
অনলাইন ডেস্ক:- মাদক আজ শুধু একটি সামাজিক সমস্যা নয়, এটি জাতির ভবিষ্যৎকে গ্রাস করে ফেলা এক ভয়াবহ ব্যাধি। সমাজের প্রতিটি স্তরে—শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী, বেকার যুবক এমনকি নারী—সব শ্রেণির মানুষ এই অভিশাপের শিকার হচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযান, প্রশাসনিক উদ্যোগ কিংবা মাঝে মাঝে বড় বড় অভিযান—এসব সত্ত্বেও মাদকের প্রবাহ বন্ধ হচ্ছে না। কারণ, এর শিকড় অনেক গভীরে—সমাজ, পরিবার ও মানুষের মননে।
মাদক ব্যবসায়ী ও চক্রগুলো যতই শক্তিশালী হোক, তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ অস্ত্র হতে পারে জনগণের সচেতনতা। একটি সমাজ যদি নিজেই মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তবে কোনো চক্রই দীর্ঘদিন টিকতে পারে না। অভিভাবকদের ভূমিকা এখানে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সন্তান কোথায় যায়, কার সঙ্গে মিশে, কেমন আচরণ করছে—এসব বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। স্কুল-কলেজেও মাদকবিরোধী শিক্ষা কার্যক্রম নিয়মিতভাবে চালু করতে হবে, যাতে তরুণ প্রজন্ম শুরু থেকেই জানে—মাদক মানে ধ্বংস।
একই সঙ্গে সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা, জনপ্রতিনিধি ও ধর্মীয় নেতারা যদি একযোগে মাদকবিরোধী অবস্থান নেন, তাহলে এই যুদ্ধে জয়ের সম্ভাবনা অনেকগুণ বাড়বে। শুধু শাস্তি নয়, মাদকাসক্তদের পুনর্বাসন, কাউন্সেলিং ও কর্মসংস্থানের সুযোগও জরুরি।
মাদকবিরোধী লড়াই কেবল পুলিশের দায়িত্ব নয়—এটি সমাজ, পরিবার এবং রাষ্ট্রের সম্মিলিত দায়িত্ব। তাই সময় এসেছে “মাদকমুক্ত সমাজ”কে শুধু স্লোগান নয়, প্রতিটি পরিবারের অঙ্গীকারে পরিণত করার।
একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রথম দায়িত্ব হলো নিজে মাদকমুক্ত থাকা এবং অন্যকে দূরে রাখা। পরিবারে সন্তানদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা, তাদের চলাফেরা, বন্ধুত্ব ও মানসিক অবস্থার প্রতি নজর রাখা জরুরি। সমাজে যদি কেউ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে, তাকে ঘৃণা না করে পুনর্বাসনে উৎসাহ দিতে হবে।
দ্বিতীয়ত, মাদক ব্যবসা বা ব্যবহার সম্পর্কিত তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো নাগরিক দায়িত্বের অংশ। নীরব দর্শক হয়ে থাকা মানে অপরাধীদের সাহস যোগানো। প্রত্যেকে নিজের এলাকায় সচেতন নাগরিক কমিটি গঠন করে নিয়মিত মাদকবিরোধী সভা, প্রচার ও ক্যাম্পেইন চালাতে পারে।
তৃতীয়ত, ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে সক্রিয় করা প্রয়োজন। মসজিদ, মন্দির, স্কুল, ক্লাব—সব জায়গায় যদি মাদকবিরোধী বক্তব্য, গান, নাটক ও সেমিনার হয়, তাহলে মানুষের মনন পরিবর্তন হবে।
সবশেষে, মাদকাসক্তদের প্রতি মানবিক আচরণ করা জরুরি। তারা সমাজের শত্রু নয়, বরং ভুলপথে চলে যাওয়া মানুষ—যাদের পাশে দাঁড়ানোই সত্যিকার নাগরিকত্বের প্রমাণ।
সচেতন নাগরিকই পারে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে। তাই “মাদকমুক্ত সমাজ” গড়ার সংগ্রাম আমাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ দায়িত্ব থেকে শুরু হওয়া উচিত।
নূর আলমগীর অনু, সম্পাদক, দৈনিক মুক্তি।