বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও কিছু কথা


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪, ২:৫৭ অপরাহ্ণ /
বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও কিছু কথা

১৪ ফেব্রুয়ারি “বিশ্ব ভালোবাসা দিবস” বা “ভ্যালেন্টাইনস ডে” সারাবিশ্বের ন্যায় আমাদের দেশেও বেশ জাঁকজমকপূর্ণ পালিত হচ্ছে। আমরা না জেনে না বুঝে এই দিবসটি পালন করছি। ভালোবাসার বিষয়টি আপেক্ষিক। অথচ এটিকে আজ একঘরে করে রাখা হচ্ছে। ভালোবাসা যে শুধু প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে, তা আমি মানতে নারাজ। বেশ কয়েক বছর থেকে লক্ষ্য করছি, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসটি সার্বজনীন ভালোবাসায় রূপ না নিয়ে শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকছে।একজন ভালোবাসা প্রেমী ও সচেতন মানুষ হিসাবে ”ভ্যালেন্টাইনস ডে” কি এবং এর ইতিহাস সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিজেদের বিবেক-বিবেচনা দিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কি করা উচিত।
এই দিনটিকে ঘিরে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের সমারোহ। কত রকমের বিচিত্র আয়োজনে মাতিয়ে দিন-রাত কাটিয়ে দেয় তারা। পশ্চিমা সংস্কৃতি আমাদের বাঙালি জাতির নানান ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে টুটি চেপে ধরেছে। অথচ আমাদের সংস্কৃতির খোঁজ-খবর তেমনভাবে রাখি না। পশ্চিমাদের কাছে ভালোবাসা কৃত্রিমতার হলেও বাঙালিদের ভালোবাসা আন্তরিকতার বলে আমার বিশ্বাস। অথচ একটি বিশেষ দিনকে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করে বাকিদিনগুলোকে ভালোবাসাহীন করে চালাতে চাইছি। সৃষ্টির সূচনা লগ্ন থেকে যে ভালোবাসা চিরন্তনভাবে চলে আসছে সে ভালোবাসাকে বাধার সৃষ্টির মাধ্যমে করে ফেলছি সংকীর্ণ। ভালোবাসা দিবসের সময় আসলে আমরা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটতে থাকি উন্মাদের মতো। অথচ একবারও গভীরভাবে খোঁজ নিয়ে জানতে চাই না ভালোবাসা দিবস উৎপত্তির সঠিক ইতিহাসটি। মনে প্রশ্ন জাগে না, কোন কারণে আমরা বিশেষ একটি দিনের খাঁচায় বন্দি করে ফেলছি মুক্ত ভালাবাসাকে। শুধুমাত্র নিষিদ্ধ যৌবন কামনার তাড়নায় আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে আমাদের বিবেককে। ভালোবাসা দিবস বলতেই তরুণ-তরুণীরা হুঁশ হারিয়ে উম্মাদনায় মাতছে। যে দেশের মানুষের জীবনের সকল পরতে-পরতে ভালোবাসায় ভরপুর তারা নির্দিষ্ট একটি দিন কেন্দ্রিক ভালোবাসাকে পুঁঞ্জিভূত করে ফেলবে, এটা কখনও মানার নয়। বিশেষত আমরা যে ইতিহাসগুলোকে স্মরণ করার মানসে ভালোবাসা দিবসকে পালন করি সেসব ঘটনাগুলোতে প্রকৃত ভালোবাসার ছিটেফোটাও ছিল কিনা তা নিয়ে আছে গুরুতর প্রশ্ন।

ভ্যালেনটাইন ডে কি:
ভ্যালেনটাইন ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস যাকে অন্যভাবে সেন্ট ভ্যালেনটাইন উৎসবও বলা হয়। একটি বার্ষিক উৎসবের দিন যা ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা ও অনুরাগের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়। প্রথমদিকে এটি সেন্ট ভ্যালেনটাইন নামক একজন অথবা দুজন খ্রিষ্টান শহিদকে সম্মান জানাতে খ্রিষ্টধর্মীয় উৎসব হিসেবে পালিত হয়ে আসছিল, পরবর্তীতে লোক ঐতিহ্যের ছোঁয়ার মধ্যে দিয়ে এটি বিভিন্ন দেশে আস্তে আস্তে প্রেম ও ভালোবাসার সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও বাণিজ্যিক একটি আনুষ্ঠানিক দিবসে পরিণত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হয়ে থাকলেও বাংলাদেশসহ অধিকাংশ দেশেই দিনটি ছুটির দিন নয়। (সূত্র- উইকিপিডিয়া)

ভ্যালেন্টাইনস ডে এর ইতিহাস:
প্রথমত: রোমের সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস-এর আমলের ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেনটাইন ছিলেন শিশুপ্রেমিক, সামাজিক ও সদালাপী এবং খৃষ্টধর্ম প্রচারক। আর রোম সম্রাট ছিলেন বিভিন্ন দেব-দেবীতে বিশ্বাসী মূর্তি পূজারি। সম্রাটের পক্ষ থেকে তাকে দেব-দেবীর পূজা করতে বলা হলে ভ্যালেন্টাইন তা অস্বীকার করে। ফলশ্রুতিতে তাকে কারারুদ্ধ করা হয়। সম্রাটের বারবার খৃষ্টধর্ম ত্যাগের আজ্ঞা প্রত্যাখ্যান করলে ২৭০ খৃস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় আদেশ লঙ্ঘনের দায়ে ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন।
দ্বিতীয়ত: ভ্যালেনটাইন কারারুদ্ধ হওয়ার পর যুবক-যুবতীদের অনেকেই প্রতিদিন তাকে কারাগারে দেখতে গিয়ে ফুল উপহার দিত। তারা বিভিন্ন রকমের কথাবার্তার মাধ্যমে তাকে উৎসাহ দিত। ওই কারাগারের দায়িত্বরত কারারক্ষীর এক অন্ধ মেয়েও ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে যেত। অনেকক্ষণ ধরে তারা দু’জন প্রাণ খুলে কথা বলত। এক সময় ভ্যালেন্টাইন তার প্রেমে পড়ে যায়। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আধ্যাত্মিক চিকিৎসায় অন্ধ মেয়েটি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায়। ভ্যালেন্টাইনের ভালোবাসা ও তার প্রতি দেশের যুবক-যুবতীদের ভালোবাসার কথা সম্রাটের কানে গেলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ২৬৯ খৃষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাকে মৃত্যুদন্ড দেন।
তৃতীয়ত: সাম্রাজ্যবাদী, রক্তপিপাষু রোমান সম্রাট ক্লডিয়াসের এক বিশাল সৈন্যবাহিনীর দরকার পড়েছিল। এক সময় তার সেনাবাহিনীতে সেনা সংকট দেখা দেয়। কিন্তু কেউ তার সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে রাজি নয়। সম্রাট লক্ষ্য করলেন যে, অবিবাহিত যুবকরা যুদ্ধের কঠিন মুহূর্তে অত্যধিক ধৈর্যশীল হয়। ফলে তিনি যুবকদের বিবাহ কিংবা যুগলবন্দী হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। যাতে তারা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অনীহা প্রকাশ না করে। তার এ ঘোষণায় দেশের যুবক-যুবতীরা ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। যুবক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের এক ধর্মযাজকও সম্রাটের এ নিষেধাজ্ঞা কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। প্রথমে তিনি সেন্ট মারিয়াসকে ভালোবেসে বিয়ের মাধ্যমে রাজার আজ্ঞাকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং তার গীর্জায় গোপনে বিয়ে পড়ানোর কাজও চালাতে থাকেন। একটি রুমে বর-বধূ বসিয়ে মোমবাতির স্বল্প আলোয় ভ্যালেন্টাইন ফিসফিস করে বিয়ের মন্ত্র পড়াতেন। কিন্তু এ বিষয়টি সম্রাট ক্লডিয়াসের কানে গেলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। ২৭০ খৃষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি সৈন্যরা ভ্যালেন্টাইনকে হাত-পা বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে সম্রাটের সামনে হাজির করলে তিনি তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।
চতুর্থত: সমস্ত ইউরোপে যখন খৃষ্টান ধর্মের জয়জয়কার, তখনও ঘটা করে পালিত হতো রোমীয় একটি রীতি। মধ্য ফেব্রুয়ারিতে গ্রামের সকল যুবকরা সমস্ত মেয়েদের নাম চিরকুটে লিখে একটি পাত্রে বা বাক্সে জমা করত। অতঃপর ওই বাক্স হতে প্রত্যেক যুবক একটি করে চিরকুট তুলত, যার হাতে যে মেয়ের নাম উঠত, সে পূর্ণবৎসর ওই মেয়ের প্রেমে মগ্ন থাকত। আর তাকে চিঠি লিখত, এ বলে ‘প্রতিমা মাতার নামে তোমার প্রতি এ পত্র প্রেরণ করছি।’ বৎসর শেষে এ সম্পর্ক নবায়ন বা পরিবর্তন করা হতো। এ রীতিটি কয়েক

ড. মোঃ হাসানুজ্জামান জুয়েল

প্রভাষক, আদিতমারী সরকারী কলেজ। লালমনিরহাট।

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com