সাড়ে বিয়াল্লিশ বছর আগের কথা। তেরই জুন রোববার। বিটিভিতে হুমায়ুন ফরিদী অভিনীত সাপ্তাহিক নাটক চলছে। আতিকুল হক চৌধুরী প্রযোজিত নাটকটির নাম মুনমুন। নাটকের পর সরাসরি সম্প্রচার হবে স্পেন ’৮২ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ। কয়েকদিন আগে থেকে প্রচারনা চালানো হলেও বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে তেমন আগ্রহ ছিল না। টিভিতে প্রতি রোববার স্পোর্টস প্রোগ্রামে এফএ কাপের খেলা দেখানো হয়। আর্জেন্টিনা ও বেলজিয়ামের উদ্বোধনী ম্যাচটি সেরকমই হবে। আর্জেন্টিনার দু’একজন খেলোয়াড়ের নাম জানলেও বেলজিয়ামের কাউকেই চিনি না। গতবার ১৯৭৮ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এর দু’বছর পর ১৯৮০ সালে আর্জেন্টিনা বিশ্ব যুব ফুটবলেও চ্যাম্পিয়ন হয়। সে প্রতিযোগীতায় ডিয়েগো ম্যারাডোনা নামের ১৯ বছরের এক ফুটবলারের আত্মপ্রকাশ ঘটে। তার যাদুকরী ফুটবল দেখে সবাই তাকে হোয়াইট পেলে বলে ডাকতে শুরু করে। এবার ২১ বছর বয়সী ম্যারাডোনা প্রথম বারের মত বিশ্বকাপ ফুটবল খেলবে। প্রশ্ন ওঠেছিল কে ১০ নম্বর জার্সিটা পাবে। গতবার ১০ নম্বর জার্সি নিয়ে আর্জেন্টিনার মারিও কেম্পেস সর্বোচ্চ গোলদাতা ও শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন। ফাইনালে হল্যান্ডের বিরুদ্ধে তার করা দুটি গোলই শিরোপা এনে দিয়েছিল।
বাইরে থেমে থেমে বৃস্টি হচ্ছে। আমাদের অপেক্ষা শেষ হলো। নাটকের পর তালিবাবাদ ভূউপগ্রহ কেন্দ্রের মাধ্যমে দর্শকদের নিয়ে যাওয়া হলো বার্সিলোনার নও ক্যাম্প স্টেডিয়ামে। মনোজ্ঞ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর এসপানা ৮২’র উদ্বোধন ঘোষনা করলেন স্পেনের রাজা হুয়ান কার্লোস। এরপর আবারো বিজ্ঞাপন। দীর্ঘ বিরক্তিকর বিজ্ঞাপন পর্ব শেষে দর্শকদের যখন মাঠে ফিরিয়ে আনা হলো ততক্ষনে উদ্বোধনী ম্যাচটির কিক-অফ হয়ে গেছে। আর্জেন্টিনার কোচ সিজার লুইস মেনোটি গতবারের দলটিই রেখে দিয়েছেন। পরিবর্তন মূলত একটাই। ম্যারাডোনাকে ঢোকানো হয়েছে। দেওয়া হয়েছে ১০ নম্বর জার্সি। কেম্পেস খেলছেন ১১ নম্বর নিয়ে। এ প্রসঙ্গে মেনোটির বক্তব্য জার্সি কখনো খেলে না। খেলে খেলোয়াড়। জার্সি নম্বরে কিছু যায় আসে না।
বেলজিয়াম দল শুরুতেই ম্যারাডোনাকে টার্গেট করে খেলতে থাকে। যখনই ম্যারাডোনার পায়ে বল যাচ্ছিল তখনই তাকে ফেলে দেওয়া হচ্ছিল। পুরো ম্যাচে ম্যারাডোনাকে অসংখ্যবার ফাউল করা হয়েছে। ম্যারাডোনা শুধু ভালো খেলোয়াড়ই ছিলেন না। পড়ে গেলে আঘাত পাওয়ার চমৎকার অভিনয়ও করতে পারতেন। খেলার ৬৩ মিনিটে বেলজিয়ামের আরউইন ভেন্ডেনবার্গ গোল করে দলকে এগিয়ে নেন। বাকী সময় উপর্যুপরি আক্রমন করেও আর্জেন্টিনা গোলটি শোধ করতে পারেনি। বিরাশির বিশ্বকাপ অঘটন দিয়ে শুরু হয়। যেহেতু খেলাটি রাতে শেষ হয়েছিল তাই পরদিন বাংলাদেশের পত্রিকাগুলি সেই খেলার বিস্তারিত রিপোর্ট ছাপতে পারেনি। দৈনিক বাংলা আর্জেন্টেনার বিপক্ষে ভেন্ডেনবার্গের করা গোলটির ঝাপসা ছবি ছাপিয়ে ছিল। ক্যাপশনের পাশে লিখেছিল টেলিভিশন থেকে তোলা ছবি। আর্জেন্টিনা-বেলজিয়াম ম্যাচের খবরটি কিন্তু সেদিন লিড নিউজ ছিলনা। সৌদী আরবের বাদশাহ্ খালেদের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার খবরটি ছিল সেদিনের প্রধান খবর।
বাংলাদেশ টেলিভিশন বিরাশি বিশ্বকাপের ছয়টি ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করেছিল। অন্য খেলাগুলির রেকডকৃত হাইলাইটস দেখিয়েছিল। বিরাশির বিশ্বকাপ আমাদের চোখ খুলে দিয়েছিল। দেখিয়ে ছিল সারা বিশ্বের ফুটবল কোথায়, আর আমরা কোথায়। তারপরও আশা ছিল দূর ভবিষ্যতে হয়তো বাংলাদেশ বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করবে। কিন্তু এর চার দশক পরও বাংলাদেশের ফুটবলের এমন দূরাবস্থা আমরা কল্পনাও করিনি। (চলবে)
প্রকাশক ও সম্পাদক :- নূর আলমগীর অনু
বার্তা ও হেড অফিস :- শহীদ ক্যাপ্টেন তমিজ উদ্দিন স্বরনি, মুক্তি চত্বর। তুষভান্ডার, কালীগঞ্জ, লালমনিরহাট। বানিজ্যিক কার্যালয়:- মুজাহিদনগর,কদমতলি,ঢাকা-১৩৬২ হতে প্রকাশিত ও প্রচারিত। মোবাইল ০১৭২২১৬৯৪৯০
ই-মেইল:- news.dailymukti@gmail.com