কালীগঞ্জে লকডাউনে প্রশাসনের কড়াকড়িতে ঘরবন্দি মানুষ 


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় : জুলাই ৩, ২০২১, ২:৩৭ অপরাহ্ণ /
কালীগঞ্জে লকডাউনে প্রশাসনের কড়াকড়িতে ঘরবন্দি মানুষ 

নিজস্ব প্রতিবেদক- গত ১লা জুলাই থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে ৭ দিনের  লকডাউন ও কঠোর বিধি নিষেধ। তবে লকডাউনের তৃতীয় দিনেও  প্রশাসনের কড়াকড়ি, বিধিনিষেধ অমান‌্যকারীদের জরিমানা আর পর্যাপ্ত টহল ও কঠোর নজরদারি এবং কিছুটা বৃষ্টিতে ঘরবন্দি পড়েছেন মানুষ। 

৩রা জুলাই ( শনিবার) লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার সকল হাট-বাজার ঘুরে এবারের বিধিনিষেধ ও ঘোষিত ৭ দিনের লকডাউনে তেমন জনসাধারণের উপস্থিতি  ও দোকানপাট খুলতে দেখা যায়নি। তবে পাড়া-মহল্লার ভেতরে  ছোট ছোট  দোকান গুলো বন্ধ  রাখা চোঁখে পড়েনি। তবে এবারে এসব পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতেও জনসাধারণের সমাগম তেমন দেখা যায়নি।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, লকডাউন এর প্রথম দিনে কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে   ২৮টি মামলায় ২৭ হাজার ৭ শত টাকা  দ্বিতীয় দিনে ১১ টি মামলায় ১০ হাজার ৫ শত টাকা জরিমানা প্রদান করেন।  লকডাউনের আজ তৃতীয় দিনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে। 

লকডাউন ও বিধিনিষেধের তৃতীয় দিনেও  কালিগঞ্জ থানা পুলিশের বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট, উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ মোবাইল কোর্ট  ও বিজিবির টহল  অব্যাহত রয়েছে। লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কে  তেমন কোনো গাড়ি-ঘোড়া চলাচল করতে দেখা যায়নি তবে পণ্যবাহী গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স ও বিচ্ছিন্নভাবে কিছু প্রাইভেট কার,   অটো রিস্কা চলাচল করতে দেখা গেছে। মানুষকে  ঘরমুখো রাখতে ট্রাফিক পুলিশ বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে রুটে চলাচল রত  গাড়ির কাগজপত্র  সঠিক আছে কিনা  তা দেখতে চেকপোস্ট বসিয়েছেন।  এর ফলে রাস্তায় গাড়ি কম  সংখ‌্যক বের হচ্ছে। 

গতকাল ( শুক্রবার) উপজেলার সবচেয়ে একটি বড় হাট চাপারহাটে কোন প্রকার হাট বসেনি। লোকজনের উপস্থিতি ছিল অতি নগণ্য। লকডাউনে ৩য় দিনেও কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন এর তৃতীয় দিনেও মহাসড়কসহ উপজেলা অন্যান্য রাস্তাগুলো ছিল ফাঁকা।   প্রশাসনের কড়াকড়ি  নজরদারির কারণে  বিনা কারণে কেউ ঘর থেকে বের হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আবার ঘরের বাইরে বের হওয়ার বিষয়ে সন্তোষজনক  জবাব তাকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।  অন্যান্য দিনগুলোর মতো লকডাউনের এই সময়ে  মোটরসাইকেলের দৌরাত্ম্য কম লক্ষ করা গেছে। তবে  কিছু রিক্সা চলাচল করতে দেখা গেছে।

দুশ্চিন্তায় রিকশাচালকরা : কঠোর লকডাউনে রাস্তায় যাত্রী না থাকলেও রিকশা নিয়ে বেরিয়েছেন ময়মুল।  তিনি বললেন, লকডাউন ‘বৃষ্টি-বাদল কথা না, রিকশা না চালাইলে খামু কী? শনিবার সকালে  উপজেলার তুষভান্ডার বাজারে ময়মুলের মতো  এরকম আরো অনেক রিকশা চালককে দেখা গেল, যারা রাস্তায় বেরিয়েছেন পেটের দায়ে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে সারাদেশে লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ দিয়েছে সরকার। অফিস-আদালত, গণপরিবহণ, শপিংমলসহ সবকিছুই বন্ধ। তবে রিকশা চলার অনুমতি আছে। লকডাউনে এমনিতেই রাস্তা-ঘাট ফাঁকা। তার ওপর ছুটির দিন, আবার  বৃষ্টিতে লোকজন ঘর থেকে বের হচ্ছে না।  রাস্তায় মানুষের চলাচল নেই, কাঁচা বাজারেও নেই ভিড়।  ময়মুল বলেন, হেই ভোরে বেরইছি, যাত্রী পাই না। তিন বার বৃষ্টিতে ভিজছি। দুইটা ক্ষ্যাপে ৬০ টাকা পাইছি। দুপুর পর্যন্ত এইটা কামাই। কন খামু কি? নিজের বউ-পোলা নিয়ে চলমু কেমনে? করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির কথা বলায় ময়মুল যেন খনিকটা বিস্মিত হলেন।  বলেন আমাগো… করোনা হয় না, জ্বর হয় না, আমাগো স্টিল বডি। এই ভাইরাস এই শরীরে বেশিক্ষণ বাঁচতে পারে না, মইরা যায়। লকডাউনে যাত্রী পাওয়া ‘ভাগ্যের ব্যাপার’। রিকশায় যাত্রী দেখলেই পুলিশ থামায়, জিজ্ঞেস করে কই থেকে, কেন। সেইজন্য অনেকে রিকশায় উঠতে চায় না। -স্ত্রী- সন্তান কে নিয়ে ৭ জনের সংসার কীভাবে চালাবেন তা নিয়েই তার দুশ্চিন্তা।

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com