মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত জেলা প্রশাসক মোঃ আবু জাফর


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ৩, ২০১৯, ১:৪৩ পূর্বাহ্ণ /
মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত জেলা প্রশাসক মোঃ আবু জাফর

মানবিকতা ও মানবতার ফেরিওয়ালা হিসাবে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন লালমনিহাটের জেলা প্রশাসক মোঃ আবু জাফর।

ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনে ২৪ নভেম্বর জন্ম নেয়া ইব্রাহিম হোসেন( লালমনি) কে দেখতে

২ রা ডিসেম্বর (রবিবার) বিকেল তিনটার দিকে
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া গ্রামে আসেন তিনি। এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল হাসান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস আহমেদ এবং স্থানীয় চলবলা ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজু সঙ্গে ছিলেন।

উল্লেখ্য যে, লালমনিরহাটে জেলা প্রশাসক হিসাবে যোগদান করার পর হতে মোঃ আবু জাফর তাঁহার কর্মদক্ষতা, যোগ্যতা, বিচক্ষণতা দিয়ে জনগণের নিকট বেশ প্রশংসনীয় হয়ে উঠছেন। তাঁহার কর্মকান্ডে জনগন সুফল বয়ে পাচ্ছে বলে অনে্কের ধারনা। তিনি স্বল্প সময়েই জেলাবাসীর দৃস্টি কেঁড়েছেন। সাম্প্রতিক সময় তিনি স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস নিয়ে, অসহায় ছাত্র -ছাত্রীদের বিভিন্ন রকম সহায়তা দিয়ে এবং সর্বপরি লালমনি এক্সপ্রেসে জন্মনেয়া শিশু “লালমনি” কে দেখতে এসে নিজেকে জনগনের কাছে মানবিকতা এবং একজন মানবতার ফেরিওয়ালা হিসাবে উপস্থাপন করেছেন।

জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, জেলার ও ট্রেনের প্রতি ভালবাসা দেখে আশ্চর্য হয়েছি জেলা ও ট্রেনের মিল রেখে নাম রাখা হয়েছে লালমনি যার কারণে পরিবারের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। শিশুটির পরিবারের খোঁজখবর নিয়ে শিশুটিকে দেখতে এসে জেলা প্রশাসক শুকনো খাবারসহ নগদ ১০ হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ছকমল মিয়া তার স্ত্রী নবিয়া বেগমকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতেন। এবং গৃহ নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাতেন।  ছকমল মিয়া দরিদ্রতার কারণে ঢাকায় তার সন্তান সম্ভ্যবা স্ত্রীর অপারেশন করার মত সামর্থ্য না থাকায় তিনি গ্রামের হাসপাতালে অপারেশন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

গত ২৪শে নভেম্বর স্বামী-স্ত্রী উভয়েই টিকিট কেটে লালমনিরহাটগামী আন্তঃনগর লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনে গ্রামের বাড়িতে আসার জন্য রওনা দেন।
হঠাৎ করে চলন্ত ট্রেনেই স্ত্রী নবিয়া বেগমের প্রসব ব্যথা উঠলে কান্নাকাটি করতে থাকেন। চলন্ত ট্রেনে চিকিৎসাসেবা না থাকায় একপর্যায়ে ট্রেনেই  ভোরবেলা স্ত্রী নবিয়া বেগমের একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। পরে সকালবেলা ট্রেন বগুড়া পৌঁছালে বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে নবজাতক শিশু ও নবিয়া বেগমকে ভর্তি করা হয়। এবং ৫ দিন চিকিৎসা শেষে গত ২৮ শে নভেম্বর সদ্য জন্ম নেয়া শিশুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসেন। শিশুটির নাম রাখা হয় ইব্রাহিম হোসেন। শিশুকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি আসলে উৎসুক জনতা শিশুটিকে দেখতে ভিড় জমায়।

লালমনি নামকরনে গবেষক ড. রোকনুজ্জামান

এবং ২৯ শে নভেম্বর ছকমলের গ্রামের বাড়িতে প্রথম সদ্য জন্মানো শিশুটিকে সর্ব প্রথম দেখতে আসেন মানবতার ফেরিওয়ালা রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ওয়াজেদ রিসোর্স এন্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের গবেষক ড. রোকনুজ্জামান। এ সময় তিনি শিশুটিকে কোলে নেন এবং পরিবারের নিকট শিশুটির নাম জানতে চান। পরিবার হতে ইব্রাহিম হোসেন নাম রাখা হয়েছে বলে জানান। গবেষক ড. রোকনুজ্জামান এ সময় শিশুটির পিতা মাতা, চাচা-চাচী, দাদী ও এলাকার কিছু মানুষের সম্মুখে ইব্রাহিম হোসেন নামের সহিত ডাকনাম লালমনি রাখার অনুরোধ জানান। সে থেকেই ট্রেনে জন্ম নেয়া শিশুটি ইব্রাহিম হোসেন ( লালমনি) নামেই পরিচিত হচ্ছে। ড. রোকনুজ্জামান শিশুটিকে লালমনি নামটি দিয়ে পরিবারের নিকট নগদ অর্থের একটি খাম উপহার দেন।

লালমনি নামকরন এবং শিশুটিকে দেখতে আসার কারন জানতে চেয়ে ড. রোকনুজ্জামান কে প্রশ্ন করা হলে তিনি দৈনিক মুক্তিকে বলেন, আমাদের জেলায় এর আগে আমার জানামতে কোন শিশু এমনিভাবে জন্মগ্রহণ করেনি। একজন গর্ভবতী মা প্রসব বেদনার সময় চিকিৎসা সেবা না পেয়েই চলন্ত ট্রেনের মধ্যেই শিশুটির জন্ম দিয়েছেন।বিষয়টি আমার হৃদয় কে দারুন ভাবে স্পর্শ ও নাড়া দিয়েছে। আর সে কারণেই শিশুটি বাড়িতে আসা মাত্রই পরদিন দুপুরে আমি সেখানে উপস্থিত হয়েছি। শিশুটিকে কোলে নিয়েছি এবং যেহেতু শিশুটির চলন্ত ট্রেনে জন্মগ্রহণ করেছে তাই শিশুর পরিবারের রাখা ইব্রাহিম হোসেন নামের সহিত ডাকনাম হিসাবে লালমনি রাখি। লালমনি নামে শিশুটি পরিচিত হোক এটাই প্রত্যাশা।

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com