করোনার কাছে হার  অভিনেত্রী কবরীর


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় : এপ্রিল ১৭, ২০২১, ১১:১২ অপরাহ্ণ / ০ Views
করোনার কাছে হার  অভিনেত্রী কবরীর
আশিকুর রহমান সবুজ, স্টাফ রিপোর্টারঃ 
করোনায় আক্রান্ত হয়ে আজ (১৬.০৪.২১ শুক্রবার দিবাগত) রাত ১২.২০ মিনিটে না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাংলা চলচ্চিত্রের লাস্যময়ী অভিনেত্রী কবরী সারোয়ার (ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না-ইলাইহি রাজিউন)।
বাংলা ছায়াছবির এক চিরসবুজ অধ্যায় মিনা পাল (কবরী)। বাংলা সিনেমার ‘তুমি আসবে বলে, ভালোবাসবে বলে’ ‘তুমি যে আমার কবিতা’ কিংবা ‘সে যে কেনো এলো না’, ‘আবার দুজনে দেখা হল’-সহ আরো বহু জনপ্রিয় গানে তিনি মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন। বাংলা চলচ্চিত্রে তিনি কখনো সাত ভাইয়ের এক বোন চম্পা কিংবা কিরণমালা হয়ে তরুণদের স্বপ্নে এসেছেন। তিনি মতির ময়না, সুজনের সখি, দেবদাসের পার্বতী কিংবা সারেঙ বউ খ্যাত মিষ্টি মেয়ে কবরী।
১৯৬৪ সাল, প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সুভাষ দত্ত তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবি ‘সুতরাং’ ছবিতে ‘পরানে দোলা দিলো এই কোন ভোমরা’ গানের মাধ্যমে মাত্র ১৩ বছরের এক কিশোরীকে নায়িকা হিসেবে দর্শকদের কাছে পরিচিতি করান। প্রথম ছবিতেই বাজিমাৎ। খেতাব পেলেন মিষ্টি মেয়ের।
জনপ্রিয় সিনেমা সাত ভাই চম্পা, অরুন বরুন কিরণমালা, নীল আকাশের নীচে, ঢেউয়ের পরে ঢেউ, আবির্ভাব, দর্পচূর্ণ, দ্বীপ নিভে নাই, বিনিময়, আপন পর, কত যে মিনতি, ময়নামতি দিয়ে স্বাধীনতা পূর্ব বাংলা চলচ্চিত্রে হয়ে উঠেন সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়িকা। খ্যাতনামা পরিচালক জহির রায়হানের উর্দু ছবি ‘বাহানা’-তেও নায়িকা ছিলেন কবরী। নায়ক রাজ রাজ্জাকের সাথে গড়ে উঠা জুটিটি বাংলা চলচ্চিত্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় রোমান্টিক জুটি।
অ্যাকশন ধারার চলচ্চিত্র রংবাজ, বেঈমান,গুন্ডা-তে যেমন অভিনয় করেছেন, তেমন কাজ করেছেন সাহিত্যনির্ভর চলচ্চিত্র তিতাস একটি নদীর নাম, সারেং বউ, দেবদাসের মত নন্দিত চলচ্চিত্রে। বাংলা চলচ্চিত্রে ভালোবাসার সিনেমার নাম নিলে যেই তিনটির নাম প্রথমসারিতে থাকে সুজন সখি, বধূ বিদায়, দুই জীবন-এর মত জনপ্রিয় চলচ্চিত্রেও তিনি মিষ্টি হাসিতে দর্শকদের ভুলিয়েছিলেন।
এছাড়া কাজ করেন লালন ফকির, চোখের জলে, দিন যায় কথা থাকে, মাসুদ রানা, আমার জন্মভূমি, আরাধনা-সহ আরো বহু ছবিতে। ষাট ও সত্তর দশকের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই নায়িকার সাথেই অভিষেক ঘটেছিল সফল পাঁচ নায়কের। তাঁরা হলেন – জাফর ইকবাল, ফারুক, আলমগীর, উজ্জ্বল ও সোহেল রানা। নায়িকাদের মাঝে এমন রেকর্ড আর কারো মাঝে নেই।
বাংলা চলচ্চিত্রের এই নায়িকা আশির দশকে এসে অনিয়মিত হয়ে পড়লেও নব্বই পরবর্তী সময়ে চরিত্রাভিনেত্রী হিসেবে কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এর মধ্যে দেমাগ, রঙিন নয়ন মনি, বিয়ের ফুল, আমাদের সন্তান, আয়না, মেঘের কোলে রোদ উল্লেখযোগ্য। পরিচালক হিসেবেও নিজেকে পরিচিত করেছিলেন ‘আয়না’ ছবিতে।
বাংলা চলচ্চিত্রের নায়িকাদের মধ্যে যাদের জনপ্রিয় গান সবচেয়ে বেশি – তাদের মধ্যে নি:সন্দেহে প্রথম সারিতেই থাকবে কবরী। সুজন সখি সিনেমার সেই বিখ্যাত গান ‘সব সখিরে পার করিতে’ কে বলা হয় প্রেম নিবেদনের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় গান।
নায়করাজ রাজ্জাক চলচ্চিত্রের নীল আকাশের নীচে সর্দপে বিচরণ করতে পেরেছেন কবরীর মত নায়িকা পেয়েছেন বলে, মিঞা ভাই খ্যাত ফারুক চলচ্চিত্রের নীল দরিয়ায় নাও চালিয়ে সফল হয়েছিলেন কবরীকে পাশে পেয়েছিলেন বলে। বুলবুল আহমেদের ক্যারিয়ারেও সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়িকা কবরী। উপমহাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের ছবি ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ সিনেমার নায়িকা হয়েছিলেন।
বর্ণিল ক্যারিয়ারে অভিনেত্রী হিসেবে মাত্র একবার পেয়েছিলেন জাতীয় পুরস্কার। কারণ, তিনি যখন ক্যারিয়ারের সুসময় কাটিয়েছিলেন তখনো এই পুরস্কার চালু হয়নি। কয়েক বছর আগে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন জাতীয় পুরস্কারের আসরে। মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারেও পেয়েছেন আজীবন সম্মাননা। এছাড়া পেয়েছেন বাচসাস পুরস্কার সহ আরো বহু পুরস্কার, পাশাপাশি হয়েছিলেন সংসদ সদস্য। সম্প্রতি প্রকাশ করেছেন নিজের আত্মজীবনী – ‘স্মৃতিটুকু থাক’।
জন্ম হয় চট্টগ্রামের বোয়াখালীতে  – ১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই। খুব কম ভক্তই জানেন যে কবরী তাঁর আসল নাম নয়। আসল নাম হল মিনা পাল৷ বাবা শ্রীকৃষ্ণ দাস পাল এবং মা শ্রীমতি লাবণ্য প্রভা পাল৷
চলচ্চিত্রে স্বপ্রতিভ হলেও ব্যক্তিজীবনে কিছুটা নিষ্প্রভ। ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় বিয়ে করেন চিত্ত চৌধুরীকে। পরবর্তীতে ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করেন গোলাম সারোয়ারকে। তখন থেকেই তিনি কবরী সারোয়ার নামে পরিচিত। প্রায় তিন দশক সংসার করার পর তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি পাঁচ সন্তানের জননী ছিলেন।
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com