‘মোদির সফরে প্রমাণিত হলো আমেরিকা গণতন্ত্র বা মানবাধিকারের চেয়ে ব্যবসায়িক স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়’


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় : জুন ২৫, ২০২৩, ১:৫৪ পূর্বাহ্ণ /
‘মোদির সফরে প্রমাণিত হলো আমেরিকা গণতন্ত্র বা মানবাধিকারের চেয়ে ব্যবসায়িক স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফর মূলত ভারত-যুক্তরাষ্ট্র কেন্দ্রিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ছিলো। কারণ ভারতের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক বেশ টানাপোড়েনের মধ্যে ছিলো। বিশেষ করে করোনার সময় থেকে এবং এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে। সে জায়গা থেকে আমেরিকার পক্ষ একটা বড় প্রচেষ্টা ছিলো ভারতের সাথে সম্পর্ক ভালো করার ব্যাপারে। তবে আমেরিকার এই প্রচেষ্টা সফল হবে কিনা সেটা জানি না। কিন্তু আমেরিকা তার পাশে ভারত চাইছে। এর সাথে আমেরিকার ভূ-রাজনীতি এবং ব্যবসায়িক স্বার্থ আছে। কারণ চীনের বিরুদ্ধে সে রীতিমতো সক্রিয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
গত ২২ জুন হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই বৈঠকের আগে ভারতের গণমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশের প্রসঙ্গটি বিভিন্ন ভাবে উঠে আসে। তবে মোদি-বাইডেন বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি। কিন্তু আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার বিষয়টির নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। আর আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা প্রসঙ্গে মোদি-বাইডেন বৈঠক নিয়ে ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতা করেন অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ এর আলোচনার চম্বুক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকার—শান্ত সিংহ। 

অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যদিও আমেরিকা খেকে ভালো আতিথেয়তা পেয়েছে কিন্তু ভারত কতখানি আমেরিকার দিকে ঝুঁকে পড়বে সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ ভারত তার নিজের স্বার্থই দেখবে। আমেরিকার সাথে সে যেভাবে সম্পর্ক টিকিয়ে রেখেছে ঠিক একইভাবে সে রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবে। আবার আমেরিকার কারণে চীনকে রীতিমতো শক্র বানাবে সেই ভারতও এখন আর নেই। সেজন্য বাংলাদেশের বিষয়টি মোদি-বাইডেন বৈঠকে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু না হলেও আমি অবাক হব না। কারণ আমেরিকা থেকে মূল উদ্দেশ ছিলো ভারতের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন। তবে মোদির সফরে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়েছে যে আমেরিকার এই গণতন্ত্র, মানবাধিকার বুলি এগুলো তত গুরুত্বপূর্ণ না, ভূ-রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক স্বার্থ যতটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমরা দেখলাম আমেরিকা ডেমোক্র্যাটিক পার্টি  থেকেই ৭৫ জন কংগ্রেসম্যান বাইডেনকে চিঠি দিয়েছে এবং তারা তাকে বুঝানোর চেষ্টা করেছে যে, নরেন্দ্র মোদির মধ্যে মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র ইত্যাদি বিষয় অভাব রয়েছে। এছাড়া সংগ্রেসে মোদির ভাষণকালে আমরা দেখেছি চারজন মার্কিন কংগ্রেস মোদির ভাষণ বয়কট করেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বুঝায় যাচ্ছে যে, জো বাইডেন এখন উঠে পড়ে লেগেছে ভারতকে কাছে টানার জন্য।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, মোদির আমেরিকা সফর এটি পরিষ্কার করেছে যে মোদির মানবাধিকার ললঙ্ঘন, গণতন্ত্রের স্বল্পতা, এমনকি সংখ্যালঘুদের নিয়ে সমালোচনা হওয়ার পরও বাইডেন সেগুলো দেখছেন না। তাতে বুঝা যাচ্ছে যে, আমেরিকা তার ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ এবং ব্যবসায়িক স্বার্থকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। সেখানে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার প্রাধান্য পাচ্ছে না। ভারতের ব্যাপারে যদি সেরকম হয় বাংলাদেশের ব্যাপারেও এর আলাদা কিছু হবার কথা নয়। বাংলাদেশের ব্যাপারে বাইডেন প্রশাসন যতগুলো ব্যবস্থা নিয়েছে তাতে বুঝাই যাচ্ছে যে, সে হয়তো অন্য কোন কিছু সুবিধা নিতে চাইছে। যেহেতু বাংলাদেশ থেকে একটা স্পেইস আছে। কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটা বিভক্তি আছে। সেখানে আমেরিকা একটা সুযোগ পাচ্ছে। তবে আমেরিকার এই সব কথাবার্তা দিয়ে তো আর বাংলাদেশের গণতন্ত্র ঠিক হবে না। যে ঘাটতি আছে সেটা বাংলাদেশের জনগণকেই ঠিক করতে হবে। মোদির সফরে এটাই প্রমাণ হলো আমেরিকা যতটা না গণতন্ত্র, মানবাধিকারকে প্রাধান্য দেয় তার চেয়ে বেশি দেয় জাতীয় স্বার্থ।
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com