মাদক কমলে, কমবে অপরাধ।


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় : এপ্রিল ১৬, ২০২২, ১:২১ অপরাহ্ণ /
মাদক কমলে, কমবে অপরাধ।
একটি দেশকে ধ্বংস করতে চাইলে কোন শক্তিশালি পারমানবিক বোমা কোন প্রয়োজন নেই। কেননা একটি দেশ ধ্বংস করতে হলে সে দেশের যুবসমাজকে ধ্বংস করে দাও। সে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দাও। আর এ দুটি কাজ করতে কোন পারমাণবিক বোমার প্রয়োজন হবে না। এর জন্য মাদক এই যথেষ্ট। একটি দেশের যুবসমাজকে মাদকাসক্ত করা গেলে যুব শক্তিকে যেমন দমন করা সম্ভব তেমনি ওই দেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমনিতেই দিনে দিনে ধ্বংস হয়ে যেতে থাকবে। সে দেশের ব্যবস্থায় বাড়তে থাকবে নানা সামাজিক অপরাধ মূলক কর্মকান্ড। আর এ সকল কাজ সম্পন্ন করার জন্য কোন পারমাণবিক অস্ত্র বা কোন পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা প্রয়োজন নেই সামান্য মাদকেই সমাজ দেশ ও জাতিকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
বিশ্বায়নের এ যুগে যে কয়টি উপসর্গ ঘৃণিত ও কলঙ্কিত হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম , অপরাধের জনক হচ্ছে মাদক। মাদকের কারণে সমাজে চুরি, ডাকাতি, ,যৌন হয়রানি ,বিবাহ বিচ্ছেদ, ছিনতাই, ধর্ষনের অপরাধগুলো সংগঠিত হবার অন্যতম কারণ হচ্ছে মাদক। এমন বহু নজির রয়েছে, যা প্রতিদিন পড়লেই বোঝা যায়।
আমাদের এই বাংলাদেশে মাদকের করাল গ্রাস হতে যদি আমরা বের হয়ে আসতে না পারি তাহলে অচিরেই প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতাকে রক্ষা করা বেশ কঠিন হয়ে পড়বে। যে যে স্বাধীনতা অর্জন করতে ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম হারাতে হয়েছে। যে দেশের স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাস রক্তের ইতিহাস ইতিহাস বিশ্বের ইতিহাসে বিরল।
তাই আজ আমরা যদি মাদক নির্মূল করতে না পারি তাহলে সামাজিক অপরাধ নির্মূল করা কঠিন হয়ে যাবে। কেননা সকল অপরাধের পিছনে রয়েছে মাদকের করাল থাবা।
আমাদের সমাজে মাদক নামের এই করাল থাবা থেকে মাধ্যমিক স্কুল পড়ুয়া ছাত্র, যুবসমাজ, ব্যবসায়ী, শ্রমিক, রিকশাচালক, জনপ্রতিনিধি, এবং সমাজের নানা পেশায় কর্মরত রয়েছে। এদের তাল মিলিয়ে বাদ যাচ্ছে না শিক্ষার্থী থেকে নারীরাও। এক সমীক্ষায় জানা যায় দেশের শতকরা ৮০ ভাগ মাদকাসক্তের বয়স ১৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এই সমীক্ষা থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে আমাদের দেশের মূল চালিকাশক্তি তরুণদের একটি অনেক বড় অংশ মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। যা দেশের উন্নয়ন প্রগতি ও সমৃদ্ধির অন্তরায়। মাদকাসক্তির কারণে একজন মানুষের জ্ঞানার্জনের স্পৃহা ও স্মৃতিশক্তি কমে যায়। মাদকাসক্ত হওয়ার কারণে বা মাদক গ্রহণের ফলে মানুষের শারীরিক মানসিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটে থাকে। মাদক সেবনের ফলে ধীরে ধীরে একজন মানুষের মাদকের প্রতি আসক্তি বেড়ে যায়। এবং ধীরে ধীরে সেই ব্যক্তি গুলোর মাদক গ্রহণের পরিমাণ বাড়তে থাকে।
বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্যের মধ্যে রয়েছে-তাড়ি, গাঁজা, হিরোইন, কোকেন, ইয়াবা, আফিম, মারিজুয়ানা, ফেনসিডিল, চরস, ভাং, মরফিন, মদ, বিয়ার, কেটামিন ইত্যাদি। মাদকের সঙ্গে অপরাধ ও অপরাধীর একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। সাধারণত মাদকসেবীরা মাদক সংগ্রহের জন্য অর্থের ওপর নির্ভর করে। আর এই অর্থ জোগাড় করতেই ছিনতাই এমনকি খুন করতেও দ্বিধাবোধ করে না তারা। কিছু গবেষণায় দেখে গেছে, মাদকদ্রব্যের ব্যবহারের ফলে মানুষের মধ্যে অপরাধ করার সাহস বেড়ে যায়। বায়োলজিক্যাল তাত্ত্বিক ও গবেষকরা এটিকে ‘মাদকের প্রতিক্রিয়া’ বা ‘ফার্মোকোলোজিকাল ইফেক্ট’ বলে অভিহিত করেছেন। এর ফলে একজন ব্যক্তি যখন মাদক ব্যবহার করেন তখন মাদকের প্রতিক্রিয়ায় তার ভেতর সাহস বেড়ে যায় এবং সে তখন অপরাধ করতে ভয় পায় না। আর এ কারণে আমরা প্রায়ই দেশের পত্রপত্রিকাগুলো পাতা খুললেই দেখতে পাই,
নেশার টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে হত্যা, মাদকাসক্ত ছেলে কর্তৃক মাকে জবাই , নেশাখোর বাবা মাদক সংগ্রহে ব্যর্থ হওয়ার ক্রোধে নিজ সন্তানকে খুন, কিংবা মাদকের টাকা সংগ্রহ পুত্রকে বিক্রি করল বাবা, মাদকের টাকা না পেয়ে স্ত্রীর মাথা ন্যাড়া করে দিলো স্বামী, মাদকাসক্ত স্বামীর ঘর ছাড়লো স্ত্রী, মাদকাসক্ত ছেলের হাতে লাঞ্ছিত পিতা মাতা , এমন সব অমানবিক ঘটনার চিত্র।
গত বছর খোদ রাজধানীতেই মাদকসেবী মেয়ের হাতে পুলিশ অফিসার বাবা ও মা খুনের ঘটনা নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় হয়। অপরাধ ও সমাজবিজ্ঞানী এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন- ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিলসহ সব ধরনের মাদকদ্রব্যের কারণে অপরাধ বাড়ছে। তাই অপরাধ হ্রাস করতে হলে অবশ্যই মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মাদক ব্যবসায়ীদের শক্ত হাতে দমন করতে হবে। অন্যথায় দিন দিন অপরাধ বাড়তে থাকবে। একজন মানুষ মাদকাসক্ত হওয়ার কারণে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে যায়, অবরুদ্ধ হয়ে যায় বিবেক, যার ফলে মাদকাসক্ত ব্যক্তির দ্বারা যে কোনো ধরনের অপরাধ মুহূর্তের মধ্যেই সংঘটিত হয়ে যায় কোনো অনুশোচনা ছাড়াই। স্কুল-কলেজগামী মেয়েদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করা, গুলি বা ছুরিকাঘাতে হত্যা করা কিংবা সড়ক দুর্ঘটনার আধিক্যের পেছনেও মাদকাসক্তির ভূমিকা অন্যতম। দেশে এখন মাদকসেবীর সংখ্যা ৭০ লাখেরও অধিক।
রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল কোথাও বাদ যাচ্ছে না এ রমরমা ব্যবসা। পাশাপাশি হেরোইন ও ফেনসিডিলসহ অন্যান্য মাদকও পাওয়া যায় হাতের নাগালে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশ বর্ডারগার্ড,র্ যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের বিপুল পরিমাণ মালামাল উদ্ধার মামলা দায়ের করলেও মাদক দমন করা সম্ভব হচ্ছে না। কেননা এসব মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন কে আরো কঠোর থেকে কঠোরতর করতে হবে। কোন মাদক ব্যবসায়ী যেন আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হতে না পারে না তাদের বিচার কার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত । অথচ প্রতিনিয়ত দেখা যাচ্ছে যে মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করে আদালতে প্রেরন করা হলে, আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে আদালত থেকে সহজে জামিন নিয়ে বেড়িয়ে আসছে এ সকল মাদক ব্যবসায়ী। পুনরায় অব্যাহত রাখছে তাদের মাদকব্যবসা। এসকল মাদক ব্যবসায়ীদের কালো টাকার কারণে ব্রাকেট বন্দি হয়ে পড়ে দেশের সকল কিছু।
মাদক ব্যবসায়ীরা জামদানি মাদক সরবরাহ ও বেচাকেনা পরিবহনের ক্ষেত্রে নারী ও শিশুদের বেছে নিচ্ছে। সস্তা শ্রম আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ এড়ানোর সহজ উপায় হিসেবে শিশুদের ‘কুরিয়ার’ হিসেবে ব্যবহার করছে তারা। এদের মধ্যে ছিন্নমূল পথশিশুদের সংখ্যাই বেশি। পেটের জালা বা দুবেলা দুমুঠো অন্ন জোগাতে অনেকসময় এসব অসাধুচক্রের খপ্পরে পড়ে যায় তারা। মাদক বহন করতে গিয়ে একসময় নিজেরাই মাদকাসক্ত হয়ে যায়। আবার অনেকে মাদকাসক্তি থেকে বেড়িয়ে নিজেরাই শুরু করে দিচ্ছে ব্যবসা। রাজধানীসহ সারা দেশে এখন অনেক শিশু ফেনসিডিল, অ্যালকোহল, গাঁজা, হেরোইন, প্যাথেডিনের মতো মাদকদ্রব্যের ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতেও মাদকপাচারে ব্যবহার করা হচ্ছে তাদের। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো ২০০২-০৩ সালে এক গবেষণায় বলেছে, পথশিশুদের ৪৪ শতাংশ মাদকাসক্ত। আইসিডিডিআরবি সর্বশেষ ২০১১ সালের এক গবেষণায় ৫১ শতাংশ পথশিশুর মাদকাসক্তের কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্যানুযায়ী, পথশিশুদের ৮৫ ভাগই কোনো না কোনোভাবে মাদক সেবন করে।
দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলো হতে রাজধানীসহ সারাদেশে ছড়িয়ে যাচ্ছে মাদক। ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কৌশলে মাদক পরিবহন করে পৌঁছে দিচ্ছেন রাজধানীসহ সারাদেশে। এর ফলে কালো টাকার মালিক বনে যাচ্ছেন সহজেই এসকল মাদক ব্যবসায়ীরা। ব্যবহার করছেন নামি দামি গাড়ি, বাড়ি সহ কালোটাকার প্রভাবে জড়িয়ে পড়ছেন অন্যান্য ব্যবসায়। ব্যবসায়ীদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন কিছু রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বার রা পয়ন্ত।
বিভিন্ন পরিসংখ্যান ও তথ্য অনুসারে জানা গেছে যে মাদকবিরোধী অভিযানে যে যারা গ্রেফতার হচ্ছেন না মাদকসহ আটক হচ্ছেন এদের অধিকাংশ ব্যক্তি হচ্ছেন মাদক পরিবহনকারী ও সেবনকারী। কিন্তু এই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রাঘববোয়ালরা আড়ালেই থেকে যাচ্ছেন। পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন প্রশাসনের মাদকবিরোধী অভিযানে মাদক সংশ্লিষ্ট চুনোপুটিরাই নিয়মিত আটক হচ্ছে। আবার এসকল চুনোপুটি মাদক ব্যবসায়ীরা আদালত থেকে জামিন পেয়ে পুনরায় পূর্বের ব্যবসায় ফিরে যাচ্ছেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কখনোই এদের রিমান্ডের আবেদন করেন রাঘব বোয়ালদের ধরার চেষ্টা করছেন আমরা খুব কম সময়ই দেখা যায়।
মাদক ব্যবসায়ী, পরিবহনকারী ও সেবনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনের প্রয়োগেই পারে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার রোধে সহায়ক হতে। যা জাতির জন্য এক ভয়াবহ অশনি সংকেত। বাংলাদেশের মাদক পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে মাদকাসক্তদের মধ্যে ১৬ ভাগই নারী। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, তাদের মধ্যে অধিকাংশই বিভিন্ন নামিদামি স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। নারী আসক্তদের ৯০ ভাগের বয়স ১৫-৩৫ বছরের মধ্যে। বাদ-বাকি ৩৫-৪৫ বছরের মধ্যে। মাদকাসক্তদের মধ্যে শতকরা পাঁচজন নারী। তাদের মধ্যে ছাত্রী, গৃহিণী, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী রয়েছেন। পারিবারিক অশান্তি, অভিভাবকদের সন্তানদের প্রতি উদাসীনতা, সন্তানদের প্রয়োজনের অধিক অর্থের জোগান দেওয়া, আধুনিকতার নামে অশ্লীলতা, কৌতূহল, অসৎ সঙ্গ, অপসংস্কৃতি, মানসিক হতাশা, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারা, সহপাঠীর প্ররোচনায় এবং প্রেম বিচ্ছেদের কারণে মাদকাসক্ত হচ্ছেন তারা।
মাদকের অভাব বিস্তার প্রতিরোধ না করার কারণে আমাদের দেশের অধিকাংশ পরিবার গুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নেশার টাকা যোগাড় করতে না পেরে সংসারে অভাব অশান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তির অসংলগ্নতা প্রকাশ পায় মনোযোগের ক্ষমতা হ্রাস পায় ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়, স্বাস্থ্যের অবনতি দেখা যায়, খাদ্য গ্রহণে অনীহা দেখা দেয়, ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কমে যায়, যৌন অনুভূতি কমে যায়, মস্তিষ্কে কোষের ক্ষয়ক্ষতি হয়। মাদকের নেশা এমনই এক নেশা যা একটি সুন্দর জীবনকে নষ্ট করে।
তরুণরাই দেশ, জাতি ও সমাজের উজ্জ্বল নক্ষত্র, জাতির আগামীদিনের কর্ণধার। কিন্তু তারাই যদি মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে তাহলে দেশ কি করে সমৃদ্ধির দিকে এগোবে! মনে রাখতে হবে, মাদকাসক্ত হয়ে পড়া ছেলে মেয়েরা আর কেউ নয়, আমাদের ভাই বোন, আত্মীয়স্বজন এবং সমাজেরই অংশ। মাদকাসক্তি যেহেতু কোনো অপরাধ নয়, একটি রোগ। সেহেতু তারা অপরাধী নয়, রোগী। ভুল সঙ্গের ফাঁদে পড়ে মাদকে আসক্ত হয়ে যাওয়া এই ছেলেমেয়েদের আমরা এ মরণনেশা ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান করা তো দূরের কথা, উল্টো তাদের সঙ্গে কথাবার্তায় আচরণে বুঝিয়ে দিই যে, এরা নিকৃষ্ট ব্যক্তি, সমাজে এদের স্থান নেই, এদের প্রতি শুধুই ঘৃণা। ফলে আসক্তির প্রাথমিক পর্যায়ে থাকা মানুষও নিজেদের সংশোধন করতে সক্ষম হয় না। হয়ে ওঠে আরও বেপরোয়া আরও উচ্ছৃঙ্খল। এটি যেহেতু সামাজিক ব্যাধি তাই এ সমস্যা সমাধানের উপায় আমাদেরই বের করতে হবে।
মাদক নিরাময়ে চাই পরিবারের আন্তরিকতা ও পারস্পরিক ভালোবাসা। সন্তান তার পরিবারের পরিবেশ দ্বারা অনেক প্রভাবিত হয়। তাই পারিবারিক পরিবেশ হতে হবে ধূমপানমুক্ত। পিতামাতাকে অবশ্যই তাদের সন্তানদের পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। তাদের কার্যকলাপ ও তারা কাদের সঙ্গে চলাফেরা করে, কোথায় যায় এসব ব্যাপারে খোঁজখবর রাখতে হবে। সর্বোপরি তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। যদি দুর্ভাগ্যক্রমে পরিবারের কেউ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে, তাকে সেই অবস্থা থেকে বের করে আনার সর্বাত্মক প্রয়াস চালাতে হবে। প্রয়োজনে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। মাদক এক ভয়াবহ ব্যাধি। তাই মাদক ব্যবসায়ীদের সামাজিকভাবে বয়কট করে তাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে মাদকবিরোধী প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তুলতে হবে। দেশ জাতি কে রক্ষায় একজন মানুষকে সুনাগরিকের দায়িত্ববোধ থেকে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।
এক্ষেত্রে সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। মাদক ব্যবসা, চোরাচালানের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও কঠোর হতে হবে। মাদকদ্রব্যের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তুলতে নিয়মিত সভা-সমিতি, সেমিনার, কর্মশালার আয়োজন করতে হবে। এছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ, ছাত্রদের কাছে শিক্ষক আদর্শস্বরূপ। শিক্ষকদের আদেশ-উপদেশ তারা রাখে। সাংস্কৃতিক-বিনোদন ও খেলাধুলার পরিবেশ সৃষ্টিসহ স্কুল-কলেজের মাঠগুলোকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া অপরিহার্য। আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার দেশে সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স গ্রহণ করেছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, কৃষ্টি-কালচার চর্চার প্রতিবন্ধক হিসেবে সমাজের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে মাদক বিরাজ করছে। আসুন, মাদকের ভয়াবহতা রোধে আজই শপথ গ্রহণ করি। এই মরণব্যাধির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে পাড়ায় পাড়ায় যুবকদের নিয়ে মাদকবিরোধী কমিটি গঠন করে একসঙ্গে আওয়াজ তুলি- ‘মাদককে না বলি, অপরাধমুক্ত সমাজ গড়ি’।
লেখক- নুর আলমগীর অনু ( সম্পাদক, দৈনিক মুক্তি।) সভাপতি, বাংলাদেশ রিপোর্টার্স ক্লাব, লালমনিহাট জেলা কমিটি, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক, লালমনিহাট রিপোর্টার্স ইউনিটি, যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ মফস্বল সংবাদিক সোসাইটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি ঢাকা।
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com