সালথায় সংঘর্ষ হামলা ভাংচুর লুটপাট: মুক্তিযোদ্ধাসহ আহত-২০


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় : এপ্রিল ১২, ২০২৪, ১০:০৩ পূর্বাহ্ণ /
সালথায় সংঘর্ষ হামলা ভাংচুর লুটপাট: মুক্তিযোদ্ধাসহ আহত-২০
আরিফুল ইসলাম, সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি:
ফরিদপুরের সালথায় গ্রাম্য দলাদলি নিয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার কে কেন্দ্র করে দুই দলের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের প্রাথমিক চিকৎসা দেওয়া হয়েছে এবং গুরুতর আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শনিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের মাঝারদিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
আহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো রায়হান শেখ (৭৫) স্থানীয় মৃত মকবুল শেখের পুত্র। আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে প্রথমে নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিফার্ড করেন। বর্তমানে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। এদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধার উপর হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা।
জানা যায়, মাঝারদিয়া গ্রামে এলাকার প্রভাব বিস্তার নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হামিদের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের আরেক সহ-সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাহিদুজ্জামান সাহিদের বিরোধ চলে আসছিল। বর্তমানে স্থানীয়ভাবে সাহিদের গ্রুপের নেতৃত্ব দেন ইউপি সদস্য কবির হোসেন ও হামিদের গ্রুপের নেতৃত্ব দেন তার ছেলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মো. ফারুক হোসেন। ওই দুই গ্রুপের মধ্যে চলমান বিরোধের জেরধরে শনিবার বিকেলে উভয় গ্রুপের কয়েকশ লোক দেশীয় অস্ত্র ঢাল, কাতরা, ভেলা ও টেটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে পুরো এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। কয়েকঘন্টা চলে এ সংঘর্ষ। সংঘর্ষ চলাকালে হামিদের সমর্থক বীর মুক্তিযোদ্ধা রায়হান ব্যাপারী ও আজিজ মোল্যার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর-লুটপাট করা হয়। হামলা করা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রায়হান শেখের উপর।
আহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রায়হান শেখ জানান, ওরা অনেক লোকজন দলবল নিয়ে আমার বাড়ি ঘেরাও করে, তা দেখে আমি হাত জোর করে ওদের কাছে মাফ চাই। এমন সময় আমাকে কোপ দেয়, ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে, আমি মাটিতে পরে যাই এর পর আমাকে টেনে হিচরে নিয়ে যায়। পরিবারের লোকজন ও বাড়ি ঘরে হামলা করবে এই জন্য আমি ওদের কাছে গিয়েছিলাম। প্রতিনিয়ত ওরা হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার উপর হামলার বিচার চাই। আমার আর কেউ না। আমি নিরাপত্তা চাই।
হাবিবুর রহমান হামিদের ছেলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মো. ফারুক হোসেন বলেন, সাহিদ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন। শনিবার বিকেলে সাহিদের সমর্থক ইউপি সদস্য কবির হোসেনের নেতৃত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা রায়হান ব্যাপারীর উপর চালায় এরপর আজিজুলের বাড়িতে হালমা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এ সময় আমার দলের লোক ঠেকাতে গেলে সংঘর্ষ বেধে যায়।
ইউপি সদস্য কবির হোসেন বলেন, শনিবার বিকেলে ফারুকের সমর্থক বক্কার মেম্বারের বাড়ির পাশ দিয়ে আমার সমর্থক মনির ও সুমন মাঝারদিয়া বাজারে যাচ্ছিল। এ সময় তাদেরকে ধাওয়া দেয় ফারুক ও বক্কার মেম্বারের লোকজন। এ নিয়ে পরে উভয় গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষের সময় আমাদের সমর্থক জালাল শিকদারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কে হামলার বিষয়ে তার কোন মন্তব্য পাওয়া যায় নাই।
এই বিষয়ে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফায়েজুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ১৭ রাউন্ড শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এখনো উভয় পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com