ঢাকা ০৯:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সন্তানকে মাদক থেকে দূরে রাখতে অভিভাবকের ভূমিকা - দৈনিক মুক্তি

সন্তানকে মাদক থেকে দূরে রাখতে অভিভাবকের ভূমিকা

অনলাইন ডেস্ক:- মাদক একটি ভয়ঙ্কর ধ্বংসাত্মক শক্তি, যা একজন কিশোর বা কিশোরীর জীবনকে দ্রুত বিপর্যস্ত করে। শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক জীবনের ওপর এর প্রভাব বিরূপ। কিশোর বয়সে মাদকাসক্তি শুরু হলে তা শুধু শিশুর নয়, পুরো পরিবারের জন্যও বিপদজনক হয়ে ওঠে। তাই অভিভাবকের দায়িত্ব অপরিহার্য।

১. সচেতনতা ও শিক্ষা দেওয়া -অভিভাবকের প্রথম দায়িত্ব হলো সন্তানকে মাদকের ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন করা। সন্তানকে বোঝানো উচিত যে মাদক শরীর, মন ও শিক্ষার ওপর কেমন প্রভাব ফেলে। মাদকাসক্তি ভবিষ্যতে জীবনের সম্ভাবনা, ক্যারিয়ার ও সম্পর্ক ধ্বংস করতে পারে। গল্প, উদাহরণ বা বাস্তব জীবনের ঘটনা ব্যবহার করে সন্তানকে শিক্ষিত করা সবচেয়ে কার্যকর।

. সঠিক বন্ধু ও পরিবেশ নিশ্চিত করা- সন্তানের চারপাশের পরিবেশ তাকে প্রভাবিত করে। নেতিবাচক বন্ধু বা পরিবেশ থেকে সন্তানকে দূরে রাখা দরকার। শিশুর বন্ধু নির্বাচন, খেলাধুলা এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে নজর রাখা অভিভাবকের দায়িত্ব। ইতিবাচক বন্ধু ও সৃজনশীল কার্যক্রমের মাধ্যমে সন্তানকে মাদকাসক্তির আকর্ষণ থেকে দূরে রাখা যায়।

৩. মনোযোগ ও মানসিক সহায়তা- সন্তানকে ভালোভাবে মনোযোগ দেওয়া তার মাদকাসক্তি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ।নিয়মিত কথা বলা, অনুভূতি বোঝা এবং সমস্যা শোনার সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন। সন্তান যখন বুঝতে পারে যে পরিবার তার পাশে আছে, তখন সে নেতিবাচক প্রভাবের দিকে ঝুঁকে না পড়ে। চাপ বা হতাশা থেকে মুক্ত রাখতে অভিভাবককে সমর্থনমূলক আচরণ দেখাতে হবে।

. খেলাধুলা ও সৃজনশীল কার্যক্রমে উৎসাহ দেওয়া- খেলার মাধ্যমে শরীর ও মনকে সুস্থ রাখা যায়। চিত্রাঙ্কন, সংগীত, নাটক, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং বা অন্যান্য সৃজনশীল কাজে অংশগ্রহণ শিশুকে ব্যস্ত রাখে এবং মাদকাসক্তির প্রলোভন কমায়। সমাজসেবা বা স্বেচ্ছাসেবী কর্মকাণ্ডেও অংশগ্রহণ করালে আত্মবিশ্বাস ও দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি পায়।

. পরিবারের নিয়ম ও শৃঙ্খলা –পরিবারের মধ্যে নিয়ম, শৃঙ্খলা ও সীমাবদ্ধতা থাকা প্রয়োজন। সন্তানকে বোঝানো উচিত যে, অশৃঙ্খল আচরণ, মাদকাসক্তি বা অসদাচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। সঠিক শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধ তার মনোবল ও নৈতিক মূল্যবোধকে দৃঢ় রাখে।

৬. পেশাদার সাহায্য গ্রহণ- কোনো সন্তানের মাদকাসক্তির প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কাউন্সেলিং, থেরাপি বা পুনর্বাসন কেন্দ্রের সাহায্য শিশুকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে সহায়ক।

. নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও সহযোগিতা- অভিভাবককে সন্তানের আচরণ, বন্ধু এবং স্কুল কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কোনো অস্বাভাবিক আচরণ, বিদ্যালয় অভ্যাসের পরিবর্তন বা মানসিক চাপ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বিদ্যালয় ও শিক্ষকদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে সন্তানের পরিস্থিতি বোঝা যায় এবং সহায়তা করা সম্ভব। সন্তানকে মাদক থেকে দূরে রাখা শুধুমাত্র স্কুল বা সমাজের দায়িত্ব নয়; এটি পরিবারের মূল দায়িত্ব। সচেতনতা, মনোযোগ, সঠিক নির্দেশনা, ইতিবাচক পরিবেশ এবং প্রয়োজনে পেশাদার সহায়তা শিশুদের মাদকমুক্ত, সুস্থ ও নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করতে পারে। অভিভাবকের ভূমিকা যত বেশি কার্যকর হবে, সন্তানের ভবিষ্যত তত নিরাপদ হবে।

ট্যাক

সন্তানকে মাদক থেকে দূরে রাখতে অভিভাবকের ভূমিকা

আপডেট সময় ১০:২৪:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

অনলাইন ডেস্ক:- মাদক একটি ভয়ঙ্কর ধ্বংসাত্মক শক্তি, যা একজন কিশোর বা কিশোরীর জীবনকে দ্রুত বিপর্যস্ত করে। শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক জীবনের ওপর এর প্রভাব বিরূপ। কিশোর বয়সে মাদকাসক্তি শুরু হলে তা শুধু শিশুর নয়, পুরো পরিবারের জন্যও বিপদজনক হয়ে ওঠে। তাই অভিভাবকের দায়িত্ব অপরিহার্য।

১. সচেতনতা ও শিক্ষা দেওয়া -অভিভাবকের প্রথম দায়িত্ব হলো সন্তানকে মাদকের ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন করা। সন্তানকে বোঝানো উচিত যে মাদক শরীর, মন ও শিক্ষার ওপর কেমন প্রভাব ফেলে। মাদকাসক্তি ভবিষ্যতে জীবনের সম্ভাবনা, ক্যারিয়ার ও সম্পর্ক ধ্বংস করতে পারে। গল্প, উদাহরণ বা বাস্তব জীবনের ঘটনা ব্যবহার করে সন্তানকে শিক্ষিত করা সবচেয়ে কার্যকর।

. সঠিক বন্ধু ও পরিবেশ নিশ্চিত করা- সন্তানের চারপাশের পরিবেশ তাকে প্রভাবিত করে। নেতিবাচক বন্ধু বা পরিবেশ থেকে সন্তানকে দূরে রাখা দরকার। শিশুর বন্ধু নির্বাচন, খেলাধুলা এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে নজর রাখা অভিভাবকের দায়িত্ব। ইতিবাচক বন্ধু ও সৃজনশীল কার্যক্রমের মাধ্যমে সন্তানকে মাদকাসক্তির আকর্ষণ থেকে দূরে রাখা যায়।

৩. মনোযোগ ও মানসিক সহায়তা- সন্তানকে ভালোভাবে মনোযোগ দেওয়া তার মাদকাসক্তি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ।নিয়মিত কথা বলা, অনুভূতি বোঝা এবং সমস্যা শোনার সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন। সন্তান যখন বুঝতে পারে যে পরিবার তার পাশে আছে, তখন সে নেতিবাচক প্রভাবের দিকে ঝুঁকে না পড়ে। চাপ বা হতাশা থেকে মুক্ত রাখতে অভিভাবককে সমর্থনমূলক আচরণ দেখাতে হবে।

. খেলাধুলা ও সৃজনশীল কার্যক্রমে উৎসাহ দেওয়া- খেলার মাধ্যমে শরীর ও মনকে সুস্থ রাখা যায়। চিত্রাঙ্কন, সংগীত, নাটক, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং বা অন্যান্য সৃজনশীল কাজে অংশগ্রহণ শিশুকে ব্যস্ত রাখে এবং মাদকাসক্তির প্রলোভন কমায়। সমাজসেবা বা স্বেচ্ছাসেবী কর্মকাণ্ডেও অংশগ্রহণ করালে আত্মবিশ্বাস ও দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি পায়।

. পরিবারের নিয়ম ও শৃঙ্খলা –পরিবারের মধ্যে নিয়ম, শৃঙ্খলা ও সীমাবদ্ধতা থাকা প্রয়োজন। সন্তানকে বোঝানো উচিত যে, অশৃঙ্খল আচরণ, মাদকাসক্তি বা অসদাচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। সঠিক শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধ তার মনোবল ও নৈতিক মূল্যবোধকে দৃঢ় রাখে।

৬. পেশাদার সাহায্য গ্রহণ- কোনো সন্তানের মাদকাসক্তির প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কাউন্সেলিং, থেরাপি বা পুনর্বাসন কেন্দ্রের সাহায্য শিশুকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে সহায়ক।

. নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও সহযোগিতা- অভিভাবককে সন্তানের আচরণ, বন্ধু এবং স্কুল কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কোনো অস্বাভাবিক আচরণ, বিদ্যালয় অভ্যাসের পরিবর্তন বা মানসিক চাপ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বিদ্যালয় ও শিক্ষকদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে সন্তানের পরিস্থিতি বোঝা যায় এবং সহায়তা করা সম্ভব। সন্তানকে মাদক থেকে দূরে রাখা শুধুমাত্র স্কুল বা সমাজের দায়িত্ব নয়; এটি পরিবারের মূল দায়িত্ব। সচেতনতা, মনোযোগ, সঠিক নির্দেশনা, ইতিবাচক পরিবেশ এবং প্রয়োজনে পেশাদার সহায়তা শিশুদের মাদকমুক্ত, সুস্থ ও নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করতে পারে। অভিভাবকের ভূমিকা যত বেশি কার্যকর হবে, সন্তানের ভবিষ্যত তত নিরাপদ হবে।