

এম ফাহিম, চরফ্যাসন (ভোলা) প্রতিনিধি
ভোলার চরফ্যাসন উপজেলার উপকূলীয় জেলে পল্লীগুলোতে বছরের পর বছর ধরে চলছে এক ভয়ংকর বাস্তবতা—প্রতিটি ঝড়েই হারিয়ে যাচ্ছে কারও না কারও জীবন। মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীসহ গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছেন জেলেরা। কেউ লাশ হয়ে ফিরে আসেন, কেউ আর কোনো দিনই ফেরেন না। চর মাদ্রাজ, চরপাতিলা, নূরাবাদ, ঢালচরসহ প্রায় ২২টি এলাকার জেলেপাড়ায় এখন সবচেয়ে পরিচিত শব্দ—নিখোঁজ।
চরফ্যাসন উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলায় জেলে আছেন প্রায় ৯০ হাজার; এর মধ্যে নিবন্ধিত ৪৪,২৮১ জন এবং অনিবন্ধিত প্রায় ৪৬ হাজার। মাছ ধরার জন্য রয়েছে প্রায় ১২ হাজার ট্রলার ও নৌকা এবং ৭ হাজার গভীর সমুদ্রগামী ট্রলার। ২০১৫ সাল থেকে ২০২৫ অর্থবছর পর্যন্ত ট্রলার ও নৌকা ডুবে প্রাণ হারিয়েছেন ১৬৭ জন জেলে। এর মধ্যে ২০১৯ থেকে ২০২৫-এর মধ্যে নিখোঁজ হয়েছেন ১২৪ জন জেলে, যাদের মধ্যে অনেকে আজও নিখোঁজ।
নুরাবাদ এলাকার জেলে জাকির হোসেনের ছেলে জামাল (৩৭) ২০১৯ সালের ১২ জুলাই নিখোঁজ হন। তার বাবা বলেন, “ছেলেটা দিন-রাত সাগরে থাকত। ঝড়ে ট্রলার ডুবে যায়, বাকিরা ফিরে এলেও আমার ছেলে আর আসেনি।”
জেলার মৎস্য দপ্তরের তথ্য মতে, ২০১৫–২০১৭ সালে নিহত সব পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ৮০টি জেলে পরিবারকে অনুদান দেওয়া হয়েছে। বাকি পরিবারগুলোকে পর্যায়ক্রমে সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন চরফ্যাসন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু।
জেলে সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, “এখানে ৯০ শতাংশ মানুষ জেলে পেশার সঙ্গে জড়িত। ঝড় এলেই আতঙ্কে থাকি, কে আর ফিরবে না।” স্থানীয় জেলে কালাম বলেন, “সাগরে গেলে দুই দিক থেকে ভয়—একদিকে ঝড়, অন্যদিকে জলদস্যু। কোনো না কোনোভাবে একদিন নিখোঁজ হয়ে যেতেই হয়।”
আপনার মতামত লিখুন :