ঢাকা ১১:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
কালীগঞ্জে জুয়ার ভয়াবহ থাবায়, বিপন্ন যুবসমাজ - দৈনিক মুক্তি

কালীগঞ্জে জুয়ার ভয়াবহ থাবায়, বিপন্ন যুবসমাজ

 কালীগঞ্জ,( লালমনিরহাট) প্রতিনিধি-

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় ক্যাসিনো ও অবৈধ জুয়ার ছোবলে যুবসমাজ দিন দিন শিকড়বিহীন হয়ে পড়ছে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গোপন ক্যাসিনো ও বিট জুয়া ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, ক্যাসিনোর  সঙ্গে যুবকরা দীর্ঘ সময় খরচ করছে, এতে শিক্ষাজীবন ও কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রভাবিত যুবকরা ঋণ, মানসিক চাপ ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতার শিকার হচ্ছে। অনেক সময় সবকিছু হারিয়ে আত্বহত্যার পথও বেছে নিচ্ছেন যুবকেরা।

 

সরেজমিনে জানা গেছে, এ ক্যাসিনো জুয়ার মূল হোতা উপজেলার ভুল্ল্যারহাট সব বাজারে।  এরাই পুরো উপজেলা জুড়ে জুয়া  পরিচালনা করছে । এ জুয়ার মাধ্যমে ক্যাসিনোর মূল হোতা কয়েকশ কোটি টাকার মালিক বনে গেলেও নিঃশ্ব হয়ে পড়েছে যুবসমাজ। এদের এ জুয়ার এজেন্ট ছড়িয়ে পড়েছে তুষভান্ডার, কাকিনা, চাপারহাট, দলগ্রামের সোনামারী বাজার, ভোটমারী, ভুল্লারহাট হাজরানিয়া, কালীগঞ্জ বাজার  সহ পুরো উপজেলায়।  এসকল অবৈধ জুয়ার টাকা লেনদেন হচ্ছে উপজেলার এজেন্ট ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে।

স্থানীয়দের মতে ক্যাসিনো খেলে সবর্শান্ত হয়ে গতকাল সাইফুল নামের এক যুবক আত্বহত্যা করেছে বলে জানা গেছে।

 

স্থানীয় স্কুল ও কলেজের শিক্ষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, “পড়াশোনা ও খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ কমছে, এবং যুবসমাজের সময় অনৈতিক কাজে ব্যয় হচ্ছে।” একাংশ অভিভাবক অভিযোগ করেছেন যে, তাদের সন্তানরা জুয়ার প্রলুব্ধতায় পড়ছে এবং পরিবারিক জীবনে এ জুয়ার টাকার জন্য অশান্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছোট থেকে বড় সব শ্রেনীর মানুষের মাঝে ঝড়িয়ে পড়েছে এ ক্যাসিনো জুয়ার আসক্তি। কোটিপতি হচ্ছে ভুল্লারহাটের জুয়া মাফিয়ারা আর সর্বশান্ত  হচ্ছে হাজার হাজার পরিবার।

 

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক নাককাটির ডাঙ্গা এলাকার এক কলেজ পড়ুয়া যুবক জানান, আমি এ জুয়ার নেশায় ১০ লক্ষ টাকা নস্ট করেছি এখন আমার পরিবার নিঃস্ব। কালীগঞ্জ বাজারের একজন যুবক বলেন, আমি এ ক্যাসিনো জুয়ার ফাঁদে পড়ে ১৫ লক্ষ টাকা দেনাগ্রস্ত হয়েছি।  এখন আমি নিঃশ্ব। প্রতিনিয়ত টাকার জন্য পাওনাদাররা আসছে আমি আমার বাবার পৈত্তিক শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করছি। তার অভিযোগ প্রশাসনের লোকজন উপর হতে নিচ পর্যর্ন্ত এ জুয়ার গডফাদারের নিকট হতে উৎকোচ বা ঘুষ নিয়ে থাকে। তাই তেমন কিছু হয় না।

 

ভুল্ল্যারহাট এলাকার একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, কি আর কং বাহে, এ জুয়া খেলি হামার এটে একনা ছোয়া বাহে শত কোটি টাকার মালিক হইছে। এইতো সেদিন ৩৩ কোটি টাকা দিয়া জমি নিল বাহে। আরো শোনং এলা নাকি একটা কোল্ডস্টোর দিবে। হামার মত গরীবের রক্ত চুষে ওমরা বাহে কোটিয়াল।  কয়দিনের কথা বাহে,, সেদিনই ছোয়া কোনার কিছু আছিল না।

 

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, জুয়ার আসক্তি মানসিক ও সামাজিক সমস্যা তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তারা পরামর্শ দিচ্ছেন, পরিবার ও শিক্ষকরা যুবসমাজের সঙ্গে নিয়মিত সময় কাটান, ইতিবাচক শখ ও প্রতিযোগিতামূলক খেলা চালু রাখার মাধ্যমে জুয়ার প্রতি আসক্তি কমানো সম্ভব। এছাড়া, সচেতনতা কর্মশালা, মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা ও পরামর্শকেন্দ্র স্থাপন করার কথা জানান তারা।

 

পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানা গেছে, বেশ কিছু অভিযান চালানো হয়েছে, কিন্তু অবৈধ ক্যাসিনো ও জুয়ার নেটওয়ার্ক এখনও পুরোপুরি দমন হয়নি।

 

 সমাজসেবী সংস্থাগুলোও মতে, এ ক্যাসিনো ও অনলাইন বিট জুয়ার বিরুদ্ধে  নিয়মিত ক্যাম্পেইন পরিচালনা, জুয়ার কুফল ও আইনগত শাস্তি সম্পর্কে সেমিনার, অভিভাবকদের মাঝে সচেতনতা তৈরী সহ সেচ্ছাসেবী সংগঠন নিয়ে প্রতিরোধ কমিটি গঠনের মাধ্যমে এ জুয়া নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন তারা।

ট্যাক

কালীগঞ্জে জুয়ার ভয়াবহ থাবায়, বিপন্ন যুবসমাজ

আপডেট সময় ০৬:৪৩:২৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

 কালীগঞ্জ,( লালমনিরহাট) প্রতিনিধি-

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় ক্যাসিনো ও অবৈধ জুয়ার ছোবলে যুবসমাজ দিন দিন শিকড়বিহীন হয়ে পড়ছে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গোপন ক্যাসিনো ও বিট জুয়া ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, ক্যাসিনোর  সঙ্গে যুবকরা দীর্ঘ সময় খরচ করছে, এতে শিক্ষাজীবন ও কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রভাবিত যুবকরা ঋণ, মানসিক চাপ ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতার শিকার হচ্ছে। অনেক সময় সবকিছু হারিয়ে আত্বহত্যার পথও বেছে নিচ্ছেন যুবকেরা।

 

সরেজমিনে জানা গেছে, এ ক্যাসিনো জুয়ার মূল হোতা উপজেলার ভুল্ল্যারহাট সব বাজারে।  এরাই পুরো উপজেলা জুড়ে জুয়া  পরিচালনা করছে । এ জুয়ার মাধ্যমে ক্যাসিনোর মূল হোতা কয়েকশ কোটি টাকার মালিক বনে গেলেও নিঃশ্ব হয়ে পড়েছে যুবসমাজ। এদের এ জুয়ার এজেন্ট ছড়িয়ে পড়েছে তুষভান্ডার, কাকিনা, চাপারহাট, দলগ্রামের সোনামারী বাজার, ভোটমারী, ভুল্লারহাট হাজরানিয়া, কালীগঞ্জ বাজার  সহ পুরো উপজেলায়।  এসকল অবৈধ জুয়ার টাকা লেনদেন হচ্ছে উপজেলার এজেন্ট ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে।

স্থানীয়দের মতে ক্যাসিনো খেলে সবর্শান্ত হয়ে গতকাল সাইফুল নামের এক যুবক আত্বহত্যা করেছে বলে জানা গেছে।

 

স্থানীয় স্কুল ও কলেজের শিক্ষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, “পড়াশোনা ও খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ কমছে, এবং যুবসমাজের সময় অনৈতিক কাজে ব্যয় হচ্ছে।” একাংশ অভিভাবক অভিযোগ করেছেন যে, তাদের সন্তানরা জুয়ার প্রলুব্ধতায় পড়ছে এবং পরিবারিক জীবনে এ জুয়ার টাকার জন্য অশান্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছোট থেকে বড় সব শ্রেনীর মানুষের মাঝে ঝড়িয়ে পড়েছে এ ক্যাসিনো জুয়ার আসক্তি। কোটিপতি হচ্ছে ভুল্লারহাটের জুয়া মাফিয়ারা আর সর্বশান্ত  হচ্ছে হাজার হাজার পরিবার।

 

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক নাককাটির ডাঙ্গা এলাকার এক কলেজ পড়ুয়া যুবক জানান, আমি এ জুয়ার নেশায় ১০ লক্ষ টাকা নস্ট করেছি এখন আমার পরিবার নিঃস্ব। কালীগঞ্জ বাজারের একজন যুবক বলেন, আমি এ ক্যাসিনো জুয়ার ফাঁদে পড়ে ১৫ লক্ষ টাকা দেনাগ্রস্ত হয়েছি।  এখন আমি নিঃশ্ব। প্রতিনিয়ত টাকার জন্য পাওনাদাররা আসছে আমি আমার বাবার পৈত্তিক শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করছি। তার অভিযোগ প্রশাসনের লোকজন উপর হতে নিচ পর্যর্ন্ত এ জুয়ার গডফাদারের নিকট হতে উৎকোচ বা ঘুষ নিয়ে থাকে। তাই তেমন কিছু হয় না।

 

ভুল্ল্যারহাট এলাকার একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, কি আর কং বাহে, এ জুয়া খেলি হামার এটে একনা ছোয়া বাহে শত কোটি টাকার মালিক হইছে। এইতো সেদিন ৩৩ কোটি টাকা দিয়া জমি নিল বাহে। আরো শোনং এলা নাকি একটা কোল্ডস্টোর দিবে। হামার মত গরীবের রক্ত চুষে ওমরা বাহে কোটিয়াল।  কয়দিনের কথা বাহে,, সেদিনই ছোয়া কোনার কিছু আছিল না।

 

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, জুয়ার আসক্তি মানসিক ও সামাজিক সমস্যা তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তারা পরামর্শ দিচ্ছেন, পরিবার ও শিক্ষকরা যুবসমাজের সঙ্গে নিয়মিত সময় কাটান, ইতিবাচক শখ ও প্রতিযোগিতামূলক খেলা চালু রাখার মাধ্যমে জুয়ার প্রতি আসক্তি কমানো সম্ভব। এছাড়া, সচেতনতা কর্মশালা, মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা ও পরামর্শকেন্দ্র স্থাপন করার কথা জানান তারা।

 

পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানা গেছে, বেশ কিছু অভিযান চালানো হয়েছে, কিন্তু অবৈধ ক্যাসিনো ও জুয়ার নেটওয়ার্ক এখনও পুরোপুরি দমন হয়নি।

 

 সমাজসেবী সংস্থাগুলোও মতে, এ ক্যাসিনো ও অনলাইন বিট জুয়ার বিরুদ্ধে  নিয়মিত ক্যাম্পেইন পরিচালনা, জুয়ার কুফল ও আইনগত শাস্তি সম্পর্কে সেমিনার, অভিভাবকদের মাঝে সচেতনতা তৈরী সহ সেচ্ছাসেবী সংগঠন নিয়ে প্রতিরোধ কমিটি গঠনের মাধ্যমে এ জুয়া নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন তারা।