বিএনপির ডাকে সারা মিলছে না জাপার


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৩, ৪:৪২ অপরাহ্ণ /
বিএনপির ডাকে সারা মিলছে না জাপার
শেষ পর্যন্ত বিএনপির জাতীয় পার্টি মিশন ব্যর্থ হয়ে গেল। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও বিএনপি এরকম একটি পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছিল। সেই পরিকল্পনা আংশিক সফলও হয়েছিল। তৎকালীন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদকে বিএনপি ম্যানেজ করে ফেলেছিল। আর এ কারণেই নির্বাচনের আগে শেষ মুহূর্তে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। জাতীয় পার্টির সকল প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রত্যাহারেরও নির্দেশ দেন। তার নির্দেশনা শুনে অনেকেই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। সেই সময়ে সরকার অনেক কৌশলে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে ম্যানেজ করেন এবং জাতীয় পার্টি খন্ডিতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। এবারও বিএনপি সেই পরিকল্পনা থেকে এগুচ্ছিল। বিএনপির পরিকল্পনা ছিল খুব পরিষ্কার। তারা মনে করে শেষ পর্যন্ত যদি জাতীয় পার্টিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা যায় এবং জাতীয় পার্টি নির্বাচন বর্জন করে তাহলে শুধু আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণে নির্বাচন কোনভাবেই আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। ফলে সে নির্বাচন সম্ভব হবে না। এর মাধ্যমে বিএনপি তাদের নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক
সরকারের দাবিতে আন্দোলনকে যৌক্তিক পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু এখন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদও নেই আর সেই জাতীয় পার্টিও নেই। তাই জি এম কাদেরের সঙ্গে বিএনপির একাধিক নেতার সখ্যতা থাকার পরও বিএনপির জাপা মিশন ব্যর্থ হলো। তার কারণ জাতীয় পার্টিতে এখন বহুমাত্রিক নেতৃত্ব। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের যেমন জাতীয় পার্টিতে নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব ছিল, তিনি স্বৈরাচারী কায়দায় দল চালাতেন তার কথাই শেষ কথা ছিল এখন জাতীয় পার্টির অবস্থা তেমন নাই। জি এম কাদের জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বটে। তবে এখানে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, মুজিবুল হক চুন্নুর মত নেতাদের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে এবং ভূমিকা রয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের সাথে সম্পর্ক বা আওয়ামী লীগের পক্ষের নেতার সংখ্যা কম নয়। এরকম পরিস্থিতিতে যদি জাতীয় পার্টি বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাহলে তা কোনোভাবেই মেনে নেবে না দলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ফলে জি এম কাদেরের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।

জাতীয় পার্টির মধ্যে আরেকটি বিষয় রয়েছে তা হলো নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর জাতীয় পার্টির বর্তমানে তাদের অনেকেই নানারকম নিপীড়ণের শিকার হয়েছিলেন এবং সেই নিপীড়ণের মূল হোতা ছিল বিএনপি। কাজেই বিএনপির সঙ্গে তাদের একটা নীতিগত দূরত্ব রয়েছে। বিএনপির সঙ্গে তাদের অনেক নেতার আপোষ করা অসম্ভব। আর এ কারণেই জি এম কাদের পুরো দলকে অখণ্ড রেখে নির্বাচন বর্জনের পথে হাঁটবেন এটা অবাস্তব এবং অসম্ভব।

জাতীয় পার্টির অনেক নেতা মনে করেন, শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে সেটা জাতীয় পার্টির জন্য মন্দের ভালো। নির্বাচনে জাতীয় পার্টি শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হবে। কারণ জাতীয় পার্টি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের প্রস্তুতি নিয়ে এগুচ্ছে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জাতীয় পার্টি ৪০ থেকে ৫০ টি আসন পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি তাদের রাজনৈতিক দলকে আরও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। এরকম বাস্তবতা থেকেই জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত বিএনপির ডাকে সাড়া দিচ্ছে না। তাই বিএনপির জাপা মিশন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলো বলেই অনেকে মনে করছেন।
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com