শীতে বেড়েই চলেছে পাখি শিকার 


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ২০, ২০২০, ১২:৫৫ পূর্বাহ্ণ /
শীতে বেড়েই চলেছে পাখি শিকার 
মোঃ রাকিবুল ইসলাম, বিশেষ প্রতিনিধি।
—————————————
পাখি শিকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। শীত বেড়ে যাবার সাথে বেড়েই চলেছে পাখি নিধন। মৌসুমী শিকারীদের সাথে সৌখিন শিকারীদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না অতিথি পাখির সাথে দেশীয় প্রজাতির পাখিরাও। কানুনের কলমে পাখি শিকার নিষিদ্ধ বলা হলেও বাস্তবতার খাতায় তার যেন কোনো বালাই নেই।
শীতের শুরু থেকে শেষ অব্দি পাখি শিকার। শীতকে সামনে রেখে মৌসুমী চোরা শিকারীদের সাথে সৌখিন শিকারীদের রাজসিক প্রত্যাবর্তনে পাখি শিকার যেন হয়ে ওঠে উৎসব। বাংলাদেশের  বিভিন্ন উপজেলার প্রায় প্রত্যেক গ্রাম- এলাকাতেই এই পাখি শিকারীর দেখা পাওয়া যায়।দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এরা বিল ঝিল বা বন্য বাগানে দাপিয়ে বেড়ায়।এদের হিংস্র লোলুপ থাবায় প্রকৃতির অপার সুন্দর দান ‘পাখিকুল’ চলেছে বিলুপ্তির পথে।রসনা বিলাসে ব্যাকুল শিকারী দের অপরাধজনিত অপতৎপরতায় বিরুপ হচ্ছে প্রকৃতি।হারাচ্ছে তার আসল সৌন্দর্য আর রং।প্রকৃতিপ্রেমী সচেতনমহল অসহায়।
খোজ নিয়ে জানা যায়,গ্রামীন জনজীবনে পাখি শিকারে ব্যস্ত শ্রেনীর কেউ নীচুতলার নয়। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে,পাখ-পাখালীর পোকামাকড় সংগ্রহ করে খাওয়াটা ছিল আমাদের ফল- ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে আশীর্বাদ স্বরুপ।দেশীয় প্রজাতির পাখিদের হারিয়ে যাওয়ার ফলে আজ আমাদের ফসল উৎপাদনে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়।প্রাকৃতিক পরিবেশের বিরুপ বৈরিতার এও এক জলজ্যান্ত কারন।সবমিলিয়ে আমাদের পরিবেশটা এমন যে, পুকুর আছে মাছ আছে তবে মাছরাংগা নেই! ঘরের কোনে এখন আর চড়ুই বাসা বাধেনা। উঠানের দোয়েল মানুষ থেকে অনেক দুরে।বাড়ীর বাগানে টুনটুনির বাসা উধাও। তালগাছে বাবুই পাখির বাসা দেখতে চাইলে যেতে হবে নেট দুনিয়ায়। ভোরের পাখির ডাকে এখন আর কারো ঘুম ভাংগেনা।দল বেধে সন্ধ্যায় পাখির ঝাকেরা আর ফেরেনা আপন কুলায়।পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধে বিলের মাঠে নেই শালিকের কিচির মিচির।শীতকালে শীতের প্রকোপ থেকে বাচতে শীতপ্রধান দেশ গুলো থেকে প্রান বাচাতে অনেক ধরনের বাহারী পাখিরা আসে এই বাংলায়। অতিথি পাখির আগমনে কলকাকলীতে মুখরিত হয়ে ওঠে আমাদের চারপাশ।সৌখিন শিকারীদের সাথে পাল্লা দিয়ে শিকার চালায় মৌসুমী শিকারীরা।বিষটোপ,বিভিন্ন ধরনের ফাদ, এয়ারগান সমন্বয়ে শ্রাদ্ধ চলে পাখ- পাখালির।অবাধ শিকারের সাথে চলে দেদারছে বিক্রয়। একটি পাখির ওজন কতটুকুই বা হতে পারে? সর্বোচ্চ ১শ’ থেকে ২শ’ গ্রাম। অথচ এইটুকুর স্বাদ নিতেও উৎসুক থাকে অনেকেই। সামান্য মুনাফার লোভে কিছু অসাধু ব্যক্তি বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে পাখি নিধনে মত্ত হয়ে ওঠে। বাজারে পাখির প্রচুর চাহিদাও রয়েছে। কোনোভাবে ধরতে পারলেই বিক্রি করতে খুব একটা বেগ পোহাতে হয় না। ২শ’ থেকে ৫শ’ টাকা পর্যন্তও অনায়াসে এসব পাখি বিক্রি হয়ে যায়।
১৯৭৪ সালে বন্য প্রাণি রক্ষা আইন ও ২০১২ সালে বন্য প্রাণি সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে দণ্ডের বিধান রয়েছে। এতে বলা হয়েছে,  পাখি  শিকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছরের জেল বা এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে সরকার যে আইন করেছে তার প্রতি শিকারীদের শ্রদ্ধা বা ভয় নেই। বাস্তবায়নে যাদের চোখ বা কান খোলা রাখার কথা তাদের খোঁজ নেই।আমাদের কারোরই যেন নেই নৈতিক বা সামাজিক দায়বদ্ধতা।নইলে এদেশে কি এভাবে পাখি শিকার হয়! অবাধ পাখি শিকারের পরিনতি স্বরুপ এক সময় বসন্তের কোকিলের ডাক না-ও শোনা যেতে পারে এই বাংলার ঘরের কোনায়!
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com