সভায় বক্তারা বলেন, কাজী আরেফ আহমেদ বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে ধ্রুবতারা। তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অবদান রেখেছেন। ১৯৬২ সালে সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত স্বাধীনতার নিউক্লিয়াসের সদস্য হিসাবে মাত্র ১৯ বছর বয়সে কাজী আরেফ আহমেদ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পাকিস্তান রাষ্টকাঠামোর মধ্যে পূর্ব বাংলার বাঙালি ও আদিবাসীদের জাতীয় মুক্তি সম্ভব না, তাই পাকিস্তান ভেঙ্গে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর কাজী আরেফ আহমেদ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে সদ্যস্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গঠন পুনর্গঠন করতে হলে দলীয় সরকারের বদলে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠা জাতীয় ঐক্যকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে বিপ্লবী জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। এই সিদ্ধান্তের ফলে বঙ্গবন্ধুর সাথে রাজনৈতিক আদর্শগত মতবিরোধে ক্ষমতার অংশীদারত্ব ত্যাগ করে দেশের প্রথম বিরোধী দল জাসদ গঠন করেন এবং সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী গণ আন্দোলন গড়ে তোলেন। দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রকারী শক্তি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে দেশে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী রাজনীতি চাপিয়ে দিলে কাজী আরেফ আহমেদ এই রাজনৈতিক পরিবর্তনের গভীরতা অনুধাবন করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ—বিপক্ষ রাজনৈতিক তত্ত্ব বিনির্মাণ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তির বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যের কৌশল প্রয়োগ করেন। কাজী আরেফ আহমেদ ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর কর্নেল তাহেরের নেতৃত্ব সিপাহী জনতার
অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন। কিন্তু জিয়ার বিশ্বাসঘাতকতায় সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। এরপর কাজী আরেফ আহমেদ বাম ঐক্যের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিসহ সামরিক শাসন বিরোধী শক্তির বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলা এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উদ্যগ গ্রহণ করেন। কাজী আরেফ আহমেদ ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সামরিক শাসন বিরোধী গণআন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন এবং জনগণের আন্দোলনের কাছে সামরিক শাসকদের পরাজিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। কাজী আরেফ আহমেদ বিশ্বাস করতেন যে বাংলাদেশের জন্মশত্রু পাকিস্তানপন্থার রাজনীতির দূর্গে আঘাত হানতে এবং জাতির উপর সংগঠিত ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অপরাধ যুদ্ধাপরাধের বিচার করা সম্ভব হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হব। তিনি তার সেই বিশ্বাস ও তাত্ত্বিক অবস্থান থেকেই ১৯৯২ সালে কাজী আরেফ আহমেদ শহীদ জাহানারা ইমাম, আবদুর রাজ্জাকসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক সামাজিক শক্তিকে সংগঠিত করে ঐতিহাসিক গণআদালত গঠন এবং গণআদালতের গণরায় বাস্তবায়নে গণআন্দোলন গড়ে তোলায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। কাজী আরেফ আহমদে মৌলিক তত্ত্বগুলি তার বিনিমিত এবং সেগুলি প্রয়োগের মধ্য দিয়ে জাতীয় রাজনৈতিক ধ্রুবতারায় পরিনত হয়েছিলেন। বক্তারা বলেন, দুর্ভাগ্যক্রমে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ ভাবাদর্শ বিরোধী শক্তি ক্ষমতা দখল করে মাম্প্রদায়িক মবতান্ত্রিক শাসন কায়েম করেছে। বক্তারা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে কাজী আরেফ আহমেদ ১৯৬২ সালে যেমন মাত্র ১৯ বছর বয়সে যে রাজনৈতিক অভিযান শুরু করেছিলেন, আজকের তরুণদের তার(কাজী আরেফ আহমেদ) তারুণ্য আর বিভিন্ন সংগ্রামের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। বক্তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধেও বাংলাদেশ পুন:প্রতিষ্ঠা এবং জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে ইউনুস সরকারের প্রতিহিংসার ফাঁসির দড়ি থেকে মুক্ত করার বিষয়টি একইসুত্রে গাঁথা।
আপনার মতামত লিখুন :