পানির সংকটে দিশেহারা সালথার পাটচাষি


dailymukti24 প্রকাশের সময় : জুলাই ৬, ২০২৫, ১২:৩৬ অপরাহ্ন /
পানির সংকটে দিশেহারা সালথার পাটচাষি

আরিফুল ইসলাম, সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি:
ফরিদপুর জেলার সালথা উপজেলায় পানির তীব্র সংকটের কারণে পাট জাগ দিতে না পেরে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হাজারো চাষি। চলতি মৌসুমে পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও শুকানোতে ব্যস্ত সময় পার করলেও প্রয়োজনীয় পানি না থাকায় চাষিরা পাটের মান, ফলন ও ন্যায্যমূল্য নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন।

উপজেলার বিভিন্ন খাল, বিল ও পুকুরে পানি না থাকায় পাট জাগ (পঁচানো) দেওয়া নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। রাস্তার পাশে খাদ কিংবা অগভীর পানিতে জাগ দেওয়ায় পাটের আঁশ ঠিকমতো রং ধরছে না। এতে বাজারে দাম কম পাচ্ছেন কৃষকরা। আবার অনেকেই ঘোড়ার গাড়ি, নছিমন বা ভ্যানে করে পাট নিয়ে যাচ্ছেন দূরবর্তী নদীতে। এতে পরিবহন খরচ, শ্রমিক সংকট ও সময় অপচয়ের ফলে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে কয়েকগুণ।

একজন পাটচাষি জাহিদ হাসান বলেন, “সাধারণত যেখানে পাট কাটি, সেখানেই জাগ দেই। কিন্তু এবছর পানির অভাবে দূরে নদীতে পাট নিয়ে যেতে হচ্ছে। শ্রমিক সংকট ও খরচ বেড়ে যাচ্ছে। যদি স্লুইস গেট খুলে দেওয়া হতো, তাহলে পানি থাকত।”

সালথা পাটচাষি সমিতির সভাপতি মো. মোক্তার মোল্যা জানান, “৫ একর জমিতে পাট চাষ করেছি। আগাম বৃষ্টিতে নিচু জমিতে পানি জমে অপরিপক্ক পাট কেটেছি। পাট পঁচানোর জন্য পর্যাপ্ত পানি নেই, তাই জেলা প্রশাসককে স্লুইস গেট খুলে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। এ পরিস্থিতিতে ন্যূনতম ৫ হাজার টাকা মণদরে পাটের দাম নির্ধারণ করতে হবে।”

উপজেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. পারভেজ জানান, “এ বছর ৫ হাজারের বেশি কৃষক পাট চাষ করেছে। পাট চাষে উৎসাহ দিতে ৩ হাজার কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। তবে পানির অভাবে পাট পঁচাতে সমস্যা হচ্ছে। গর্ত করে পানি জমিয়ে, পলিথিন দিয়ে ঢেকে পাট পঁচানোর বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।”

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুদর্শন সিকদার বলেন, “১৪ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে এবছর পাট চাষ হয়েছে। কোথাও অতিবৃষ্টিতে পাট গাছ পচে যাচ্ছে, আবার কোথাও জাগ দেওয়ার মত পানি নেই। ফলে পাটের রং ও মান খারাপ হচ্ছে। স্লুইস গেট খুলে দিলে পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হতে পারে।”

চাষিদের মতে, পানি সংকট ও অতিবৃষ্টির কারণে এবছর পাটের ফলন, মান এবং বাজারমূল্য সবই অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। এখনই যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া না হলে আগামী মৌসুমে পাটচাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন অনেকে।