খানসামায় নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা, মিলছে না স্বল্প আয়ের মানুষের সংসার হিসাব


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় : আগস্ট ২০, ২০২৩, ৮:৩৪ অপরাহ্ণ /
খানসামায় নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা, মিলছে না স্বল্প আয়ের মানুষের সংসার হিসাব
জসিম উদ্দিন;খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ-দিনাজপুরের খানসামায় প্রায় এক মাসের ব্যবধানে বেশির ভাগ শাক-সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। বাজার করতেই মাসের বেতন শেষ হয়ে যাচ্ছে আর আয়ের সঙ্গে বাড়তি ব্যয়ের হিসাব মেলাতে পারছে না স্বল্প আয়ের মানুষ। মাস শেষে পাওয়া বেতনের পুরোটাই চলে যাচ্ছে নিত্যপণ্যের বাজারে! ফলে উপজেলার স্বল্প আয়ের মানুষ বাজার পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন।
এক মাসে প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম দফায় দফায় বেড়েছে। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, পণ্যের সরবরাহ কমে যাওয়া ও পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়া। ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারের অন্যসব পণ্যের সাথে তাল মিলিয়েই মৌসুমী সবজি বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
সরেজমিনে রবিবার উপজেলার পাকেরহাটসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি সপ্তাহেই কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ছে। সপ্তাহের শেষে বাজার করতে গেলে গত সপ্তাহের বাজারের হিসাব মিলছে না ক্রেতাদের।
প্রায় এক মাসের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে ১৩০ টাকা বেড়ে গতকাল বিক্রি হয় ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায়। দেশি পেঁয়াজ কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি।
প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
পটলের কেজি ৪০ টাকা, কায়তা ৩০ টাকা, বরবটি ৪০ টাকা, করলা ৪০ টাকা, ঝিঙে ৪০ টাকা, কাঁকরোল ৪০ টাকা, লাউ (প্রতি পিস) ২৫-৩০ টাকা, ঢেঁড়স ৩০-৩৫ টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকায় (পিস ছোট), মুলা ৩০ টাকা, বেগুন ২৫-৩০ টাকা, শজি ৫০ টাকা এবং আলু ৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে মাছ-মাংসের বাজারও আকাশ ছোঁয়া। পুকুরে চাষের রুই, পাঙ্গাস, কাতল, জাপানিসহ অন্যান্য মাছের দাম কিছুটা কম ছিল বর্তমানে তাও বেড়েছে। মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাঙ্গাস মাছ ১৫০ টাকা, সিলভার কার্প ১৮০ টাকা ছোট ও বড় ২০০ টাকা, গ্লাস কার্প ২৪০ টাকা, জাপানি ২৫০ টাকা বৌ-দুলালি ২৬০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। বয়লার মুরগির দাম কেজি প্রতি ২৪০-২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এনজিও কর্মী বলেন, মাসের বাজার খরচেই বেতনের বেশির ভাগ টাকা চলে যাচ্ছে। অন্যান্য খরচ করে কোনো সঞ্চয়ের সুযোগ থাকছে না। তাও অনেক হিসাব-নিকাশ করে চলতে হয় ইদানিং। সব কিছুর দাম বাড়তে থাকায় বেশ বিপাকে আছি। গরুর মাংস কেনার সামর্থ্য হয় না।
স্কুলশিক্ষক সুবাস চন্দ্র সকালের সময়কে বলেন, নিত্যপণ্যের সাথে প্রায় সারাবছরই সবজির দাম থাকে চড়া। শীতের সবজি বাজারে উঠলেও তা এখনো দাম কমেনি। তিনি বলেন, সবজির যে দাম তাতে অন্য বাজারে কুলিয়ে উঠা সম্ভব হবে না। পাইকারি বাজারে সবজির দাম কিছুটা কম হলেও বড়-বড় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করেই এভাবে সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখি রেখেছে।
হানিফ,বেলাল, শফিকুল, জয়ন্ত, নাজমুলসহ মাসিক ১২-১৫ হাজার টাকা বেতন পান এমন অন্তত ১০ জন ইপিজেড শ্রমিক সকালের সময়কে বলেন, বাজারে সবকিছুর যে দাম তাতে মাসে ৪ হাজার টাকা লেগে যায় সবজি কিনতে। বাকি টাকা দিয়ে কীভাবে পুরো মাসের মাছ, মাংস, রান্নার তেল, পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, মশলাসহ অন্যান্য পণ্য কিনবো? এর বাইরেও তো প্রতি মাসেই টুকটাক কিছু অন্য খরচ থাকে। ফলে সীমিত আয়ে কিছুতেই সংসারের খরচ মেলাতে পারছি না। পান, সিগারেট, চা কিছুই খাই না। তবু মাস শেষে হাতে কোনো টাকা থাকে না। এমনকি মাঝেমধ্যেই সহকর্মীদের কাছ থেকে ধারদেনা করতে হয়।
একই কথা জানান রিকশা চালকেরাও। তারা জানিয়েছেন, মাসে সর্বোচ্চ দুদিন মাংস খেতে পারেন। মাছও নিয়মিত খাওয়া হয় না। বেশিরভাগ সময় ডাল-ভর্তা-ভাত খেয়েই দিন কাটে।
ছোট ব্যবসায়ী, দিনমজুর, রিকশাচালক, পরিবহন শ্রমিক থেকে শুরু করে মাঝারি ও নিম্ন আয়ের মানুষরা কেউ ভালো নেই। খরচের চাপে চিড়ে-চ্যাপ্টা হয়ে যাচ্ছেন অধিকাংশ মানুষ। কেউ কেউ খাবারে লাগাম টানার চেষ্টা করছেন, কেউ বাড়তি আয়ের চেষ্টা করছেন। অনেকে নিরুপায় হয়ে চাপ সামলাতে গিয়ে জড়াচ্ছেন ঋণের জালে।
মাসের ব্যবধানে দেশের বাজারে চাল, ডাল, তেল, আটা, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, শাকসবজি, ওষুধ ও শিশুখাদ্যসহ জীবনযাপনের সঙ্গে জড়িত প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়েছে। কোনোটা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ আবার কোনো কোনো পণ্যের দাম ৬০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। কিন্তু খেটে খাওয়া ও সীমিত আয়ের মানুষের আয়ের কোনো উন্নতি হয়নি। এমন পরিস্থিতি মেনে নেওয়া ছাড়া বিকল্প রাস্তাও নেই সাধারণ মানুষের কাছে। স্বল্প বেতনের চাকরিজীবী আর নিম্ন আয়ের মানুষের দৈনন্দিন বাজারেই চলে যায় বেতনের টাকা। এ কারণে চিকিৎসাসহ পারিবারিক অন্যান্য খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com