মামুনুল হক গ্রেফতার


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় : এপ্রিল ১৮, ২০২১, ৯:১০ অপরাহ্ণ /
মামুনুল হক গ্রেফতার

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সেক্রেটারি মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

রোববার (১৮ এপ্রিল) দুপুর পৌনে ১টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. হারুন-অর-রশিদ গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মামুনুল হককে গ্রেপ্তারের পর তাকে তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনারের কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। আপাতত মোহাম্মদপুর থানার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

এদিকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)-র যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জানান, গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিমের যৌথ অভিযানে মামুনুলকে গ্রেপ্তার করে।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানাধীন রয়েল রিসোর্টে নারীসঙ্গীসহ স্থানীয় লোকজনের হাতে আটক হওয়ার পর ছাড়া পেয়ে ওই রাতেই ঢাকায় চলে আসেন মামুনুল। তারপর থেকে মোহাম্মদপুরের কাদিরাবাদ হাউজিংয়ের নিজ বাসায় না গিয়ে পাশেই জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় যান। এত দিন সেখানেই অবস্থান করছিলেন।

ডিবি সূত্র জানায়, মাদরাসাটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে ছিল। ওই মাদরাসার একটি কক্ষে বসেই ফেসবুকে লাইভ করছিলেন হেফাজতের এই নেতা। সবশেষ লাইভে এসে দ্বিতীয় বিয়ের দাবির স্বপক্ষে ‘স্ত্রীর কাছে সত্য গোপন করার অবকাশ রয়েছে’— এমন বক্তব্য দিয়ে নিজ দলের আলেম-ওলামাদের কাছে সমালোচনার শিকার হন মামুনুল। পরে চাপের মুখে সেই ভিডিও নিজের ফেসবুক আইডি থেকে ডিলিটও করে দেন তিনি।

ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জানান, ওই মাদরাসার দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে থাকতেন মামুনুল। প্রথমদিকে দুই-একবার বের হয়ে দলীয় মিটিংয়ে যোগদান করেছিলেন তিনি। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর মনোভাব বুঝতে পেরে পরে আর মাদরাসা থেকে বের হননি। মাদরাসা অবস্থান করেই তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে আসছিলেন।

ডিবির এই যুগ্ম কমিশনার আরো জানান, মাদরাসা থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে (মামুনুল) গ্রেপ্তার করতে পারে— এ কারণে পাশেই নিজের বাসা হলেও তিনি সেখানে যাচ্ছিলেন না। কঠোর নজরদারিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মামুনুলের অবস্থান নিশ্চিতের পর রোববার তাকে ওই মাদরাসা থেকেই গ্রেপ্তার করতে সমর্থ হয়। গ্রেপ্তারের পর প্রথমে তাকে তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনারের কার্যালয়ে, সেখান থেকে তাকে ডিবি কার্যলয়ে নেওয়া হয়।

এদিকে সোমবার (১৯ এপ্রিল) মামুনুল হককে আদালতে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডিসি হারুন-অর-রশিদ। তবে রিমান্ড চাওয়া হবে কি না তা ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এর আগে, গত ৩ এপ্রিল বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের রয়েল রিসোর্টের ৫০১ নম্বর কক্ষে নারীসহ মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে স্থানীয়রা। পরে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই রিসোর্টে ভাঙচুর চালায় হেফাজতের নেতাকর্মীরা।

ওই ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল, বুধবার দুপুরে মামুনুল হককে প্রধান আসামি করে দুটি মামলা করে পুলিশ। ওই মামলায় ৮৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৬০০ জনকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া স্থানীয় এক সংবাদকর্মীকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা মারধর ও লাঞ্ছিত করার ঘটনায় আরো একটি মামলা করা হয়।

অন্যদিকে, গত ২৬ মার্চ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সহিংসতার ঘটনায় ৫ এপ্রিল মামুনুল হকসহ ১৭ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের উপদপ্তর সম্পাদক খন্দকার আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে পল্টন থানায় ওই মামলাটি করেন। এ ছাড়া ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে তাণ্ডবের ঘটনাতেও তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, তারা অপেক্ষায় ছিলেন মামুনুল হকের মাদরাসা থেকে বের হওয়ার। সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যেই রাখা হয়েছিল তাকে। এর মধ্যে হেফাজতের মধ্যম সারির একাধিক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। যাতে মামুনুল হক গ্রেপ্তার হলে কেউ মাঠে নেমে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে।

কর্মকর্তারা আরো জানান, মামুনুল হকের মাদরাসা থেকে বের হওয়ার অপেক্ষা করলেও তাকে ওই মাদরাসা থেকেই গ্রেপ্তার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে মাদরাসার কতজন শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন সেই তথ্য সংগ্রহ করেন। পরে প্রযুক্তির সহায়তায় মামুনুল হকের সবশেষ অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হন। এরপরই পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ কর্মকর্তাসহ গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল জোনাল টিম মামুনুলকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালান।

অভিযানে অংশ নেওয়া গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, মাদরাসার গেটে সার্বক্ষণিক পাহারা বসিয়েছিলেন মামুনুল হক। পুলিশের শতাধিক ফোর্স নিয়ে তারা মাদরাসায় গেলে প্রথম দিকে মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু অভিযানের মুখে পিছু হটেন তারা। পরে মাদরাসার দ্বিতীয় তলায় মামুনুল হকের কক্ষে গিয়ে তাকে পুলিশের সঙ্গে যেতে বলেন। তিনি নিজেও বুঝতে পারেন বাধা দিয়ে কোনো লাভ হবে না। তাই স্বেচ্ছায় হেঁটে গাড়িতে ওঠেন মামুনুল।

জানা গেছে, মামুনুলকে গ্রেপ্তারের সময় প্রায় দুই শতাধিক পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিল। আশঙ্কা ছিল তাকে গ্রেপ্তারের পর মাদরাসার শিক্ষার্থী ও হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়বে পুলিশ। তবে তা হয়নি। খুব স্বাভাবিকভাবেই মামুনুলকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে পুলিশ। তবে মামুনুলকে নিয়ে আসার সময় হেফাজতের কর্মীরা মাদরাসার সামনে বিক্ষোভ করে।

দুপুর পৌনে ২টার দিকে মামুনুল হককে গ্রেপ্তারের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডিসি মো. হারুন-অর-রশিদ। তিনি বলেন, “মোহাম্মদপুর থানার একটি ভাঙচুর ও নাশকতার মামলায় তদন্ত চলছিল। তদন্তে হেফাজত নেতা মামুনুলের সম্পৃক্ততার বিষয়টি সুস্পষ্ট হওয়ায় আমরা তাকে গ্রেপ্তার করেছি। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এছাড়া বায়তুল মোকাররম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হাটহাজারীর ঘটনার পর থেকেই তিনি নজরদারিতে ছিলেন। সবকিছু মিলিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে আপাতত মোহাম্মদপুর থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।”

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com