মিঠাপুকুরে রহস্যজনক মৃত্যু, আদালতে মামলা


dailymukti24 প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ৪, ২০২৪, ৯:৫৯ পূর্বাহ্ন /
মিঠাপুকুরে রহস্যজনক মৃত্যু, আদালতে মামলা
মোঃ সুলতান মারজান (হৃদয়),রংপুর প্রতিনিধি:
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার কাফ্রিখাল ইউনিয়নের যাদবপুর গ্রামে গত ১০ নভেম্বর আফরিন খাতুন নামের এক গৃহবধূর রহস্যময় আত্মহত্যার ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) রংপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এ আত্মহত্যার প্ররোচনায় তিনজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন নিহত আফরিনের নানি মোছাঃ নোরেজা বেগম।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবী রোকনুজ্জামান রোকন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আফরিন খাতুন ছোট বেলা থেকেই নানীর কাছে বসবাস করতো । আফরিনের সাথে মোঃ মুরাদ হাসানের ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই  বাবা মায়ের প্ররোচনায় মুরাদ আফরিনের উপর যৌতুকের দাবিতে অত্যাচার চালায় । এতে বাধ্য হয়ে আফরিন তার বাবা-মায়ের নিকট থেকে প্রায় দুই লক্ষ টাকা যৌতুক এনে দেয়।
পরবর্তীতে আরও যৌতুকের দাবিতে আফরিনকে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন । ঘটনার ৯ দিন আগে মুরাদ আফরিনের নিকট পঞ্চাশ হাজার টাকা এবং একটা এন্ড্রোয়েড মোবাইল ফোন এনে দিতে হবে বলে। এতে করে মুরাদের সাথে আফরিনের ঝগড়া হয় এবং মুরাদ আফরিনকে মারধর করে।  আফরিন পরবর্তীতে নানীর নিকট এসে উক্ত ঘটনার বিস্তারিত খুলে বলে । এতে আফরিনের নানী আশ্বাস দেয় যে,  ঢাকায় গিয়ে তার পিতা-মাতার নিকট থেকে টাকা এবং মোবাইল ফোন এনে দেবেন । পরে তাকে বুঝিয়ে মুরাদের বাড়ীতে পাঠিয়ে দেন।
পরবর্তীতে ঘটনার দিন ১০ নভেম্বর দুপুরে আফরিন   তার স্বামী মুরাদের মোবাইল থেকে তার নানীর মোবাইলে কল করে তার উপর টাকা এবং মোবাইল ফোনের জন্য শারিরীক ও মানসিক নির্যাতনের কথা বর্ণনা করে। এক পর্যায়ে কথা বলার সময় মুরাদ মোবাইল ফোনটি কেড়ে নিয়ে ফোন কেটে দেয়। পরবর্তীতে সন্ধ্যায় স্বামী মুরাদের ফোন থেকে নানীকে ফোন করে জানায় আফরিন গলায় ফাঁস  দিয়ে আত্মহত্যা করেছে । পরে আফরিনের বাবা,মা ও নানী ঢাকা থেকে ভোর বেলায় মিঠাপুকুর থানায় এসে দেখেন আফরিনকে একটি গাড়ীতে শোয়ানো অবস্থায় রাখা আছে। শরীরে ঢাকা দেওয়া কাপড় সরিয়ে পিতা-মাতা ও নানী দেখতে পান আফরিনের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন বিশেষ করে, বাম স্তনের নিচে গোলাকার জখম, ডান কাধের নিচে পিঠে জখম ও গলার দুপাশে নখ বসানো আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
পরবর্তীতে স্বামী মুরাদ, শ্বশুর ও শ্বাশুরি মিলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আফরিনকে আত্মহত্যার প্ররোচনায় হত্যার জন্য থানায় অভিযোগ করতে গেলে থানা অভিযোগ না নিয়ে মিঠাপুকুর থানায় অপমৃত্যুর মামলা করাতে বাধ্য করেন।  থানায় বারবার আসামীদের  বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে গেলেও থানা কর্তৃপক্ষ  মামলা গ্রহণ করেন নাই।
পরে নানী নোরেজা বেগম বাধ্য হয়ে রংপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এ মামলা দায়ের করেন। আদালত  আসামীগণের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা ইস্যু করে আসামিদের গ্রেফতার করে বিচারের নালিশ করলে বিজ্ঞ আদালত নালিশটি আমলে নিয়ে সিআইডি কে তদন্তের আদেশ দেন।
এবিষয়ে আফরিনেন নানী নোরেজা বেগম বলেন, আমরা অসহায় গরীব মানুষ। আমাদের আফরিনকে ওরা হত্যা করেছে । আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। সিআইডি সঠিকভাবে তদন্ত করে আফরিন হত্যার রহস্য উন্মোচন করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।