দেশে ভয়াবহ রুপে করোনা একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু-১৬৪


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় : জুলাই ৬, ২০২১, ৩:১৪ অপরাহ্ণ /
দেশে ভয়াবহ রুপে করোনা একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু-১৬৪

বিশেষ প্রতিনিধি

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমনের দ্বিতীয় ঢেউ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। গত 24 ঘন্টায় সারাদেশে একদিনে ১৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। দেশের কয়েকটি জেলায় ইতোমধ্যে আইসিইউ ও অক্সিজেনের অভাবে রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, দেশে অক্সিজেন সরবরাহে কোনো সংকট নেই। প্রয়োজনের তুলনায় দেশে বেশি পরিমাণ অক্সিজেন উৎপাদিত হচ্ছে। 

সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ না মানা এবং স্বাস্থ্যবিধি পালনে উদাসীনতার কারণেই করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে বেগ পেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। 

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ১৬৪ মৃত্যু, শনাক্তও সর্বোচ্চ। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৬৪ জন, যা দেশে মহামারীকালে একদিনে সর্বোচ্চ। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৯৬৪ জন। একদিনে দৈনিক শনাক্তের এত সংখ্যা এর আগে দেখেনি বাংলাদেশ। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬৪ জনকে নিয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেলেন ১৫ হাজার ২২৯ জন। এর আগে গত রোববার মারা যান ১৫৩ জন, যা গতকাল পর্যন্ত সর্বোচ্চ ছিল। একদিনের ব্যবধানে আগের রেকর্ড ভেঙে মৃত্যুতে নতুন রেকর্ড হলো দেশে। এর আগে ৩ জুলাই ১৩৪ জন, ২ জুলাই ১৩২ জন মারা যান। ১ জুলাই মারা যান ১৪৩ জন। তারও আগে ৩০ জুন ১১৫ জন, ২৯ জুন ১১২ জন, ২৮ জুন ১০৪ জন এবং ২৭ জুন মারা যান ১১৯ জন। এ নিয়ে টানা ৯ দিন ধরে দৈনিক মৃত্যু একশ ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আরো বলা হয়, নতুন শনাক্ত হওয়া ৯ হাজার ৯৬৪ জনকে নিয়ে এখন পর্যন্ত সরকারি হিসাবে শনাক্ত হলেন ৯ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮১ জন। এর মধ্য দিয়ে দেশে করোনায় শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৯ লাখ ছাড়িয়ে গেল। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন পাঁচ হাজার ১৮৫ জন। তাদের নিয়ে এখন পর্যন্ত সুস্থ হলেন আট লাখ ৩৯ হাজার ৮২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৩০ শতাংশ, এখন পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার এক দশমিক ৫৯ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার নমুনা সংগৃহীত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪২টি, আর নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৪ হাজার দুটি। দেশে এখন পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৬৭ লাখ ৫৭ হাজার ৫৬২টি। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা করা হয়েছে ৪৯ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৭টি এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৮ লাখ ২০ হাজার ২৬৫টি। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১৬৪ জনের মধ্যে পুরুষ ১০৯ জন, আর নারী ৫৫ জন। এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে পুরুষ মারা গেলেন ১০ হাজার ৭৮৫ জন এবং নারী চার হাজার ৪৪৪ জন।

বয়স বিবেচনায় ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব রয়েছেন ৮৩ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৪৭ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১৮ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১২ জন এবং ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে চারজন। বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে তাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ৪০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১৮ জন, রাজশাহী বিভাগের ১৬ জন, খুলনা বিভাগের ৫৫ জন, বরিশাল বিভাগের ৯ জন, সিলেট বিভাগের আটজন, রংপুর বিভাগের ১৬ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগের মারা গেছেন দুইজন। ১৬৪ জনের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন ১২৩ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ২৫ জন এবং বাড়িতে ১৫ জন। হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে একজনকে। এদিকে, গত সাতদিন ধরে সারাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা ১০০ জনের ওপর অবস্থান করছে। ২৭ জুন দেশে মোট ১১৯ জনের মৃত্যু হয়। ২৮ জুন মৃত্যু কিছুটা কমে দাঁড়ায় ১০৪ জনে। ২৯ জুন মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ১১২ জন। ৩০ জুন মোট ১১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১ জুলাই দেশে সর্বোচ্চ ১৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২ জুলাই করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১৩২ জনের। ৩ জুলাই এই সংখ্যা ছিল ১৩৪। গত রোববার দেশে সর্বোচ্চ ১৫৩ জনের মৃত্যু ঘটেছে। যা এখন পর্যন্ত দেশে সর্বোচ্চ। অর্থাৎ প্রতিদিনই আশঙ্কাজনক হারে মৃত্যু ঘটছে। এছাড়া সারাদেশে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও কম নয়।

করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, করোনা রোগীকে অক্সিজেনের সাপোর্ট দিতে অধিকাংশ হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। রাতারাতি সবকিছু পাল্টে দেয়া সম্ভব নয়। বিশ্বব্যাপী সব দেশ একটি ভয়ানক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের যেসব সামগ্রীর প্রয়োজন, সেগুলো অন্যান্য দেশেরও প্রয়োজন। সুতরাং সব সময় চাহিদা অনুযায়ী দ্রুততার সঙ্গে চিকিৎসা সামগ্রী পাওয়া যায় না। এর পরও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ধাপে ধাপে জেলাগুলোতে আইসিইউ, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলাসহ সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপন করা হবে।স্বাস্থ অধিদফতরের মুখপাত্র ডা. রোবেদ আমিন বলেন, সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ মানতে আরো উদাসীন হলে সংক্রমণ বাড়তে বাড়তে আশঙ্কাজনক পর্যায়ে চলে যেতে পারে। রোগীর সংখ্যা বাড়লে পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটবে। আগে থেকেই সরকার থেকে করোনার নতুন প্রজাতির সংক্রমণ নিয়ে সতর্ক করা হচ্ছিল। তবুও মানুষের মধ্যে কিছুটা শৈথিল্য দেখা গিয়েছিল। বর্তমানে যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে মানুষকে কঠোর বিধিনিষেধে অবশ্যই ঘরে থাকতে হবে। করোনা প্রতিরোধে অবশ্যই মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। একমাত্র প্রতিরোধই হতে পরে প্রতিকারের উপায়।

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com