নিশ্চিন্ত ঠিকানা গৃহহীন-ভূমিহীনদের প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প-২


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় : মার্চ ১৭, ২০২৩, ১০:৫২ অপরাহ্ণ /
নিশ্চিন্ত ঠিকানা গৃহহীন-ভূমিহীনদের প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প-২
মোঃ আতাউর রহমান নাচোল প্রতিনিধিঃ
 কল্পনা নয় সত্যিকার বাস্তবে ছিন্নমূল, ভূমিহীন-গৃহহীন, দিশেহারা মানুষের নিশ্চিন্ত ঠিকানা মাননীয় প্রধানমনত্রী শেখ হাসিনার দুঃসাহসিক “আশ্রায়ণ-২ প্রকল্প”। মানুষের সাংবিধানিক পাঁচটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে তৃতীয়টি হচ্ছে আশ্রয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেটি বাংলাদেশের প্রান্তিক ছিন্নমূল আশ্রায়হীণ ও ভূমিহীন মানুষের কল্যানে বাস্তবায়নের জন্য অগ্রাধীকার ভিত্তিক প্রকল্প “ভূমিহীন-গৃহহীন অর্থাৎ ‘ক’ শ্রেণীর পরিবারে পূণর্বাসন” প্রকল্প যেটি “আশ্রায়ণ-২” প্রকল্প নামে বাস্তবায়ন করেছেন। আর সেটি দেশে বিদেশেও প্রশংশিত হয়েছে। আশ্রায়হীন মানুষ দেশের কল্যানে জিডিপিতে অংশগ্রহণের উপায় ছিলনা। সেদিকে লক্ষ্য রেখে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা দেশ নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে ভূমিহীন-গৃহহীন ‘ক’ শ্রেণীর পরিবারের পূণর্বাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে দেশের মূল প্রবৃদ্ধিতে তাদেরকে অংশগ্রহণের জন্য ভূমিহীনদের নিশ্চিন্ত মাথা গোঁজার ঠাঁই আশ্রায়ণ প্রকল্পে ঘর দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে কক্সবাজার জেলার সেন্টমার্টিনে প্রবল ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পূণর্বাসনের উদ্দোগ গ্রহণ করেন। তাই তিনি ওই বছরই সারা দেশের ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে পূণর্বাসনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্বাবধানে শুরু করেন “আশ্রায়ণ-২ প্রকল্প”। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০২২ইং সালে জাতির জনকের জন্মশত বার্ষিকিতে ‘বাংলাদেশের একজনও মানুষ গৃহহীন থাকবেনা’- ঘোষনা করেন। গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে জমিসহ সেমিপাকা ঘর দেওয়ার কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। এ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশের সকল দরিদ্র ও ঠিকানাবিহীন উপকারভোগী পরিবারকে দু’টি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়। যার জমি ও ঘর কিছুই নেই এমন ভূমিহীন-গৃহহীন, ছিন্নমূল ও অসহায় দরিদ্র পরিবারকে ‘ক’ শ্রেণী এবং যার সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ জমির সংস্থান আছে কিন্তু ঘর নেই এমন পরিবারকে ‘খ’ শ্রেণীভূক্ত করা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আগ্রহে প্রকল্পটিতে ৪০০ বর্গফুটের ২ কক্ষ বিশিষ্ট সেমিপাকা একক গৃহ, সেই সাথে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি ল্যাট্রিন নির্মানের ডিজাইন গ্রহণ করা হয়। আশ্রায়ণ প্রকল্পের ঘরগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগ, নিরাপদ সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়। সেইসাথে প্রকল্প গ্রামগুলিতে অভ্যন্তরীণ রাস্তা, কমিউনিটি সেন্টার, পুকুর, খেলার মাঠ প্রভৃতি নিশ্চিত করা হয়েছে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভিস্ট লক্ষ্যমাত্রা(এসডিজি)র সূচকগুলির মধ্যে ১নং সূচক “সর্বত্র সব ধরনের দারিদ্রের অবসান, ২নং সূচক-ক্ষুধার অবসান, খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টিমান অর্জন এবং টেকসই কৃষি প্রসার, ৩নং সূচক-সকল বয়সী সকল মানুষের জন্য সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ ণিশ্চিতকরণ, ৫নং সূচক-জেন্ডার সমতা অর্জন, এবং সকল নারী মেয়েদের ক্ষমতায়ন, ৬নং সূচক-সকলের জন্য পানি ও স্যানিটেশনের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও প্রাপ্যতা নিশ্চি করা, ৮নং সূচক-সকলের জন্য পূর্ণাঙ্গ ও  উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান এবং শোভন কর্মসুযোগ সৃষ্টি এবং স্থিতিশীল অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন; মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ণ-২ প্রকল্পে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এছাড়াও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধানের ১৫, ১৬ , ১৮, ১৯, নং অনুচ্ছেদের (১), (৩) ও (২৩)এর ‘ক’, ৩২নং অনুচ্ছেদ-জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার, ৩৬নং অনুচ্ছেদ-চলাফেরার স্বাধীনতা, ৩৯ নং অনুচ্ছেদ, ৪৪নং অনুচ্ছেদ-মৌলিক অধিকারের প্রয়োগ এবং সংবিধানের ১২২নং অনুচ্ছেদ নিশ্চিত করা হয়েছে। অন্যদিকে উপজেলার চারটি ইউনিয়ন নাচোল পৌরসভার মধ্যে আশ্রায়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় যেসব সরকারী খাস পুকুরপাড়ে বসবাস করছেন সেইসব পুকুরে সমবায়ভিত্তিক মাছ চাষ করে সুবিধাভোগিরা স্বাবলম্বি হয়ে জীবনমান নিশ্চিত করছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজলোর সুযোগ্য নির্বাহী অফিসার মোহাইমেনা শারমীন এর সার্বিক সহযোগীতায়, সমন্বিত বরেন্দ্র অঞ্চল নাচোল উপজেলায় সারা দেশের ন্যয় এ পর্যন্ত চারটি ইউনিয়ন ও একঢি পৌর এলাকায় সর্বশেষ তৃতীয় পর্যায়ের (২য় ধাপ)সহ মোট ৯৯৬টি ভূমিহীন-গৃহহীন ‘ক’ শ্রেণীর পরিবারকে পূণর্বাসিত করা হয়েছে। গড় হিসেবে ওইসব পরিবারের প্রায় তিন হাজার মানুষকে নিশ্চিন্ত বসবাসের ঠিকানা আশ্রায়ণ-২ প্রকল্পে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দেওয়া হয়েছে। দেশের কল্যানে তারা(পূণর্বাসিত পরিবারের লোকজন) ভূমিকা রাখছেন। ওই প্রকল্পে বসবাসকারীরা বাড়ির পাশে সামান্য ফাঁকা যায়গাটুকুতে শাকসব্জি উৎপাদন, বিভিন্ন ফলজ গাছ রোপন, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী ও প্রকল্পের পাশের পুকুরে মাছ চাষ করে আজ স্বাবলম্বি হচ্ছেন। বেকার ছিন্নমূল আশ্রায়হীন মানুষ আজ ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে উৎপাদনকর্মী হিসেবে দেশের মূল জিডিপিতে অংশগ্রহণ করেছেন।  নিশ্চিন্ত বাসগৃহে মেয়েরা আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে শাকসব্জি চাষ, বিভিন্ন ফলজ গাছ রোপন, গরু-ছাগল, হাসমুরগী পালন ও মাছ চাষ করে আজ স্বাবলম্বি হচ্ছেন। পুরুষেরা কৃষি কাজে অংশগ্রহণ করে কৃষিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছেন। আশ্রায়ণ প্রকল্পে বসবাসকারীদের মধ্যে আজ অনেকেই দৃষ্টান্তমূলক সফলতা দেখিয়েছেন।
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com