রাজনীতিতে আবারও এক-এগারোর আলামত?


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় : জুন ১৬, ২০২৩, ৬:১৪ অপরাহ্ণ /
রাজনীতিতে আবারও এক-এগারোর আলামত?

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি দিন দিন ক্রমশ ঘোলাটে হয়ে উঠছে। কেউ কেউ মনে করছে আবার একটি এক-এগারো আগমনের আলামত ক্রমশ দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। যদিও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল বলেছেন যে, এক-এগারো আনার চেষ্টা সফল হবে না, ব্যর্থ হয়ে যাবে। তিনি সফল ব্যর্থতার কথা যাই বলুক না কেন, এক-এগারো আনার যে একটি প্রক্রিয়া দৃশমান সেটি তিনি প্রকারন্তরে স্বীকার করে নিয়েছেন।

এক-এগারোরর আগে যে লক্ষণ এবং আলামতগুলো বাংলাদেশে ২০০৭ সালে যে দেখা গিয়েছিলো তার সবগুলো লক্ষণ আস্তে আস্তে ফুটে উঠছে।

১। কুটনৈতিকদের তৎপরতা: এক-এগারের আগে কুটনৈতিকদের যে তৎপরতা ছিল দৃষ্টিকটু পর্যায়। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন, গণতন্ত্র ইত্যাদি নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের হস্তক্ষেপ করেছিল। তারা বৈঠকের পর বৈঠক করত, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমঝেতার নামে রাজনৈতিক পরার্মশ করতো এবং এখনকার প্রাপ্ত দলিলপত্রগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ কয়েকটি দেশ এক-এগারো আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছিলো। বাংলাদেশে এখনো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো তৎপর। বাংলাদেশে গনতন্ত্র, সুশাসন, মানবধকিার ইত্যাদি ইস্যু নিয়ে সোচ্চার। কাজেই তারা কি বাংলাদেশে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় নাকি এক-এগারোর মত অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনতে চায়, সেই প্রশ্ন এখন বড় করে সামনে এসেছে।

২। রাজনৈতিক বিভেদ: এক-এগারো আসার একটি অন্যতম প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি’র মধ্যে বিভেদের কারণে। দুটি দল সমঝোতার বাইরে চলে গিয়েছিল। সহিংসতা জ্বালাও-পোড়াও এমন এক পরিস্থিতিতে গিয়েছিল যে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। আর এ কারণেই তারা এক-এগারোকে স্বাগত জানিয়েছিল।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন আস্তে আস্তে অস্থিতিশীল অবস্থায় যাচ্ছে। বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে একদফা আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে এবং এক দফা আদায় ছাড়া তারা আর নির্বাচনে যাবে না এমন ঘোষণাও দিচ্ছে। খুব শীঘ্রই তারা সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরণের আন্দোলন করবে এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। এরকম একটি পরিস্থিতি তৈরি হলে যদি রাজনীতিতে আবার সন্ত্রাস সহিংসতা ইত্যাদি বেড়ে যায় তাহলে সেরকম একটি পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে অনেকেই ধারণা করছে।

৩। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ সংকটসহ অসহনীয় পরিস্থিতি: বিএনপি সরকারের শাসনামলের শেষ দিকে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি, বিদ্যুৎ পরিস্থিতি অসহনীয় পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। জনগণ আস্তে আস্তে বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছিল এবং সরকারের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল। সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যুৎ দ্রব্যমূল্য অর্থনৈতিক সংকট ইত্যাদি পরিস্থিতিতে গত ১৪ বছরে সরকার যা কিছু অর্জন করেছিল তা ক্রমশ ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্য ও বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে জনগণ এখন প্রকাশ্যে মুখ খুলছে। এরকম পরিস্থিতি একটি অগণতান্ত্রিক সরকার আসার প্রেক্ষাপট তৈরি করে বলে কোন কোন মহল মনে করে।

৪। প্রশাসনের রহস্যময় ভূমিকা: এক-এগারো আসার ক্ষেত্রে প্রশাসনের ভূমিকা ছিল রহস্যময় রবং প্রশ্নবিদ্ধ। এখনও প্রশাসন আস্তে আস্তে তথাকথিত নিরপেক্ষ অবস্থানের নামে রহস্যময় অবস্থানে চলে যাচ্ছে। এই লক্ষণও ভাল নয় বলে অনেকেই মনে করছেন।

৫। সেনাবাহিনীর ভূমিকা: এক-এগারো আনার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ড. ফখরুদ্দীন আহমেদের সরকার ছিল সেনাসমর্থিত একটি সরকার। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এখন সেই অবস্থান থেকে অনেক পেশাদারিত্ব গ্রহণ করেছে। সেনাবাহিনী এখন আন্তর্জাতিক এবং বিশ্বমানের পেশাদারিত্ব অর্জন করেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময় সেনাবাহিনীকেও টার্গেট করা হয়েছে। শান্তি মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু করেছে এবং এই প্রশ্নতোলাকে অনেকেই এক-এগারো আনার একটি ভিন্ন অপচেষ্টা বলে মনে করছেন। কারণ ২০০৭ সালের এক-এগারো আসার ক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ সংক্রান্ত একটি বার্তা প্রচার করা হয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সদস্যদের নেয়ার ক্ষেত্রে তাদের অতীত রেকর্ড, মানবাধিকার কর্মকান্ড যাচাই করার যে অনুরোধ জানিয়েছে তা ঔদ্ধত্যপূর্ণ এবং প্ররোচনামূলক বলেই অনেকে মনে করছে। সবকিছু মিলিয়ে একটি মহল বাংলাদেশে আরেকটি এক-এগারো আনার চেষ্টা করছে বলেই কেউ কেউ মনে করেন।

তবে সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন বাংলাদেশে এক-এগারো আনার ক্ষেত্রে বাস্তব ভিত্তি নেই তিনিটি কারণে।

প্রথমত, আমাদের সংবিধানে এখন অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতা গ্রহণের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এখন আর নেই।

দ্বিতীয়ত, আমাদের সেনাবাহিনী এখন অনেক বেশি পেশাদার এবং তারা এ ধরণের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষের দিকে কখনোই যাবে না।

তৃতীয়ত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা এবং সুগভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এ ধরণের পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারবে।

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com