স্বপ্ন দেখাচ্ছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় : অক্টোবর ২০, ২০২২, ৪:৩১ অপরাহ্ণ /
স্বপ্ন দেখাচ্ছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা বিধৌত নীলফামারী,লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধা  বাংলাদেশের কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করলেও দেশের অন্যান্য অঞ্চল যখন যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ঠিক তখনও পিছিয়ে আছে এই অঞ্চল গুলো। তারা দেশের জিডিপিতে কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনে দিনের পর দিন স্বাধীনতা-উত্তর সময় থেকে অবদান রাখছে কিন্তু এসব জেলা নিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনার তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। তিস্তা নদীর উৎপত্তি ভারতের সিকিমে হলেও প্রায় ১১৫ কিলোমিটার(তথ্য সুত্রঃউইকিপিডিয়া) জলসীমা বিস্তৃত বাংলাদেশের প্রদত্ত জেলা সমূহে। নদী অবশ্যই যেকোনো দেশ, জাতি, অঞ্চলের জন্য আশীর্বাদ যদি সেটার সঠিক ব্যবস্থাপনা করা যায় কিন্তু তিস্তা অব্যবস্থাপনার জন্য উত্তরাঞ্চলের দুঃখে পরিণত হয়েছে।  তারা বার বার মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও নদীর অকাল বন্যা,ড্রেজিং করা হয় না, নদী ভাঙনসহ নানাবিধ কারণে এসব অঞ্চলের জনগোষ্ঠী অন্যান্য অঞ্চলের থেকে পিছিয়ে পড়েছে। তার উপর মরার উপর ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে তিস্তার উজানে নির্মিত ভারতের অংশে গঁজলডোবা বাঁধ যাতে করে ভারত তিস্তার পানি গতিরোধ করে নিজের মতো কবে ব্যবহার করে এবং যখন অতিরিক্ত পানি, পাহাড়ি ঢল,বৃষ্টি সহ অন্যান্য কারণে তারা চাপ সামলাতে পারে না তখন এর  চাপ আশে বাংলাদেশ অংশে, দেখা দেয় অকাল বন্যা।  বর্তমানে তিস্তার নিয়মিত ড্রেজিং এর অভাবে বিস্তৃত কোথাও ১০ থেকে ১১ কিলোমিটার, কোথাও ৭-৮ কিলোমিটার পর্যন্ত  এবং নদীর গভীরতা নাই বললেই চলে যার কারণে পানি চাপ সামলাতে না পেরে লোকালয়ে প্রবেশ করে জনজীবন দূর্বিষহ করে তোলে।দীর্ঘদিন এ ধরনের সংকটের কারণে পিছিয়ে পড়েছে তিস্তা বিধৌত অঞ্চল  তবে এবার এঁরাও চায় ঘুড়ে দাঁড়াতে।
চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফরের সময় ২৩ প্রকল্পের চুক্তি সইয়ের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনাও ছিলো। চায়না পাওয়ার কোম্পানি নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করেছে এবং তাঁরা তিস্তা প্রকল্পের জন্য কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যাতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮০০০ কোটি টাকা। প্রকল্পের মধ্যে নদীর দুই তীরে ১৭৩ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা  এবং এতে ৩০০ বর্গকিলোমিটার জমি উদ্ধার করা হবে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা, পানি প্রাপ্যতা বৃদ্ধি, জমি উদ্ধার, সেচ প্রকল্পের আওতায় আসবে বৃহৎ একটা অংশ, নৌ চলাচল বৃদ্ধি করা সহ পর্যটনশিল্পের আওতায় আনা,  ড্রেজিং করার মাধ্যমে নদীর বিস্তৃতি ৭০০-৮০০ মিটার করা হবে এবং  গভীরতা ১০ মিটার  করা হবে  ফলে রক্ষা পাবে নদীর দুই তীরের ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি।  এছাড়াও নদী তীরে মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ করা হবে,২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে,ডালিয়া থেকে চিলমারী পর্যন্ত ৩টা নৌ বন্দর নির্মাণ করা হবে এছাড়া  কৃষি, শিল্প,আবাসিকসহ স্যাটেলাইট শহর নির্মাণ করা হবে এবং কর্মসংস্থান করা হবে ৭-৮ লক্ষাধিক মানুষের।  মোট কথা পূর্বচীনের  জিয়াংসু প্রদেশের সুকিয়ান সিটির আদলে তৈরি করা হবে তিস্তা পাড়ের দুই তীর। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে,লোকজনের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে ও স্বাবলম্বী হবে,রাজধানী বিমুখ হবে তাতে চাপ কমবে শহরে।
সরকারের উচিত একটা পিছিয়ে পড়া অঞ্চলকে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার প্রত্যয়ে তিস্তা পাড়ের মানুষের দুর্দশা বিবেচনা করে দ্রুতই এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা। সম্পতি চীনা প্রতিনিধিরা তিস্তা সেচ প্রকল্প সহ আশেপাশের এলাকা পরিদর্শন করেন এবং সাধারণ মানুষের সাথে মতবিনিময় করেন। তারা এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যথেষ্ট আগ্রহী এবং সর্বশেষ প্রতিবেদন ফাইল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুমতিক্রমে দ্রুতই এ মহাপরিকল্পনা দৃশ্যমান হোক সেটাই দাবি জানাই বর্তমান প্রজন্মের একজন তরুণ হিসেবে।
লেখক- মোঃ রবিউল ইসলাম
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com