বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার নির্মাণে দুর্নীতি, পুনরায় তদন্ত শুরু


dailymukti24 প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪, ৯:১৯ পূর্বাহ্ন /
বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার নির্মাণে দুর্নীতি, পুনরায় তদন্ত শুরু

বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার নির্মাণে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির ৩ মামলা পুনরায় তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার এ তথ্য জানা গেছে।২০০১ সালে ক্ষমতা ছাড়ার দু’দিন আগে বিধি অমান্য করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার প্রকল্পের অনুমোদন দেন শেখ হাসিনা। ১২০ কোটি টাকা মূল্যের সেই প্রকল্প অনুমোদনের সময় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) পূর্ণাঙ্গ কোরাম ছিল না। ফলে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে সেই কমিটি অনুমোদন দেওয়া ও প্রকল্পে পছন্দের ঠিকাদারকে দিয়ে অনিয়মের মাধ্যমে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো ২০০২ সালে মামলা করে। ২০০২ সালের ২৭ মার্চ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় তখনকার বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করে বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরো। 

সূত্র জানায়, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় থাকাকালে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পরামর্শক নিয়োগের মাধ্যমে প্রায় ১২০ কোটি টাকা লোপাটের খবর পায় ঐ সময়ের দুর্নীতি দমন ব্যুরো। এরপর ২০০১ সালে ক্ষমতা ছাড়ার ঠিক দুই দিন আগে ১৩ সদস্যের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুপস্থিতিতে মাত্র ছয় সদস্যের উপস্থিতিতে নিয়ম লঙ্ঘন করে এই প্রকল্পের বৈধতা দেয় একনেক।

২০০২ সালে শেখ হাসিনাসহ ছয় মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় পৃথক তিনটি মামলা করা হয়। অন্য আসামিরা ছিলেন- সাবেক মন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া, এ এস এইচ কে সাদেক, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী ও মহীউদ্দীন খান আলমগীর। তাদের তিনজনই এখন মৃত।

পরিদর্শক মোহাম্মদ ইব্রাহিম বাদী হয়ে একটি এবং দুর্নীতি দমন কর্মকর্তা (এন্টি করাপশন অফিসার) খান মো. মীজানুল ইসলাম বাদী হয়ে দুটি মামলা করেন। বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার প্রকল্প বিষয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের কার্যনির্বাহী পরিষদের (একনেক) সিদ্ধান্তকে আমলে নিয়ে মামলাগুলো করা হয়। একনেকের সিদ্ধান্তগুলো ছিল—প্রকল্পের পরামর্শকের ব্যয় বৃদ্ধি, ভবন নির্মাণের ব্যয় বৃদ্ধি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যয় বৃদ্ধি।তিনটি মামলায়ই শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করা হয়। এসব মামলায় আসামি করা হয় যথাক্রমে ৭ জন, ৮ জন এবং ১২ জনকে।মামলার আসামিদের মধ্যে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া এবং সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এ এস এইচ কে সাদেক মারা গেছেন। আওয়ামী লীগের নেতা তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, মহীউদ্দীন খান আলমগীর অভিযোগের দায় থেকে উচ্চ আদালত থেকে অব্যাহতি পান।

মামলার পর থেকেই শেখ হাসিনা এবং অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন আইনি লড়াই করেছেন। ব্যুরো থেকে কমিশন হওয়ার পর ২০০৫ সালের ২৪ আগস্ট বিচারপতি সুলতান হোসেন খানের কমিশন মামলাগুলোর অভিযোগপত্র দাখিলের নির্দেশ দেন। বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে শেখ হাসিনা আলাদা দুটি রিট আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ২০১০ সালের ৪ মার্চ অভিযোগপত্র দাখিলের আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেন।অভিযোগ সম্পর্কে আদালত বলেন, অভিযোগগুলো ফৌজদারি আইনের কোনো বিধানের আওতায় পড়ে না। মামলা চললে বিবাদী আরো হয়রানির সম্মুখীন হবেন। আদালত পর্যবেক্ষণে এ–ও বলেন, মামলার নথিপত্র উপস্থাপনের ক্ষেত্রে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে।

আদালতের ঐ সিদ্ধান্তের পর দুদকের ঐ তিন মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি। পড়ে ছিল দুদকের অনিষ্পন্ন শাখায়। একানে পড়ে থাকা ব্যুরোর আমলের মামলাগুলো নিষ্পত্তির উদ্যোগের অংশ হিসেবে তিনটি মামলা পুনঃতদন্তের জন্য উপপরিচালক মঞ্জুর মোরশেদকে দুদকের পক্ষ থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ডিসেম্বর মাসে তিনটি মামলারই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের সুপারিশ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেন শেখ হাসিনাসহ এজাহারভুক্ত সব আসামিকে।যাচাইবাছাই শেষে ২২ জানুয়ারি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।