বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষা: অবহেলা, সংকট ও সম্ভাবনার চিত্র


dailymukti24 প্রকাশের সময় : মে ৬, ২০২৫, ৬:০১ অপরাহ্ন /
বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষা: অবহেলা, সংকট ও সম্ভাবনার চিত্র

মোঃ ফোরকান ভূঁইয়া,  পলিটেকনিক প্রতিনিধি,ঢাকা-

বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে অবহেলার শিকার, যার ফলে দেশের দক্ষ জনশক্তি গঠনে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে উন্নত দেশগুলোতে কারিগরি শিক্ষার হার ৭০ শতাংশের ওপরে, সেখানে বাংলাদেশে এই হার মাত্র ১৬ শতাংশ। তবে বাস্তবতা আরও উদ্বেগজনক; আন্তর্জাতিক মান ও বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রকৃত শিক্ষার্থীর হার ৯ শতাংশের নিচে।

বাজেট ও অবকাঠামোগত সংকট

২০২৩-২৪ অর্থবছরে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় (TVET) মোট শিক্ষা বাজেটের মাত্র ৪.৫ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৪৪.৫ শতাংশ । অর্থাৎ, বরাদ্দকৃত অর্থও পুরোপুরি ব্যবহার হয়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও ল্যাবের অভাব প্রকট, যা শিক্ষার্থীদের বাস্তব প্রশিক্ষণ গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করছে।

শিক্ষক সংকট ও শিক্ষার মান

দেশের বিভিন্ন পলিটেকনিক, মনোটেকনিক, এবং কারিগরি স্কুল ও কলেজে শিক্ষক পদের ৭০ শতাংশই খালি রয়েছে । এই সংকটের ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান এক শিফটের শিক্ষক দিয়ে দুই শিফটে পাঠদান চালাচ্ছে, যা শিক্ষার মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

শিক্ষার্থীদের অসন্তুষ্টি ও ঝরে পড়া

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণায় দেখা গেছে, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের মাত্র ১৩ শতাংশ শিক্ষার মানে সন্তুষ্ট। এছাড়া, কারিগরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৬৩ শতাংশের মাসিক আয় ১০ হাজার টাকার নিচে  । আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রায় ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থী গ্রাজুয়েশন শেষ করার আগে ঝরে পড়েছেন ।

সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সচেতনতার অভাব

কিছু শ্রেণির মানুষ এখনো কারিগরি শিক্ষাকে “মিস্ত্রি তৈরির শিক্ষা” মনে করেন, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করছে। সাধারণ মানুষ তাদের ঘৃণার চোখে দেখে বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন ।

সুপারিশ ও করণীয়

কারিগরি শিক্ষার্থীরা মনে করেন, দেশের কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন:

– কারিগরি শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি ও সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা।
– শিক্ষক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা উন্নত করা।
– আধুনিক যন্ত্রপাতি ও ল্যাব সুবিধা নিশ্চিত করা।
– সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে কারিগরি শিক্ষার প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা।

কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও দক্ষ জনশক্তি গঠন সম্ভব নয়। এখনই সময়, এই খাতকে প্রয়োজনীয় গুরুত্ব দিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার।