বর্ষা মৌসুমে ভাঙ্গে শুস্ক মৌসুমে বালুচর তিস্তা ও ধরলা


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় : জুলাই ৫, ২০২২, ৯:৫০ অপরাহ্ণ /
বর্ষা মৌসুমে ভাঙ্গে শুস্ক মৌসুমে বালুচর তিস্তা ও ধরলা

লালমনিরহাট জেলায় ছোট বড় নদীর সংখ্যা ১৭ টি।এর মধ্যে ধরলা-তিস্তাই প্রধান নদী।নদী দুটির প্রভাব রয়েছে স্থানীয় ও জাতীয় এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে।এই নদী কেন্ত্রীক জীবন বেঁচে থাকে।জীবন বিপন্ন হয়।নদীর তলদেশ ভরাট হতে হতে এখন নদীর সঙাই পরিবর্তন হতে চলেছে।শুষ্কতায় যেমন সবুজে শ্যামল।আবার প্রতিনিয়ত ভয় থাকে,কখন কি হয়!শুষ্ক মৌসুমে একেবারেই জলহীন বালুচর,অপর দিকে হঠাৎ বানে সব ধ্বংস হয়ে যায়।

এবার লালমনিরহাটে ২য় দফার বন্যা চলছে।এতে ভেঙে গেছে জনজীবনের সব কিছু।নুন্যতম জীবন মানের প্রতিষ্ঠা পায়নি,টিকিয়েও রাখা যায়নি।পৌঁছায়নি পর্যাপ্ত ত্রাণ,চিকিৎসা সেবা,পশু চিকিৎসা,জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের কোনো সেবা।

চর ফলিমারি,বোয়ালমারি,গোবর্ধন,চর খুটামানা,খাটটামারি, চর ওসমানীনগর,চর খুনিয়াগাছ,শৌলমারী,চরইচলি,সহ বেশ কিছু চরের সরেজমিন চিত্র প্রচণ্ড ভয়ানক।এসব চরের ঘরবাড়ির ভিতর দিয়ে স্রোত যাচ্ছে।কোনো কোনো বাড়ির চতুর্দিকে পানি।গৃহবন্দি মানুষ।খাবার নেই ঘরে।সারাদিনে একবার খাবার রান্না করছেন কেউ,চৌকির ওপর বসানো অস্থায়ী চুলায়।অধিকাংশ বাড়িতে পুরুষ মানুষ নাই।সকালে বেড়িয়ে গেছেন হাটে বাজারে।ফিরবেন একবারই।রাতের বেলা।সারাদিনে একবারই ফিরেন তারা।জলবন্ধি আর অর্ধাহারে থাকে নারী ও শিশু।তাদের যাবার জায়গা নেই।তিনবার চারবার পরনের কাপড় বদলাতে হয়।বারবার ভেজা কাপড় পরিধান করে শরীরে হয়েছে চুলাকানি(স্কাবিকস),দাত,সহ ফাঙাস সহ পানিবাহিত রোগ। মাঝিরা শ্যালো চালিত নৌকা নিয়ে মাঝ নদীতে বারবার যাচ্ছেন,বানে ভেসে আসা ছোট কাঠ,আধাপাকা ফসল,কলার ঝুকি উদ্ধারে।কোনোটা নেয়ার মত,কোনোটা পশু খাদ্যও নয়।সামান্য উচু জায়গায় সমন্নিত ভাবে রাখা হয়েছে গরু,ছাগল,হাসমুরগি।এসব প্রাণিরও খাবার নেই।

ইউনিয়ন পরিষদ ও সরেজমিন তথ্য মতে,বন্যার পানি বাড়লে লালমনিরহাট সদরের ৬ ইউনিয়ন,খুনিয়াগাছ,রাজপুর,গোকুন্ডা,কুলাঘাট,বড়বাড়ী,মোগলহাট।আদিতমারীর উপজেলায় দুর্গাপুর,পলাশীর কিছু অংশ,মহিষখোচা।

কালিগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার, কাকিনা,ভোটমারি।পাটগ্রামে উপজেলার শ্রীরামপুর,পাটগ্রাম,বুড়িমারী,কুচলিবাড়ী,জগৎবেড়,জোংড়া,বাউরা।হাতিবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি সিন্দুর্না,গড্ডিমারি,বড়খাতা,সানিয়াজান ইনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়।

লালমনিরহাট সদরের শিবেরকুটি গ্রামের শহর রক্ষা বাঁধে ফাঁটল দেখা দিয়েছে।এতে নির্ঘুম রাত কাটে কয়েক হাজার পরিবারের।

২৯ জুন বিকালে বাঁধটিতে ধরলার স্রোতের টানে ফাটল দেখা দেয়।ধরলা সেতু থেকে মোগলহাট ইউনিয়নের ১০ কিলো বাঁধটি ভাঙলে লালমনিরহাট শহর প্লাবিত হবে বলে জানান এলাকাবাসী।

২৯ জুন রাত ১১. ২৫ মিনিটে ফাটল এলাকায় দেখা মেলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্য়সহকারি আরমান সরকার,তাজুল ইসলাম।এলএমএসএস ফরিদ আলীর।তারা জানান,বাঁধটি শহর রক্ষা বাঁধ নামেই পরিচিত।এটা শহর রক্ষা বা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ বলে।বাঁধটি ফাটল দেখা দিলে আমরা কাজ শুরু করি।যতগুলো বালির বস্তা লাগবে,তত গুলো ফেলা হচ্ছে।বিকালে সিপিএস হওয়ার আশঙ্কা ছিলো।এখন আর সমস্যা হবেনা।

 

কিছুদিন আগে একটা বন্যা হয়ে গেছে।অনেক মানুষ না খেয়ে আছে।এখন পানি অনেকের বাড়িতে।চলাচল করা খুব কঠিন।

পেনসিল বেগম (৭৫)রান্নাবান্না করা খুব কষ্ট।কোনো ডাক্তার কবিরাজ নাই।সরকারি কোনো ডাক্তার নাই।পশুপাখির কোনো ডাক্তার নাই।ল্যাট্রিন নাই।মেয়ে মানুষের খুব কষ্ট।

চৌকির ওপর রান্না করা রুবিনা বেগম (৩৫) বলেন,রোগ ব্যাথি হচ্ছে।সরকারি কোনো ডাক্তার নাই।একটা স্যালাইন পর্যন্ত নাই।দুইটা বাচ্চা নিয়া দুই দিন থেকে ভাত খাইনা।কেবল আলু ভর্তা ভাত চড়িয়েছি।

ঈমান আলী (৯০) বলেন,স্যালাইনের কোনো খবর নাই।গরুছাগলের কোনো ডাক্তার নাই।কি ভাবে মানুষের জীবন কাটবে।গদির ওপর বসি থাকলে হবেনা।মানুষ ঘরবন্দি।তিনদিন থেকে মানুষ গুলা না খেয়ে।

মোগলহাট ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন,মোগলহাটের ধরলা অববাহিকা এবং মেইনল্যান্ডে ২০০০ পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। ইউনিয়নের ছোট ছোট কালভার্টের মুখ বন্ধ করা,পানি বন্দির একটি কারণ।ওসমানগণীর চর,খাটামারি চর, চর ফলিমাড়ীর,সহ অনেক চরে পানি বন্দি রয়েছে।এযাবৎ ১০টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। এদফার বন্যার কারণে আবার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৈধুরি তার নিজ ইউনিয়নে ৫হাজার পরিবার পানি বন্দী আছেন বলে জানান।

জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার (ত্রান ও দুর্যোগ)নাজিয়া নওরীন বলেন,আমরা প্রতিনিয়ত ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছি।এ পর্যন্ত ৪২৩.৬ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।১২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা।

৩৫০ মেট্রিকটন চালের বরাদ্দ পৌছায়নি।

সিভিল সার্জন ডাঃ নির্মলেন্দু রায়,স্বাস্থ বিষয়ে গণমাধ্যম সাথে কথা বলতে চাননি।

লালমনিরহাট পানিউন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন,দুই নদীর পানি বৃদ্ধির কারণ হিসাবে কালিংপং,দার্জিলিং,গ্যাংটকের ভাড়ি বৃষ্টিপাত।এর সাথে স্থানীয় বৃষ্টিপাতও রয়েছে।এসব এলাকায় ভাড়ি বৃষ্টিপাত না হলে,দুই নদীর পানি বৃদ্ধি পায়না।

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com