মিলে চাকা ঘুরছে, বেকারত্বের চাকা কি ঘুরবে?


dailymukti24 প্রকাশের সময় : জুন ২৯, ২০২৫, ৮:০১ পূর্বাহ্ন /
মিলে চাকা ঘুরছে, বেকারত্বের চাকা কি ঘুরবে?

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (BBS) শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৪ অনুযায়ী, দেশের মোট বেকারত্বের হার বেড়ে ৪.৪৯%-এ দাঁড়িয়েছে। এর ফলে বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৬ লাখ ৬০ হাজারে। এই সংখ্যাটি ২০২৩ সালের তুলনায় বেশ খানিকটা বেশি। এটি থেকে বোঝা যায়, চাকরির বাজারে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি প্রত্যাশা অনুযায়ী হচ্ছে না।
সম্প্রতি আমাদের এলাকায় নতুন নতুন মিল-কারখানা গড়ে উঠছে। অর্থনীতির চাকা ঘুরছে, দেশ উন্নয়নের পথে এগোচ্ছে—এগুলো নিঃসন্দেহে আশার খবর। কিন্তু এই উন্নয়নের চাকায় কি আমাদের স্থানীয় যুবকদের জীবন ঘুরছে? দুঃখজনক হলেও সত্যি, এর উত্তর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ‘না’।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক যুবক বলেন- ৮বছর চাকরি করেছি অন্য জেলার কাগজ পাতি তৈরি করে কিন্তু এখন অনলাইনে সার্চ করলে সব বেড়িয়ে আসে এজন্য আর জ্বাল কাগজ তৈরি করে চাকরি নিতে পারিনা।
সারাউল্লাহ, ২৫ বছর বয়সী একজন তরুণ, যিনি স্নাতক পাশ করে গত দুই বছর ধরে চাকরির পেছনে ঘুরছেন। তার বাড়ির পাশেই একটি বড় পোশাক কারখানা, কিন্তু সেখানে তার চাকরি হয়নি। কারণ, কারখানার কর্তৃপক্ষ বলেছে, “আমাদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা ওর নেই।” সারাউল্লাহর মতো এমন হাজারো তরুণ এই সমস্যার শিকার।

এই পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, দক্ষতা এবং প্রশিক্ষণের অভাব। আমাদের যুবকদের যে ধরনের কারিগরি দক্ষতা থাকা দরকার, তা তাদের নেই।
দ্বিতীয়ত, স্থানীয়দের নিয়োগে সুনির্দিষ্ট নীতির অভাব। অনেক কারখানায় বাইরের এলাকা থেকে শ্রমিক আনা হয়, যা স্থানীয়দের মনে হতাশা তৈরি করে।এতে স্থানীয় যুবকরা চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী ও মাদক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে।

তবে এই সমস্যার সমাধান অসম্ভব নয়। প্রয়োজন শুধু একটু উদ্যোগ এবং সমন্বিত পদক্ষেপ।
*রাজনৈতিক দলের পদক্ষেপঃ যে দলই রাজনীতিতে আসুক দলের লিডাররা বেকার যুবকদের চাকরিতে উৎসাহিত না করে মিছিল, মিটিং ও জুট ব্যাবসায় উৎসাহিত করে।
* প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন: প্রতিটি কারখানাকে তাদের কাজের ধরন অনুযায়ী নিজস্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলতে উৎসাহিত করা যেতে পারে।
* নীতিমালা প্রণয়ন: স্থানীয় প্রশাসন এবং শিল্প মালিকদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে, যারা স্থানীয় যুবকদের জন্য একটি কোটা পদ্ধতি চালু করবে।
* সরকারের প্রণোদনা: সরকার যদি স্থানীয়দের বেশি করে নিয়োগের জন্য কর ছাড় বা আর্থিক সুবিধা দেয়,
তাহলে মালিকরা উৎসাহিত হবেন।

* নীতিমালা প্রণয়ন: স্থানীয় প্রশাসন এবং শিল্প মালিকদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে, যারা স্থানীয় যুবকদের জন্য একটি কোটা পদ্ধতি চালু করবে। মোট জনবলের একটি নির্দিষ্ট অংশ (যেমন, ৩০%) স্থানীয়দের জন্য সংরক্ষিত রাখা হোক।

আমাদের যুবসমাজ দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ। তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে না পারলে, এই উন্নয়নের ধারা টেকসই হবে না। স্থানীয় মিল-কারখানাগুলো যখন মুনাফা অর্জন করবে, তখন তাদেরও সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে স্থানীয় যুবকদের কর্মসংস্থানের কথা ভাবা উচিত। এই সমস্যা সমাধানে সরকার, স্থানীয় প্রশাসন, এবং শিল্প মালিকদের একযোগে কাজ করতে হবে। তবেই মিলের চাকার সাথে সাথে আমাদের যুবসমাজের ভাগ্যের চাকাও ঘুরবে।

লেখকঃ আশিকুর রহমান সবুজ,
শ্রীপুর,গাজীপুর।
পেশাঃ শ্রীপুর উপজেলা প্রতিনিধি,দৈনিক মুক্তি।
মোবাইলঃ ০১৭২৫-৭৩১৪১৩
ইমেইলঃ smshuboz@gmail.com