবে হবে তা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেমন উত্তপ্ত অবস্থা তেমনি তা এখন বিশ্ব রাজনীতির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভক্ত বিশ্বে বাংলাদেশের নির্বাচন ‘টাগ অব ওয়ার’ এর বিষয়ে পরিণত হয়েছে এখন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্ব এখন বিভক্ত হয়েছে। স্নায়ু যুদ্ধের অবসানের পর মার্কিন একাধিপত্যবাদের বিপরীতে এই প্রথম বিশ্বে একটি বৈশ্বিক মেরুকরণ সৃষ্টি হয়েছে। যে মেরুকরণে একপক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলো। অন্যপক্ষে রাশিয়া, চীন। আর এই দুই বিভক্ত বিশ্বের মধ্যে মাঝামাঝি অবস্থানে থেকে প্রভাব বিস্তার করছে ভারত, তুরস্কসহ আরও কয়টি দেশ। আর বিশ্বরাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তারের নিবিড় চেষ্টা চলছে এই দুই প্রতিপক্ষের মধ্যে।
সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপর্যয় ঘটেছে মধ্যপ্রাচ্যে। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন পতাকা অস্তমিত হয়ে গেছে। এখন সেখানে চীনা আধিপত্যবাদ। ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছে সৌদি আরব। সিরিয়া আরব লীগের সম্মেলনে যোগদান করেছে। আর পুরো মধ্যপ্রাচ্যে এখন চীনের আধিপত্য আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি হচ্ছে। এরকম একটি বাস্তবতায় বাংলাদেশে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য মরিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর অন্যদিকে রাশিয়া বাংলাদেশকে কখনোই মার্কিন অনুগত হতে দিতে চায় না। গতকাল রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের ব্যাপারে সুস্পষ্ট একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে। বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্টিটস্কি বাংলাদেশে আভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোন রাষ্ট্র যেন হস্তক্ষেপ না করেন সেই সতর্ক বার্তাও দিয়েছেন।

বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রথম আগ্রাসী ভূমিকায় নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই অঞ্চলে কৌশলগত স্বার্থ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সাম্প্রতিক সময় উপমহাদেশে মার্কিন আধিপত্য অনেকটাই খর্ব হয়ে গেছে। পাকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা এবং চীনের সাথে ঘনিষ্ঠতা সেখানে মার্কিন প্রভূত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
ভারত পুরোপুরিভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুসরণ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে কোন পক্ষ নয়। বরং ভারত এখন রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি বাড়িয়েছে। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে না বললেও পছন্দ করছে না। কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক এই রাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি বিরোধে জোড়াতে পারছে না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর এ কারণেই বাংলাদেশে কৌশলগত অবস্থান দৃঢ় করতে চায়।

বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন, বঙ্গোপসাগরের ওপর চীনের যেন আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত না হয় সে জন্য মরিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাই নির্বাচনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে বিশ্বের প্রভাবশালী এই দেশটি। তারা আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হলে বাংলাদেশে নানা রকম নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করার প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে। আর এই হুমকির ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে কি হবে না, সে নির্বাচন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে। কিন্তু এরকম পরিস্থিতিতে ভারত, রাশিয়া এবং চীন বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছে। তিনটি দেশই আলাদা আলাদা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যে, বাংলাদেশের নির্বাচনে দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়। এই বিষয়ে বাইরের কোনো হস্তক্ষেপ কাম্য নয় এবং বিদেশী কোন রাষ্ট্রের প্রভাব বাংলাদেশে নির্বাচনের ওপর পড়বে না এমন মন্তব্য করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ফলে স্পষ্টতই বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বিশ্ব।

অন্যদিকে বাংলাদেশ তার কূটনৈতিক কৌশলে মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করেছে। সবকিছু মিলিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একলা করার কৌশল বাংলাদেশের কূটনীতিতে দৃশ্যমান। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় বটে কিন্তু তাই বলে এখনই বাংলাদেশকে কোনরকম চাপে রাখার নীতি গ্রহণের পরিপন্থী তারা। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের একলা আগ্রাসী মনোভাব কতটুকু কার্যকর হবে সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক তৎপরতায় জনগণের মধ্যে একটা মার্কিন বিরোধী মনোভাব আবার তৈরি হচ্ছে।
বাংলাদেশ আর সেই বাহাত্তর-পচাঁত্তরের বাংলাদেশ নয়। বাংলাদেশ এখন অনেক বদলে গেছে। এদেশের এলিট শ্রেণির একটা অংশের মধ্যে মার্কিন প্রীতি আছে বটে, তাদের সন্তান-সন্ততিদের লেখাপড়া করানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের যাওয়াটাকে তাদের স্বপ্ন পূরণ মনে করে, এটাও সত্যি। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খবরদারি সাধারণ জনগণ খুব একটা মেনে নিচ্ছে না। তাই বৈশ্বিক রাজনৈতিক মেরুকরণের ঢেউ বাংলাদেশের জনগণের ওপরও এসে পড়ছে। আর তার প্রভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে মার্কিনবিরোধী একটি শক্তিশালী জনমত তৈরী হচ্ছে
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com