অসহায়দের ভরসাস্থল নারী সহায়তা কেন্দ্র


মেহেদী হাসান তানিম নাটোর প্রকাশের সময় : মার্চ ২৫, ২০২১, ২:৩৮ পূর্বাহ্ণ /
অসহায়দের ভরসাস্থল নারী সহায়তা কেন্দ্র

একটি উদ্যোগ পাল্টে দিয়েছে অতি দরিদ্র পরিবারের অসহায় নারীদের চিত্র। প্রত্যন্ত অ লের সুবিধাবি ত অসহায় নারীদের সামাজিক নিরাপত্তা, ভূমিহীন-গৃহহীন নারীদের বাসস্থানের ব্যবস্থা, নির্যাতীত নারীদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে দ্রæত ব্যবস্থা, দুঃস্থ মহিলাদের ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে গুরুদাসপুর উপজেলা প্রশাসনের ‘নারী সহায়তা কেন্দ্র’। বলতে গেলে, উপজেলার অতি দরিদ্র পরিবারের অসহায় নারীদের আস্থার প্রতীক এখন‘নারী সহায়তা কেন্দ্র’। নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তমাল হোসেন গ্রামের অসহায় নারীদের কথা চিন্তা করে এই ‘নারী সহায়তা কেন্দ্র’ চালু করেছেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানাযায়, ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর উপজেলা প্রশাসনের একটি কক্ষে নাটোর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহরিয়াজ এই নারী সহায়তা কেন্দ্রটি জেলাতে প্রথমবারের মত উদ্বোধন করেন। প্রতিষ্ঠার দেড় বছরে ১ হাজার ৫৫০ জন নারী, বিধবা ভাতা, বয়ষ্ক ভাতা, স্বামী পরিত্যাক্তা ভাতা, পঙ্গু ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, সেলাই মেশিন প্রাপ্তি, মাতৃত্বকালীন ভাতা, চিকিৎসা ও পড়াশোনার জন্য আর্থিক সহায়তা, সৌর বিদ্যুৎ, টিউবওয়েল, মিটারের আবেদন, ভিজিডি কার্ড,দুঃস্থ্য মহিলাদের ক্ষদ্র ঋণ প্রদানসহ নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সহায়তা পেয়েছেন। প্রথম কিছুদিন সকলকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য আবেদনের কোর্ট ফ্রি ২০ টাকা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। তারপর থেকে আবেদন ফরমের রাজস্ব স্ট্যাম্পের ২০ টাকা সেবাগ্রহীতাদের দিয়ে আবেদন করতে হয়।
উপজেলা প্রশাসনের ডিজিটাল সেন্টারের নারী উদ্যোক্তা বেলি খাতুন যায়যায়দিনকে জানালেন, নারী সহায়তা কেন্দ্রে শতভাগ সেবা নিশ্চিত করার জন্যে ডিজিটাল সেন্টারের কাজের পাশাপাশি তিনি নারী সেবা কেন্দ্রের কাজ করেন। প্রত্যন্ত অ ল থেকে আসা বয়স্ক নারী ও শিশুদের জন্য রয়েছে বসার ব্যবস্থা। প্রতিদিন প্রায় ২০-২৫ জন নারী সেবা গ্রহিতা বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সেবা কেন্দ্রে আসেন। অসহায় নারীদের বিভিন্ন অভিযোগ শুনে আবেদন আকারে লিপিবদ্ধ করেন তিনি। তবে প্রতিটি আবেদন প্রথমে ফ্রি করে দেওয়া হলেও এখন স্ট্যাম্প ফি ২০ টাকা করে নেওয়া হয়। প্রতিদিন অফিস সময় শেষে সকল আবেদনের কপি জমা দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে। প্রতিটি আবেদন গুরুত্বসহকারে পর্যবেক্ষন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয় ইউএনও।
উপজেলা প্রশাসন সুত্রে আরো জানাযায়, গত দেড় বছরে ‘নারী সহায়তা কেন্দ্রে’ চিকিৎসা ও পড়াশোনার জন্য আর্থিক সহযোগিতার আবেদন করেছে ২০০ জন, নারী ও শিশু নির্যাতন ইফটিজিং প্রতিরোধে ৫০০ জন, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, স্বামী পরিত্যাক্তা ভাতা, পঙ্গু ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতা ২০০ জন, সেলাই মেশিন ও মাতৃত্বকালীন ভাতা ১০০ জন, সৌর বিদ্যুৎ,টিউবওয়েল,মিটারের আবেদনে ২০ জন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ৩০ জনসহ ভিজিডি কার্ড ও ভূমিহীন-গৃহহীনরা ঘর নির্মাণের জন্য আবেদন করেছেন ৫০০ জন।
এসকল আবেদন সরেজমীন করে প্রায় সকল নারী সেবা গ্রহিতার সমস্যা সমাধান করা হয়েছে। গত দেড় বছরে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আবেদনে সেবা পেয়েছেন ১৫ জন, নির্যাতিত ৪ জন নারীকে দেওয়া হয়েছে ক্ষুদ্রঋণ ও পুর্নবাসন। সেবা কেন্দ্রে আবেদন করায় বন্ধ হয়েছে ৩০ জন স্কুল ছাত্রীর বাল্যবিয়ের। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন জন শিক্ষার্থীকে সাহসীকতার পুরুষ্কারও দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন বাল্যবিয়ে বন্ধ হওয়া প্রতিটি ছাত্রী। ভূমিহীন-গৃহহীন কয়েকটি পরিবার পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর। তাছাড়াও উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের পারভীন বেগম ও মশিন্দা ইউনিয়নের মশিন্দা পশ্চিমপাড়া এলাকার স্বর্ণা বেগমের শিশু উদ্ধার করে তাদের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন নিজের বাচ্চা নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করছেন তারা।
উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের ভূমিহীন সালেহা বেগম, নাজিরপুর ইউনিয়নের প্রতিবন্ধী আবেদা বেগম ও চাপিলা ইউনিয়নের অতি দরিদ্র মর্জিনা বেগম জানালেন, অভাব অনটনের সংসার তাদের। কারো স্বামী অনেক আগেই মারা গিয়েছেন কারো স্বামী অসুস্থ। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে অতি কষ্টে জীবন-যাপন করে চলছেন তারা। উপজেলার নারী সেবা কেন্দ্রের খবর জানতে পেরে তারা ঘর পাওয়ার জন্য আবেদন করেন। ঘরের আবেদন পেয়ে উপজেলা প্রশাসন সরেজমীন করে তাদেরকে ঘর দিয়েছেন। উপজেলা পৌর সদরের পাপিয়া বেগম জানালেন, তিনি নারী সহায়তা কেন্দ্রে সেলাই মেশিনের জন্য আবেদন করে সেলাই মেশিন পেয়েছেন। এখন তিনি সেলাই মেশিনের কাজের টাকায় সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন।
নারী সহায়তা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ তমাল হোসেন জানালেন, গ্রামের অসহায় নারীদের শতভাগ সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নারী সহায়তা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। নির্বিঘেœ অসহায় নারীরা এই সেবা কেন্দ্রে আবেদন করতে পারেন। আবেদন পাওয়ার পরপরই গুরুত্বসহকারে সরেজমীন করে তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করা হয়। স্বল্প সময়ে অনেক নারী এখানে আবেদন করেছেন। অনেকেই এর সুফল ভোগ করে স্বাভাবিক জীবন-যাপন শুরু করেছেন।

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com