চালু হচ্ছে কমলগঞ্জের শমসেরনগর-সহ পরিত্যক্ত ৭ বিমানবন্দর


dailymukti24 প্রকাশের সময় : মে ৯, ২০২৫, ১:২৭ অপরাহ্ন /
চালু হচ্ছে কমলগঞ্জের শমসেরনগর-সহ পরিত্যক্ত ৭ বিমানবন্দর

এহিয়া আহমদ রাফি, কমলগঞ্জ প্রতিনিধি

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ঐতিহাসিক শমসেরনগর বিমানবন্দরসহ দেশের সাতটি পরিত্যক্ত বিমানবন্দর পুনরায় সচল করার উদ্যোগ নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকারের অধীনে নির্মিত শমসেরনগর বিমানবন্দরটি ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ সামরিক বিমানঘাঁটি। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ৬১তম এয়ার সার্ভিস গ্রুপের একটি প্রধান অপারেশনাল কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো। চীনের চেংডুর উদ্দেশ্যে “ওভার দ্য হিমালয়াজ” মিশনে ব্যবহৃত হতো এখানকার রানওয়ে। ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে—১৯৪৫ সালের ১১ মার্চ, একটি সি-১০৯ কার্গো বিমান শমসেরনগর থেকে উড্ডয়নের পর চিরতরে নিখোঁজ হয়ে যায়। বিমানঘাঁটিতে রাসায়নিক অস্ত্রসহ প্রচুর যুদ্ধসরঞ্জামও সংরক্ষিত ছিল।

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শমসেরনগর বিমানঘাঁটি ব্যবহার করেই গঠন করা হয় ‘কিলো ফোর্স’—যার মধ্যে ছিল একটি ডিসি-৩ ডাকোটা, একটি অটার ও একটি আলুয়েট হেলিকপ্টার। এছাড়া, ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান দুর্ঘটনায় ৭ জন নিহত হন এই রানওয়েতেই।

বর্তমানে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ ইউনিট এখানে পরিচালিত হচ্ছে। তবে বেসামরিক ও আন্তর্জাতিক সংযোগের দিক থেকে এটি একটি সম্ভাবনাময় কেন্দ্র। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাদী ওয়াহিদুল আলম বলেন, “শমসেরনগর বিমানবন্দরটি চালু হলে এটি নেপাল, ভুটানসহ পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগ জোরদার করবে। একই সঙ্গে এটি একটি আঞ্চলিক হাবে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রাখে।”

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোহাম্মদ মনজুর কোভিদ ভূঁইয়া সাংবাদিকদের জানান, “দেশের সাতটি পরিত্যক্ত বিমানবন্দর পুনরায় চালুর পরিকল্পনায় প্রথমে সচল হচ্ছে বগুড়া বিমানবন্দর। ইতোমধ্যে উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। শমসেরনগর ও লালমনিরহাট বিমানবন্দর পরিদর্শনে চার সদস্যের একটি কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল পাঠানো হয়েছে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা বিমানবন্দরগুলো হলো: বগুড়া, লালমনিরহাট, মৌলভীবাজারের শমসেরনগর, ঈশ্বরদী, ঠাকুরগাঁও, কুমিল্লা ও তেজগাঁও।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিমানবন্দরগুলো সচল হলে দেশের পর্যটন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। যাত্রী চাপ কমবে সড়ক ও রেলপথে। একইসঙ্গে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতেও কৌশলগতভাবে লাভবান হবে।