নীলফামারীর সৈয়দপুরে ইটভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে বায়ু দূষণ বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে বাড়ছে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগ, বিশেষ করে অ্যাজমা রোগীর সংখ্যা। এর ফলে শিশু ও বয়স্করা বিপাকে পড়েছেন বেশি।
জেলায় মোট ৫৬টি ইটভাটা রয়েছে। যার মধ্যে ৩২টি ইটভাটা সৈয়দপুরে অবস্থিত। এসব ইটভাটা থেকে প্রতিদিন কালো ধোঁয়া বের হওয়ায় শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, বিশেষ করে ইটভাটাগুলোর কালো ধোঁয়া এলাকার জমির ফলন ও ফলজ বৃক্ষের মুকুলে প্রভাব ফেলছে। ফলে ফলন কমে যাচ্ছে।
সৈয়দপুরের কামারপুকুর ইউনিয়নের কুজিপুকুর গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এলাকায় কয়েকটি ইটভাটা রয়েছে। যেগুলো সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে নিচু চিমনি দিয়ে ইট পোড়াচ্ছে। এর ফলে কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে। যা আমাদের শ্বাসকষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলজ গাছে মুকুল আসছে না, আর কিছু গাছে মুকুল ধরলেও ফলের আকার ছোট হয়ে যাচ্ছে।’
এ ছাড়া, ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও মাটি বহনকারী ট্রাকের ধুলাবালি থেকে মানুষের চোখ ও শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের অ্যাজমা বিশেষজ্ঞ ডা. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘কাঁচা রাস্তা ও ইটভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে অ্যাজমা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোগীরা শ্বাসকষ্টসহ নানা সমস্যা নিয়ে আসছে। সতর্কতা অবলম্বন না করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।’
শুধু ইটভাটা নয়, সৈয়দপুর শহরের বাঁশবাড়ি, মিস্ত্রিপাড়া, নতুন বাবুপাড়া, বাইপাস সড়কসহ আশেপাশে গুল ফ্যাক্টরির উপস্থিতি এলাকাবাসীর জন্য বাড়তি সমস্যা সৃষ্টি করছে। তামাকের ঝাঁঝালো গন্ধে রাত-দিন এলাকাবাসীর শ্বাসকষ্ট ও স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়ছে। বাঁশবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আসমত আলী (৭৬) বলেন, ‘এলাকার অনেকে তামাকের গন্ধে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। একাধিকবার গুল ফ্যাক্টরি উচ্ছেদের চেষ্টা হলেও প্রভাবশালী মালিকদের কারণে কোনো উদ্যোগই সফল হয়নি।’ শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠা ক্ষুদ্র শিল্প কল-কারখানার টুংটাং আওয়াজ ও শব্দদূষণও জনজীবনে সমস্যা তৈরি করছে। অনেকের মতে, এসব কল-কারখানার কারণে এলাকার লোকজনের ঘুমও হারাম হয়ে যাচ্ছে।
সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধীমান ভূষণ বলেন, ‘ইটভাটা শুধু পরিবেশকেই ক্ষতি করছে না, ফসলের উৎপাদনও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিবছর এসব কারণে ফসলের উৎপাদনে ঘাটতি দেখা যায়।’
সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ওয়াশিমুল বারী জয় বলেন, ‘শিশুদের জন্য শ্বাসকষ্টের সমস্যা বাড়ছে। বায়ু দূষণের কারণে তাদের শ্বাসযন্ত্রে সমস্যা হচ্ছে, বিশেষ করে শীতকালে।’এ বিষয়ে নীলফামারী জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এমন পরিস্থিতিতে এলাকার মানুষের দাবি, দ্রুত ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ, গুল ফ্যাক্টরি উচ্ছেদ ও পরিবেশ দূষণ রোধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। যাতে তারা সুস্থ পরিবেশে বসবাস করতে পারেন।
আপনার মতামত লিখুন :