দলীয় সভানেত্রীর কড়া নির্দেশনাকে মানছে না এমপি মন্ত্রীরা


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২২, ২০২৪, ৩:১৭ অপরাহ্ণ /
দলীয় সভানেত্রীর কড়া নির্দেশনাকে মানছে না এমপি মন্ত্রীরা

সন্তান, আত্মীয়স্বজনদের উপজেলা নির্বাচন থেকে বিরত না রাখার কারণে, শাস্তির মুখোমুখি পড়তে যাচ্ছেন এমপি-মন্ত্রীরা। দলীয় সভানেত্রীর কড়া নির্দেশনার পরও তারা তাদের এ ধরনের কাজ জারি রেখেছে।

৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন। রাজনীতি-বিশ্লেষকরা বলছেন, টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের দলীয় চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে।

এমপি-মন্ত্রী এমনকি কিছু কেন্দ্রীয় নেতাও দলীয় প্রধানের নির্দেশনা মানেননি। এটা সংগঠনবিরোধী কার্যক্রম। শৃঙ্খলা-পরিপন্থি কাজ। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করলে বহিষ্কারসহ নানা শাস্তির কথা গঠনতন্ত্রে রয়েছে। এর আগে একাধিকবার গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজে জড়িত থাকার অপরাধে কাউকে কাউকে বহিষ্কার করা হলেও পরে আবার সাধারণ ক্ষমা পেয়েছেন। দলীয় পদবি এমনকি মনোনয়নও দেওয়া হয়েছে তাদের। সে কারণে এবারের উপজেলা নির্বাচনেও দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনা আমলে নেননি অনেক এমপি-মন্ত্রী।

জানা গেছে, কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করার পেছনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নিজের পক্ষে নানা যুক্তিও দিচ্ছেন। প্রথম ধাপের নির্বাচনে দলের নির্দেশনা এসেছে ১৮ এপ্রিল। আর প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ১৫ এপ্রিল। এজন্য কোথাও কোথাও মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা একমাত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী কিংবা আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হয়ে গেছেন। তাদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীও নেই। স্থানীয় মন্ত্রী-এমপিরা নিজেদের স্বজনদের প্রার্থী ঘোষণা করায় অন্যরা আর প্রার্থী হওয়ার সাহস পাননি। প্রথম ধাপের ভোটে অনেক এমপি-মন্ত্রী দলীয় সভানেত্রীর কথা তো শোনেনইনি, দ্বিতীয় ধাপেও এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে দেনদরবার শুরু করেছেন কেউ কেউ।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম  বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ রাখতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটা আমাদের দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা। নির্বাচনকে কোনোভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না। এ নির্দেশনা না মানাকে দলের নীতিনির্ধারণীর সিদ্ধান্ত অমান্য করা এবং দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ বলেই বিবেচনা করা হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, শেষ পর্যন্ত দলীয় নির্দেশনা মেনে তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে। তবে শেষ পর্যন্ত দলের নির্দেশনা অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। (সুত্র যুগান্তর)

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম  বলেন, একজন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন বা আছেন, তিনি আবার প্রার্থী হয়েছেন, তাকে তো আর কারও ভাই বা শ্যালক বলে নির্বাচন থেকে সরানো যায় না। এজন্য তারা এ সিদ্ধান্তের আওতার বাইরে থাকবেন। তারা এ প্রিভিলেজটা পাবেন। তিনি আরও বলেন, তবে এর বাইরে যারা আছেন, তাদের বিষয়ে দলের কঠোর সিদ্ধান্ত আছে। যারা নির্দেশনা উপেক্ষা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। (সুত্র যুগান্তর)।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও সর্বজনীন করার জন্য দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপি-মন্ত্রীদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এ চাপ এখনো বহাল রয়েছে। প্রথম ধাপের ভোটে কিছু এমপি-মন্ত্রী দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনা রেখেছেন। কেউ কেউ রাখেননি। এখনো সময় ফুরিয়ে যায়নি। আশা করি তারা দলীয় প্রধানের কথা রাখবেন। যারা দলীয় সভানেত্রীর কথা রাখেননি, তাদের ব্যাপারে ৩০ এপ্রিল দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে।’

দ্বিতীয় ধাপে কুমিল্লা সদর আসনে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন কুমিল্লা-১০ আসনের এমপি, সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের ছোট ভাই গোলাম সারোয়ার। আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে এসেছিলেন তাঁর ভাইয়ের পক্ষে দলীয় নেতা-কর্মীকে কাজ করতে যেন কুমিল্লা সদর আসনের এমপি আ ক ম বাহারউদ্দিন বাহারকে ফোন করেন। এ সময় দলের সাধারণ সম্পাদক সরাসরি না করে দেন। একই সঙ্গে দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনা মানার কথা বলেন সাবেক অর্থমন্ত্রীকে।

সুনামগঞ্জ-৪ আসনের এমপি মোহাম্মদ সাদিকের ভাগনে ফজলে রাব্বী স্বরনও সদর আসনে প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছেন।

লালমনিরহাট দুই আসনে সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এর পুত্র রাকিবুজ্জামান আহমেদ কে প্রার্থী করা হয়েছে।

গত সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ হয়েছে। প্রথম ধাপে আওয়ামী লীগের অন্তত ১৪ জন সংসদ-সদস্যের ১৭ জন স্বজন নির্বাচনের মাঠে আছেন। দলের নির্দেশনার পরও উলটো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com