রংপুরে বাড়ছে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগী, ৫ দিনে ২২ জনের মৃত্যু


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২৬, ২০২৪, ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ /
রংপুরে বাড়ছে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগী, ৫ দিনে ২২ জনের মৃত্যু
মো:আবু তালেব,স্টাফ রিপোর্টার:
সারা দেশের মতো রংপুরেও বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ। গরম বাতাস আর তাপে জনজীবনে প্রায় অচলাবস্থা। রোদের তাপে হিট স্ট্রোক, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগবালাই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। রংপুর বিভাগের একমাত্র বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্র রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে তিল ধারণের জায়গা নেই। ওয়ার্ডের শয্যাতো দূরের কথা জায়গা নেই মেঝেতেও।
এদিকে, মেডিসিন ওয়ার্ডের বেশিরভাগ সিলিং ফ্যান নষ্ট। যেগুলো সচল আছে সেগুলোও ভালোমতো ঘোরে না। একেতো রোগের যন্ত্রণা তার ওপর এমন গরমে রোগীদের দুর্ভোগের শেষ নেই।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন রংপুরসহ আশপাশের জেলা থেকে ৮ থেকে ১০ জন হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগী চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছেন। গত পাঁচ দিনে হিট স্ট্রোক করা ২২ রোগী মারা গেছেন।
সরেজমিন রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, কার্ডিওলজি ও মেডিসিন বিভাগে রোগীদের প্রচণ্ড চাপ। ওয়ার্ডগুলোতে তিল ধারণের জায়গা নেই। হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।
মেডিসিন ওয়ার্ডে দেখা গেছে, হিট স্ট্রোকসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীরা ভর্তি আছেন। চিকিৎসাধীন রোগী ও তাদের স্বজনরা জানিয়েছেন, সারা দিনে একবার চিকিৎসক আসেন তাও নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা লিখে চলে যান। ওষুধসহ সব ধরনের পরীক্ষা বাইরে প্রাইভেট ক্লিনিকে করতে হচ্ছে। তার ওপর ওয়ার্ডের বেশিরভাগ সিলিং ফ্যান বিকল। যা সচল আছে সেগুলোও ভালোভাবে ঘোরে না। ফলে প্রচণ্ড গরমে ভর্তি হওয়া রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থেকে আসা রহমান আলী জানান, তিন দিন ধরে ভর্তি আছেন। একদিকে চিকিৎসার নামে প্রহসন অন্যদিকে প্রচণ্ড গরম।
একই কথা জানালেন রংপুরের পীরগাছা থেকে আসা মমতাজ বেগম, আনোয়ারা বেগম, কুড়িগ্রাম থেকে আসা আশরাফ আলীসহ অনেকেই।
সার্বিক বিষয়ে জানতে হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আখতারুজ্জামান বলেন, ওয়ার্ডের সিলিং ফ্যানগুলো সচল আছে। বিকল হলেই সচলের উদ্যোগ নেওয়া হয়। হাসপাতালে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত অনেক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে মারা যাওয়ার বিষয়টি ওইভাবে বলা যায় না। কেননা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনেক রোগীই মারা যায়- এটা স্বাভাবিক ঘটনা। তবে শয্যা সংখ্যার ২/৩ গুণ বেশি রোগী থাকায় বাড়তি চাপ পড়ছে। তারপরও চেষ্টা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে ৩৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া গাইবান্ধায় ৩৯ ডিগ্রি, দিনাজপুরে ৩৮.৭ ডিগ্রি, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৩৮.৪ ডিগ্রি, রংপুরে ৩৮ ডিগ্রি, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট ও নীলফামারীর ডিমলায় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
এ বিষয়ে রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ কামরুল হাসান জানিয়েছেন, রংপুর বিভাগে এখন মাঝারি থেকে উচ্চমাত্রার তাপপ্রবাহ চলছে। এটা পুরো এপ্রিল মাসজুড়ে অব্যাহত থাকবে এবং এরপরেও চলতে পারে। তাপপ্রবাহ রোদের প্রখরতা ও গরমের তীব্রতা বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। আপাতত বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই বললেও চলে। আর হলেও এতে তাপ কমার সম্ভাবনা কম।
এদিকে, প্রচণ্ড গরমে বিভাগীয় নগরী রংপুরে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে দিন এনে দিন খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ। কাজে বের হলেও বেশিক্ষণ অবস্থান করতে না পেরে কাজ না করেই ফিরে যাচ্ছেন। অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com