“বাবার চোখে বিসিএস দেখেছিলাম, নিজের চোখে সফলতা” — বিমান সরকার


dailymukti24 প্রকাশের সময় : জুলাই ৩১, ২০২৫, ৭:০৮ অপরাহ্ন /
“বাবার চোখে বিসিএস দেখেছিলাম, নিজের চোখে সফলতা” — বিমান সরকার

 চরফ্যাসন, ভোলা |

হাওরের ছেলে থেকে বিসিএস ক্যাডার
নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত শ্যামপুর গ্রামে জন্ম বিমান সরকারের। ছোটবেলায় মন ছিল খেলাধুলা আর দুষ্টুমিতে। প্রাথমিক শেষে বাবা-মা তাঁকে মামাবাড়িতে পাঠান পড়াশোনায় মনোযোগী করার জন্য। দাদা-দিদির শাসন ও স্নেহে ধীরে ধীরে পড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়।

সংগ্রামের শুরু
২০১২ সালে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পাস করে জিপিএ-৫ পান বিমান। পরে সিলেট সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিতে ৪.৯০ জিপিএ। পরিবারের অবস্থা ভালো না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই টিউশনি করে নিজের খরচ চালান।

ঢাবি, জবি, জাবি, শাবিপ্রবিসহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষ থেকেই বিসিএসকে লক্ষ্য করেন। কোচিং না করেও লাইব্রেরিতে নিয়মিত পড়াশোনা, পত্রিকা পাঠ, মডেল টেস্ট—সবই চলতে থাকে।

বাবার স্বপ্ন, ছেলের সাফল্য
বিমান জানান, “বাবা শিক্ষক ছিলেন। তাঁর কাছ থেকেই প্রথম বিসিএসের কথা শুনি। বাবা বলতেন—শিক্ষকতা শুধু চাকরি নয়, এটা দায়িত্ব। ২০১৮ সালে বাবা মারা যান। সেই শোককে শক্তিতে পরিণত করেছি। আজকের অবস্থানে আসতে বাবার স্বপ্নই আমাকে পথ দেখিয়েছে।”

প্রথম চেষ্টাতেই জয়
বিশ্ববিদ্যালয় শেষে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। কিন্তু লক্ষ্য ছিল বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার। কয়েকটি ব্যাংকের চাকরির সুযোগ পেলেও ভাইভা দেননি—কারণ পছন্দ ছিল শিক্ষকতা।

৪৩তম বিসিএস ছিল জীবনের প্রথম পরীক্ষা। প্রথম চেষ্টাতেই শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। “ভাইভার দিন খুব স্বাভাবিকভাবে কথা বলেছিলাম। বোর্ড বুঝতে পেরেছিল, আমি এই পেশাটিকে ভালোবাসি,” বলেন বিমান।

সফলতার মন্ত্র
বিসিএসপ্রত্যাশীদের উদ্দেশ্যে বিমান বলেন, “বিসিএস শর্টকার্ট দিয়ে হয় না। গভীরভাবে অধ্যয়ন করতে হবে। পড়াকে উপভোগ করতে হবে। নিয়মিত পত্রিকা পড়ুন, সাহিত্যে ডুব দিন, বিষয়ভিত্তিক গভীরতা গড়ে তুলুন। আত্মবিশ্বাস আর ধৈর্য থাকলে পথ সহজ হয়।”

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বর্তমানে চরফ্যাসন সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক বিমান শিক্ষকতা পেশায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ ও পররাষ্ট্র ক্যাডারে যাওয়ারও ইচ্ছা রয়েছে। “আমার স্বপ্ন—এমন শিক্ষক হওয়া, যিনি ছাত্রদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবেন,” বললেন তিনি।