ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হবেন, না নেতৃত্ব ছাড়বেন ফখরুল?


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় : মার্চ ২৬, ২০২৪, ৭:৪৯ অপরাহ্ণ /
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হবেন, না নেতৃত্ব ছাড়বেন ফখরুল?
গতকাল সোমবার দীর্ঘদিন পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে যুক্ত হন লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াও। বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুরুতেই সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেছেন যে, তিনি বিএনপির রাজনীতির সাথে থাকতে চান। বিএনপির রাজনীতি তিনি কখনোই ছাড়বেন না। কিন্তু তার ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল আকার ধারণ করেছে।

বিএনপি মহাসচিব জানান যে, তার স্ত্রী ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং ক্যান্সারে তার শারীরিক অবস্থার যথেষ্ট অবনতি ঘটেছে। এরকম বাস্তবতায় স্ত্রীকে তার সময় দেওয়া দরকার।

এরপর তিনি এটিও জানান যে, তিনি নিজেও অসুস্থ এবং নানারকম জটিলতায় তিনি ভুগছিলেন। বিশেষ করে ২৮ অক্টোবর কারাগারে যাওয়ার পর থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অসুস্থতা বেড়েছে বলেও তিনি স্থায়ী কমিটির সদস্যদের জানান। এরকম পরিস্থিতিতে দলে কোন যোগ্য নেতৃত্ব আনার জন্য তিনি পরামর্শ দেন।

উল্লেখ্য যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড মঈন খানের নাম উল্লেখ করে বলেন যে, তিনি এখন মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন এবং সে ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা হবে না। তবে দলের কোনো স্থায়ী কমিটির সদস্যই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই প্রস্তাবে সায় দেননি। বরং এই বৈঠকে নাটকীয়ভাবে তারেক জিয়া তাকে দলের নেতৃত্ব গ্রহণ করার জন্য পরামর্শ দেন। বৈঠকে লন্ডনে পলাতক বিএনপি নেতা বলেন যে, বর্তমান বাস্তবতায় দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন করা দরকার এবং তিনি যতক্ষণ পর্যন্ত লন্ডনে আছেন ততক্ষণ পর্যন্ত দলের চেয়ারম্যান পদ আঁকড়ে থাকা উচিত কি না, সেটি নিয়েও তিনি দলের নেতাদেরকে ভাবতে বলেন।
তারেক জিয়া এটাও বলেন যে, তিনি দলের সঙ্গে আছেন এবং থাকবেন। কিন্তু দলের নেতৃত্বে সরাসরি ভাবে সম্পাদন করা তার পক্ষে কতটুকু সম্ভব সেই ভার তিনি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের দেন। তবে স্থায়ী কমিটির প্রত্যেক সদস্যই এ ব্যাপারে না সূচক বক্তব্য দেন এবং তারা বলেন যে, জিয়া পরিবারের সদস্য হিসেবে তারেক জিয়ার কোনো বিকল্প নেই এবং তারা তারেক জিয়াকে ছাড়া ভাবতে পারছেন না। যদিও কদিন আগেও বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে বিভিন্ন নেতারা আলোচনা করেছিলেন যে, তারেক জিয়ার নেতৃত্ব থেকে সরে যাওয়া উচিত। বর্তমান বাস্তবতায় বিএনপিতে এমন নেতার দায়িত্ব নেওয়া উচিত যিনি দেশে থেকে রাজনীতি করছেন। আর এরকম পরিস্থিতিতে তারেক জিয়াকে উপদেষ্টা বা পরামর্শক হিসেবে রাখার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
তবে গতকালের বৈঠকে এটির উল্টো সুর দেখা যায় বিএনপির নেতাদের মুখে। তবে মজার ব্যাপার হল যে, তারেক জিয়া এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দুজনের কেউই বিএনপির নেতৃত্বে থাকতে চান না। দুজনেই দলের সঙ্গে কাজ করতে চান। তবে নেতৃত্ব থেকে সরে জানাতে চান। ফলে দলের নেতৃত্ব কী হবে, না হবে তা নিয়ে নতুন করে সংকট তৈরি হয়েছে গতকালের বৈঠকের পর।
একাধিক সূত্র বলছে যে, এই বৈঠকের পর দ্রুত একটি কাউন্সিল অধিবেশন করার বিষয়টি আলোচিত হবে। গতকাল বৈঠকেও দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাউন্সিল অধিবেশন করার জন্য তাগাদ দেয়া হয়। তবে, দলের একাধিক নেতা বলেছেন যে, বর্তমানে যে রাজনৈতিক পরিবেশ, সেই রাজনৈতিক পরিবেশ কাউন্সিল করার জন্য উপযোগী নয়। বিশেষ করে এখনও বহু নেতাকর্মী জেলে আছে এবং একটা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তাই কাউন্সিল করা যাবে কি না তা নিয়ে নতুন করে ভাবার জন্য অনুরোধ জানান কোন কোন নেতা।

তবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং তারেক জিয়া দুজনই বলেছেন, প্রতিকূল পরিবেশ থাকার পরও দলের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে, কাউন্সিলের মাধ্যমেই দল গোছাতে হবে। আর এক্ষেত্রে কাউন্সিল পর্যন্ত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে দায়িত্বে থাকছেন সেটা গতকালকের বৈঠকে মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছে।

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com