ফাহিম হোসেন রিজু, ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর)
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় এক সময়ের পুষ্টিতে ভরপুর ও সুস্বাদু ফসল কাউন চাষ এখন বিলুপ্তির পথে। সরকারি উদ্যোগের অভাব, বাজারে চাহিদার সংকট এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির প্রভাবে কৃষকরা এই ঐতিহ্যবাহী ফসলের চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
কাউন বা ফক্সটেল মিলেট (Setaria italica) ছিল গ্রামীণ জনগণের জনপ্রিয় খাদ্যশস্য। এর চাল দিয়ে এক সময় পিঠা, ক্ষির, পায়েস, খিচুড়িসহ নানা রকম সুস্বাদু খাবার তৈরি করা হতো। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের কাছে এটি এক প্রকার ‘অজানা ইতিহাস’ হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, সহজ চাষ, স্বল্প খরচ ও পানি সাশ্রয়ী হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে কাউন চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে কৃষিজীবীরা। উপজেলার সোনারপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল আলীম বলেন, ❝দেশি জাতের এ ফসলটিকে আমাদের স্বার্থেই সংরক্ষণ করা উচিত। তা না হলে পরবর্তী প্রজন্ম জানতেই পারবে না কাউন নামটির কথা।❞
৩ নম্বর সিংড়া ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ❝আমি ছোটকাল থেকেই জেনে এসেছি বহু গুণে ভরপুর কাউন শুধুমাত্র মুখরোচক খাদ্য নয়, এটি ভিটামিন, মিনারেলসমৃদ্ধ, কোলেস্টেরল ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এমনকি এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও উপকারী, কারণ এতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম।❞
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রফিকুজ্জামান বলেন, ❝আগে বন্যার কারণে ধান হতো না। তখন কাউনই ছিল প্রধান খাদ্য। বর্তমানে হাইব্রিড ধান, ভুট্টাসহ অধিক ফলনের ফসল চাষে আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় কাউনের স্বাদ হারিয়ে গেছে। এখন এটি মূলত পাখির খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি কাউনকে পুনরায় জনপ্রিয় করে তুলতে।❞
অতীতের ঐতিহ্য ও স্বাস্থ্যসম্মত গুণাগুণ বিবেচনায় রেখে সরকারের সহযোগিতা ও কৃষকদের উৎসাহ প্রদান করলে হয়তো এই ঐতিহ্যবাহী ফসলটির পুনর্জাগরণ সম্ভব।
আপনার মতামত লিখুন :