উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের বিভক্তি ও কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নেবে


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় : মার্চ ২৬, ২০২৪, ৪:০২ পূর্বাহ্ণ /
উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের বিভক্তি ও কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নেবে

উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের বিভক্তি ও কোন্দল ক্রমশ প্রকাশ্যে রূপ নিতে শুরু করেছে। গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের মধ্যে যে বিভক্তির সূচনা হয়েছিলো, তা চূড়ান্ত রূপ ধারণ করতে যাচ্ছে উপজেলা নির্বাচনে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন ১৫২টি উপজেলার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। প্রথম দফায় এই ১৫২টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। 

আওয়ামী লীগ এবার উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিয়েছে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত দলের জন্য আরও আত্মঘাতী হতে যাচ্ছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আওয়ামী লীগ অবশ্য দলের কোন্দল কমানো এবং দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ বন্ধের জন্যই এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলো। কিন্তু এখন এই সিদ্ধান্ত হিতে বিপরীত ফল দিচ্ছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কারন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন এবং যারা স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে মাঠে ময়দানে কাজ করেছেন তাদেরকে আওয়ামী লীগের দলীয় পদ পদবি পাওয়া নেতারা বিরুদ্ধে দৃষ্টিতে দেখছেন। আর এর কারণেই আওয়ামী লীগের বিভক্তি ক্রমশাই বাড়ছে। 

 

উপজেলা নির্বাচনে প্রথম দফায় যে ১৫২টি উপজেলায় তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে বিভিন্ন উপজেলাতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে অন্তত ৫ জন করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। অর্থাৎ প্রতিটি উপজেলায় আওয়ামী লীগ ৫ টুকরো হয়ে যাচ্ছে। আরও সহজ ভাবে বলা যায় আওয়ামী লীগ ৫ ভাগে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে। 

যেসমস্ত উপজেলার তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে ইতোমধ্যেই প্রার্থীরা তাদের প্রচার প্রচারণা শুরু করেছে এবং এ প্রচারণায় দেখা যায় আওয়ামী লীগের যিনি এমপি হয়েছেন তিনি তার পছন্দের ব্যক্তিকে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যিনি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করেছিলেন তিনিও তার কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধারের জন্য নির্বাচনে তার পছন্দের প্রার্থীকে দাঁড় করাতে যাচ্ছেন। আবার অন্যদিক দিয়ে দেখা যায়, যেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন সেখানে উপজেলায় তার অবস্থান আরও দৃঢ় করার জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী তার প্রার্থী দিয়েছেন। আবার যিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী, কিন্তু নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন স্বতন্ত্রের কাছ থেকে তিনি উপজেলা দখলের জন্য স্বতন্ত্রের প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী দিচ্ছেন। আবার স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা যিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়ে পাননি আবার স্বতন্ত্র নির্বাচনও করেননি, তিনি দলে তার অবস্থান ধরে রাখার জন্য তিনি বা তার মনোনিত প্রার্থীকে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন। আবার যুবলীগ বা আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের একাধিক নেতা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন যারা নিজেদেরকে জনপ্রিয় মনে করেন এবং উন্মুক্ত উপজেলা নির্বাচনের সুযোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন। 

এরকম বাস্তবতায় প্রতিটি উপজেলায় এ পর্যন্ত যে খবর পাওয়া যাচ্ছে, প্রতিটি উপজেলায় অন্তত ৫ থেকে ৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে যাচ্ছেন। এটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় ধরনের বিপর্যয় তৈরি করতে পারে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। 

আওয়ামী লীগ অবশ্য বলছে যে, যেহেতু উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নাই সেজন্য এসমস্ত বিভক্তি গুলো টেকসই হবে না। তবে যারা নির্বাচন করছেন তারা প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং তাদের পদবী রয়েছে। আর এই কারণে এই সমস্ত পদ-পদবী পাওয়া ব্যক্তিরা যখন নির্বাচন করবে তাদের কর্মী সমর্থকরা তাদের পক্ষে দাঁড়াবেন। এর ফলাফল হবে প্রতিটি উপজেলায় আওয়ামী অন্তত ৫ ভাগে বিভক্ত হবে। এ বিভক্ত আওয়ামী লীগকে জোড়া লাগানোর উপায় কি থাকবে সেটি এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।  

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com