বিএনপিতে এক-এগোরো আতঙ্ক


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় : জুন ১০, ২০২৩, ৩:০৭ পূর্বাহ্ণ /
বিএনপিতে এক-এগোরো আতঙ্ক
এক-এগোরো বিএনপির জন্য এক বিভীষিকার নাম। এক-এগারোর কারণেই বিএনপি রাজনীতির আজকের এই অবস্থা এমনটি মনে করেন বিএনপির প্রায় সব নেতাকর্মী। সেই সময় বিএনপি সরকারের কিছু ভুল, স্বেচ্ছাচারিতা বাংলাদেশে একটি সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এনেছিল। সেই সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করেছিল। তারেক জিয়াকে রাজনীতি করবে না মুচলেকা দিয়ে দেশের বাইরে যেতে হয়েছে। প্রায় সব নেতাই মনে করেন যে, বিএনপিকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল এই এক-এগোরো সরকার।
বিএনপির কোনো কোনো নেতা প্রকাশ্যে বলেন যে, এক-এগোরোর সবচেয়ে বড় বেনিফিসিয়ারি আওয়ামী লীগ এবং এক-এগোরোর ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ সরকার সমঝোতা করে ক্ষমতায় এসেছে এবং দেশ চালাচ্ছে। আর তাই নতুন করে আরেকটি এক-এগারো চায় না বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মীরা। আর এ কারণেই বিএনপিতে এখন নতুন করে এক-এগারোর আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

বর্তমান সময়ে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। তারা বলছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটি অংশগ্রহণ করবে না। কিন্তু এই দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপির নেতাদের মধ্যে শঙ্কা বাড়ছে। এই শঙ্কা বৃদ্ধির একটি বড় কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রদায়িক মনোভাব। বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনেকটা প্রকাশ্য এবং মারমুখী আচরণ করছে। তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে প্রতিদিনই। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের যেন অবসরের ফুসরত নেই। সারাক্ষণই তিনি কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে বৈঠক করছেন, কথা বলছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এত আগ্রহ বিএনপির অনেক নেতাকেই শঙ্কিত করেছে। তাদের মধ্যে অনেক প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

বিএনপি নেতারা মনে করছেন, তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি বাংলাদেশের সুশীলদের নেতৃত্বে আবার একটি সরকার গঠন করতে চায় এবং সে সরকারটি জগদ্দল পাথরের মতো দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে চায়? অতীত অভিজ্ঞতা বিএনপির নেতারা মনে করছেন, যদি বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত না হয় এবং একটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসে তাহলে শুধু আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্থ হবে না, বিএনপিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিএনপির একজন নেতা বলছিলেন যে, আওয়ামী লীগ বিএনপির চেয়ে সাংগঠনিকভাবে অনেক শক্তিশালী দল। পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্টে এই দলটির কিছুই হয়নি। কাজেই এ ধরনের একটি রাজনৈতিক দলকে নিঃশেষ করা যাবে না। কিন্তু বিএনপি গত ১৬ বছর ক্ষমতার বাইরে। এই দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা তৈরি হচ্ছে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে বিএনপির প্রতি তেমন আগ্রহ এবং আকর্ষণীয় নেই। এরকম পরিস্থিতিতে যদি আরেকটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসে তাহলে তারা কখনোই বিএনপির পক্ষে কাজ করবে না।

বিএনপির অন্য একজন নেতা বলেছেন, ২০০৭ সালে এক-এগোরো সরকার আসার পর আওয়ামী লীগ বিএনপির দু’টি দলের ওপরই চড়াও হয়েছিল। বিএনপি নেতারা যখন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তেমনি আওয়ামী লীগের নেতারা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। কাজেই এবার এরকম একটি অনির্বাচিত সরকার আসলে বিএনপি ছাড় পাবে এমনটি মনে করছেন না।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপিকে এ ব্যাপারে হুঁশিয়ারি করে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, বিএনপি মনে করছে যে তাদেরকে ক্ষমতায় বসাবে, কিন্তু আসলে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাবে না বরং তাদেরকে ব্যবহার করবে। বিএনপির অনেক নেতাও মনে করেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ আপনার এই বক্তব্যটি সত্যিই।

বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাজনীতিতে একটি তৃতীয় শক্তির উত্থানের চেষ্টা করছে। সুশীলদের কর্তৃত্ব রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করছে যেন মার্কিন প্রভাব এখানে নিরঙ্কুশ হয়। আর সেই লক্ষ্যেই ২০০৭ সালের এক-এগোরো সরকার আনা হয়েছিল। এই এক-এগোরো সরকার আনার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ছিল প্রকাশ্য। আর এবারও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভূমিকা পালন করছে তাতে একটি অনির্বাচিত সরকার আসারই শঙ্কা তৈরি করছে। বিএনপির নেতারা এ ধরনের পরিস্থিতিতে আতঙ্কে রয়েছেন। তারা শঙ্কিত কারণ এরকম পরিস্থিতি হলে দেখা যায় যে সব দল থেকেই কিছু কিছু চাটুকার, তোষামোদকারী এবং সুবিধাবাদী জুটে যায়। যারা নির্বাচিত সরকারকে সমর্থন করে তাদের লেজুড়বৃত্তি করে। বাংলাদেশের যদি আবার সেরকম একটি ঘটনা ঘটে তাহলে বিএনপি মধ্যে যারা এখনো সক্রিয় আছেন, যারা বেশি ভূমিকা রাখছেন তারা যে উল্টোপথে হাঁটবেন সেটা বিএনপির নেতাকর্মীরা ভালো করেই জানেন। বিএনপির কাছে ২০০৭ এর এক-এগারোর অভিজ্ঞতা ভালো নয়। কাজেই নতুন করে এরকম একটি পরিস্থিতি তৈরি হোক সেটিও বিএনপির তৃণমূল চায় না।
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com