দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার বুলাকীপুর ইউনিয়নের কুলানন্দপুর গ্রামে করতোয়া নদীর ভাঙনে চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদীপাড়ের শত শত পরিবার। প্রতিদিনই করতোয়ার ভাঙন গিলে খাচ্ছে বসতভিটা, ফসলি জমি, চলাচলের রাস্তা এমনকি শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের পাঠশালাও।
স্থানীয়রা জানান, হঠাৎ করেই নদীর তীব্র স্রোতে ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এর আগে নদী ভাঙ্গে বহু পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। অনেকের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঘরবাড়ি হারানো এসব পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ২০০ জন স্কুলগামী শিক্ষার্থী। ভাঙনের কারণে তাদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
গ্রামের বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, “প্রতিদিন নদী আমাদের গ্রাস করছে, অথচ দেখার কেউ নেই। প্রশাসন বা পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। শুধু আশ্বাস মিললেও বাস্তবে তেমন কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না।”
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আশ্বাস ও কাগজে পরিকল্পনার বাইরে নদী ভাঙন রোধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম হতাশায় ডুবে যাচ্ছে। নদীপাড়ের মানুষ মনে করছে তারা যেন সরকারের কাছে ‘ভাগ্যের দোহাই ছাড়া আর কিছুই নয়’।
এ বিষয়ে বুলাকীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সদের আলী খন্দকার বলেন, “কুলানন্দপুর নাপিতপাড়া এলাকায় নদীভাঙনের ফলে বহু বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। খবর পেয়ে আমি তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে গিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করি এবং মোবাইলে ছবি তুলে রাখি। এরপর বিষয়টি ইউএনও স্যারকে অবহিত করি। ইউএনও স্যার তাৎক্ষণিকভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি টিম এসে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে। প্রায় ১০-১২ দিন আগে আবারও তারা এসে সরেজমিন তদন্ত করে পরিমাপ নেয় এবং প্রস্তাবিত এস্টিমেট ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জরুরি ভিত্তিতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই পুরো কুলানন্দপুর গ্রাম মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে পারে। শুধু বসতি নয়, শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে ওঠা শত শত শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎও অন্ধকারে তলিয়ে যাবে।
করতোয়ার ভাঙনে আজ কুলানন্দপুরে মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে কাল হয়তো এই ভাঙন থামানো আর সম্ভব হবে না।
আপনার মতামত লিখুন :