আতিকুর রহমান, কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামের ধরলা নদীর পাড়ে মানুষের উৎসবমুখর উপস্থিতি। ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিন রবিবার (৮ জুন) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধরলা সেতু ও নদী তীরজুড়ে উপচে পড়া মানুষের ভিড় প্রমাণ করে—প্রকৃতির কোলে শান্তি খুঁজছে এ জেলার মানুষ।
ষোল নদ-নদীর কুড়িগ্রাম জেলার মানুষের কাছে নদী মানেই জীবনের আত্মিক বন্ধন। সীমিত বিনোদনের সুযোগে ধরলা পাড়ই হয়ে উঠেছে একটুকরো মুক্তির নিঃশ্বাস। শহর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরের ধরলা সেতু ও তীরবর্তী অঞ্চল এখন জেলার জনপ্রিয়তম প্রাকৃতিক বিনোদন কেন্দ্র। ঈদের ছুটিকে ঘিরে তা যেন রূপ নিয়েছে এক উৎসবময় মেলায়।
রবিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি সেতুর দুই প্রান্ত, বাঁধ ও তীরজুড়ে দেখা গেছে নানা বয়সী মানুষের ভিড়। কেউ হাঁটছেন প্রিয়জনের হাত ধরে, কেউ বসে আছেন নদীর পাড়ে—চেয়ে আছেন জলরেখার দিকে। শিশুদের উচ্ছ্বাস ছুঁয়ে যাচ্ছে বড়দের মনেও। কেউ ঘুড়ি ওড়াচ্ছে, কেউ ছবি তুলছে, কেউ আবার মনের ক্লান্তি ভুলে নদীর সৌন্দর্যে হারিয়ে যাচ্ছে।
উলিপুর উপজেলা থেকে আসা তরুণ নাজমুল হোসেন বলেন, “আমরা সময় পেলেই এখানে চলে আসি। ধরলা যেন আমাদের নিজস্ব আনন্দের জায়গা। নদীর ধারে বসে জীবনের সব চাপ একপাশে সরিয়ে দিয়ে নিরিবিলি সময় কাটানো যায়।”
কুড়িগ্রাম শহর থেকে ঘুরতে আসা রশিদ রহমান ও তার স্ত্রী লিলি বেগম বলেন, “আমরা দুজনই চাকরি করি। ছুটির দিনে একটু স্বস্তির সময় কাটানোর জায়গা খুব দরকার। ধরলা সেতু আমাদের সেই স্থান। শুধু প্রকৃতি নয়, এখানে যেন আমরা নিজেদেরও খুঁজে পাই।”
ভ্রমণপিপাসুদের অভিজ্ঞতা বলছে—এই ধরলা নদী ও সেতুকে ঘিরে একটি পরিকল্পিত পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব। যেখানে থাকবে পিকনিক স্পট, শিশুদের খেলার মাঠ, নৌভ্রমণের ব্যবস্থা, স্ন্যাকস কর্নার ও পর্যটক সহায়তা কেন্দ্র।
রাজারহাট থেকে আসা শিক্ষার্থী আরিয়ান ও কাকলি বলেন, “সারা সপ্তাহ পড়াশোনার চাপে বন্দি থাকি। আজ বাবার সঙ্গে ধরলা পাড়ে এসে মনে হচ্ছে—আমরা যেন কোনো নতুন জগতে এসেছি। নদী, মানুষ আর আকাশ সবই আজ অন্যরকম।”
ধরলা কেবল একটি নদী নয়, এটি কুড়িগ্রামের মানুষের আত্মার অনুভব। পর্যাপ্ত বিনোদনের অভাবে জর্জরিত এই জেলার মানুষ এখন আশ্রয় খুঁজে পায় ধরলার পাড়েই—যেখানে মানুষ হাঁটে, হাসে, ভালোবাসে আর নদীর স্রোতের মতোই বয়ে চলে জীবনের শান্ত ধারা।
আপনার মতামত লিখুন :