নার্সারীর সফল কারিগরের দিন বদলের গল্প


আশিকুর রহমান সবুজ প্রকাশের সময় : আগস্ট ২, ২০২০, ৫:২৮ অপরাহ্ণ /
নার্সারীর সফল কারিগরের দিন বদলের গল্প
Daily-mukti
মন থেকে চাইলে পরিবর্তন সম্ভব।তার উদাহরণে লালমনিরহাটে এখন উৎকৃষ্ট নাম আব্দুল  মজিদ। যার হাতে একে একে ধরা দিয়ে চলছে নার্সারী পেশার যতসব ইতিবাচক পরিবর্তন।নার্সারী ব্যবসায়ী থেকে হয়ে উঠেছেন নার্সারী গড়ার কারিগরও। শুধু দিনবদল কিংবা ভাগ্য পরিবর্তনই নয়, হয়েছে নার্সারী ও নার্সারীর নামটির পরিবর্তনও।
আব্দুল মজিদ লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ জাওরানী গ্রামের বাসিন্দা। দুই ভাই বৃক্ষ নার্সারীর প্রোপ্রাইটর তিনি। দুই ছেলে এক মেয়ে তার। দুই ছেলের জন্যই নার্সারীর এমন নাম দিয়েছেন মজিদ।
অভাবের সংসারে লেখাপড়া না জানা আব্দুল মজিদ কাপড়ের ফেরি করে বেড়াতেন। এমন সময় একটি আমগাছের চারা ৩শ টাকায় বিক্রি হতে দেখে ভাবনায় পড়ে যান তিনি। ভাবনার এক ফাঁকে কাকিনায় নার্সারী আর রংপুরে হর্টিকালচার দেখে আসেন মজিদ।
এরপর ১৯৯৫ সালের দিকে নিজের সামান্য জমিতে আমের চারা দিয়েই শুরু করেন নার্সারী কার্যক্রম। এবার কাপড় ফেরির সাথেই কাস্টমারদের জানান দেন তার নার্সারীর কথা। ৩শ নয় দেড়শ থেকে ২শ টাকাতেই পাওয়া যাবে একেকটি আমগাছের চারা এমনটিও জানান দেন তিনি। ফলে নার্সারীটির পরিচিতি ও আর্থিক সফলতা লাভ হয় তার।
এরপর নার্সারী সম্প্রসারণে মেয়াদের পর মেয়াদে জমি লিজ নেন আর ক্রমেই বাড়তে থাকে সফলতা, দুর হয় অভাব ও বেকারত্ব। তখন কাপড় ফেরির কাজকে বিদায় জানিয়ে ছুটে চলেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিত্য নতুন প্রজাতির চারা আনা নেয়া ও বিক্রির কাজে। পরিবারটিই হয়ে উঠে নার্সারী পরিবার। এবার নিজের ২১ শতক জমি আর বাড়ি সংলগ্ন লিজের ৭ বিঘা জমিতে গড়ে তোলেন ফলজ, বনজ আর ঔষধীসহ দেশি-বিদেশি নিত্য নতুন ফুল ও ফলের অসংখ্য চারার বিশাল নার্সারী।
আছে মসলা জাতীয় গাছের চারাও যার আনুমানিক আর্থিক মূল্য ২০লক্ষ টাকা বলে এ প্রতিবেদককে বলেন আব্দুল মজিদ। সেটির দেখাশোনা করছে ছোট ছেলে মোশারফসহ পরিবারের নারী সদস্যরা। অন্যদিকে নার্সারী সম্প্রসারণ আর ব্যবস্থাপনার কারিগর হয়ে পড়েছেন আব্দুল মজিদ। এরই মধ্যে বড় ছেলে গোলাম মোস্তফাকে দিয়ে বড় আকারে জেলা শহরে এবং পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারীতেও নার্সারীর কাজ শুরু করেছেন মজিদ। সুযোগ সৃষ্টি করেছেন শতাধিক লোকের কর্মসংস্থানেরও।
সম্প্রতি মজিদের নার্সারী পরিদর্শনে আসেন জেলা ও উপজেলা (কালীগঞ্জ) প্রশাসনের কর্মকর্তাও। তখন দুইভাই বৃক্ষ নার্সারীর নামটি পরিবর্তন করে রাখা হয় গ্রীণ নেটওয়ার্ক নার্সারী। নার্সারী জীবনে বেশকিছু সনদ ও পুরস্কারও লাভ হয়েছে মজিদের। তবে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, আধুনিক প্রযুক্তি, কৃষি উপকরণ ও সহায়তা এবং আর্থিক বিনিয়োগের অভাব অন্তরায় হয়ে দেখা দিয়েছে তার। অপরদিকে চলমান করোনা পরিস্থিতিতে জেলা ও জেলার বাইরে চারা বিক্রিতে ভাটা পড়ায় নিজেকে ক্ষতিগ্রস্থ মনে করছেন মজিদ ও তার পরিবার।
এ অবস্থায় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রয়োজনীয় তৎপরতা ও উদ্যোগ পেলে মজিদের গ্রীন নেটওয়ার্ক নার্সারীসহ অন্যরাও এ কার্যক্রমকে সামনে এগিয়ে নিয়ে দেশ উন্নয়নে সহায়ক ভুমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন ভুক্তভোগীসহ সচেতন মহল।
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com