রুপগঞ্জে ৪৫ বছরে ২৫ খুন


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় : মে ১৫, ২০২০, ২:২৯ পূর্বাহ্ণ /
রুপগঞ্জে ৪৫ বছরে ২৫ খুন
ফয়সাল আহমেদ, রূপগঞ্জ ঃ লাশের ভাগাড় হিসেবে খ্যাত রূপগঞ্জ। এলাকার নাম শুনেই অনেকে আঁতকে উঠেন। নতুন আগুন্তুকদের অনেকে নাকি এলাকায় প্রবেশে সূরা পড়ে বুকে ফুঁ দিয়ে ঢুকেন। দিনের বেলায় ঢুকতেও না-কি গা ছমছম করে। আর রাতের বেলায়, সেটা না-কি ভাবাই যায়না। খোদ পুলিশের লোকজনও বাহিনী ছাড়া এখানে প্রবেশ করেননা। এ এক আজব জগত। আজব নীলা-খেলা। বারো রঙের মানুষের আনাগোনায় গড়ে উঠা স্থানটি ক্রমেই সারাদেশে সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছে। এখানে দিনের আলোয় যেমন ক্রাইম হয়, তেমনি টাকাও ওড়ে। এলাকাটি এখন সবার কাছে ‘আলাদিনের চেরাগ’ হিসাবে পরিচিত। বলা হয়ে থাকে এ এলাকায় বসবাস করলেই কেবল রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়া যায়। এখানে নেই কোন শিল্পকারখানা। নেই ব্যবসা কিংবা বাণিজ্য। তবুও এখানে প্রতিদিন কম করে হলেও কোটি টাকা ওড়ে। এ টাকা ধরতে গিয়ে কেউ ধনী হচ্ছে, আবার কেউ ধরা খাচ্ছে। কেউ আবার মারা পড়ছে। পাঠক হয়তো আপনার তর আর সইছে না। জানতে ইচ্ছে করছে এ জগতটা আবার কোথায়? অদ্ভুদ এ জগত আর কোথাও নয়। রাজধানী ঢাকার সন্নিকটে ডেমরার পাশে রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া পূর্নবাসন কেন্দ্রে। এলাকার আধিপত্য বিস্তার, নানা অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার অসম প্রতিযোগীতা চলে এখানে রাত-দিন। আর এসবকে কেন্দ্র করেই গত ৪৫ বছরে ২৫ টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এসব হত্যাকান্ডের একটিরও বিচার হয়নি। ফলে হত্যাকারীরা দিনকে-দিন বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে। স্থানীয়রা দাবী করে বলছেন, যদি হত্যাকান্ডগুলোর বিচার হতো, তাহলে আর কেউ নতুন করে খুন করার সাহস করতো না। তবে চনপাড়াবাসীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, চনপাড়াবাসীকে রাজনীতির কাজে ব্যবহার করা হয়। ফলে সন্ত্রাসীরা প্রশ্রয় পায়। রাজনৈতিক শেল্টার বন্ধ হয়ে গেলে চনপাড়া শান্ত হয়ে যাবে। চনপাড়াবাসীর আশঙ্কা, অপরাধ যেভাবে চনপাড়ায় বাড়ছে, এভাবে বাড়তে থাকলে চনপাড়ায় হত্যাকান্ড ধীরে ধীরে বেড়ে যাবে। এখনই নিয়ন্ত্রণে না নিলে চনপাড়া ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭৪ সালের জানুয়ারী মাসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নদী ভাঙ্গা, ঘর ভাঙ্গা মানুষদের শীতলক্ষ্যা নদ ঘেঁষা ওয়াসার ১২৬ একর জমিতে ঠাঁই দেন। ধীরে ধীরে চনপাড়া বস্তি হিসাবে রূপ নেয়। ১২ হাত বাই ১৫ হাতের কয়েক হাজার ঝুঁপড়ি ঘরে প্রায় দেড় লাখ লোকের বসবাস চনপাড়া পূর্নবাসনে। বিশ্বের অনেক দেশেই বস্তি থেকে উঠে আসা লোকেরা কালক্রমে বিখ্যাত হয়েছেন। মার্শাল টিটো, পেলে, ডিয়াগো ম্যারাডোনা ও রোনালদিনহোর মতো আরো অনেকে জগৎবিখ্যাত ব্যক্তির শৈশব কেটেছে বস্তিতে। কিন্তু চনপাড়া পূর্নবাসনের পরিচিতি হয়েছে কুখ্যাত সন্ত্রাসী, দুধর্ষ চাদাবাজ ও ভাড়াটে খুনি হিসাবে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, চনপাড়া পূর্নবাসনে গত ৪৫ বছরে ২৫ টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। তবে এ সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে বলে স্থানীয়রা মনে করেন। ১৯৭৬ সালে বাদশা মিয়া খুনের মধ্য দিয়ে চনপাড়ায় খুনের শিল্পায়ন শুরু হয়। ১৯৭৯ সালে খুনের শিকার হন খয়ের পার্টির সদস্য হাফেজ আলী, ১৯৮২ সালে খুন হন পারভেজ মিয়া, ১৯৯৪ সালে খুনের শিকার হয় চাঁন মিয়া, ২০০৩ সালে ফিরোজ সরকার, ২০০৪ সালে ফারুক মিয়া। ২০০৫ সালে খুন হয় পুলিশের এএসআই হানিফ মিয়া ও ক্রিকেটার ফালান মিয়া। ২০০৮ সালে খুন হন আব্দুর রহমান, ২০১১ সালে হত্যার শিকার হয় র‌্যাবের সোর্স খোরশেদ মিয়া। ২০১৬ সালের ১২ মার্চ প্রজন্মলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনির হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২০১৭ সালের জানুয়ারী মাসে হত্যার শিকার হয় আসলাম হোসেন নামে এক স্কুল ছাত্র, ২০১৭ সালের ২৯ নভেম্বর থানা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক হাসান মুহুরিকেকুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২০১৯ সালের ২৬ জুন খুন হন নিহত হাসান মুহুরির স্ত্রী ও সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য বিউটি আক্তার কুট্রি। সর্বশেষ ২০২০ সালের ৬ মে খুন হন বিউটি আক্তার কুট্রি ও তার স্বামী হাসান মুহুরী হত্যা মামলার আসামী আনোয়ার হোসেন।
এন এ/ দৈনিক মুক্তি ডট নিউজ
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com